• facebook
  • twitter
Sunday, 10 November, 2024

ভারত থেকে আরও বিনিয়োগই বাংলাদেশের উন্নতির হাতিয়ার

ঋত্বিক মুখোপাধ্যায় ভারতে মোদি সরকারের তৃতীয়বারের সরকারের সূচনা হয়েছে৷ ঠিক তেমনই কয়েক মাস আগে প্রতিবেশী বাংলাদেশের শেখ হাসিনা সরকার তাঁর রেকর্ড ভোট প্রাপ্তির মাধ্যমে চতুর্থবারের সরকার গড়েছেন৷ এমনকী ভারতে মোদি সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী৷ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক যে বেশ ভালো তা বোঝা যায় চলতি মাসেই বাংলাদেশের প্রধানামন্ত্রীর

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। (File Photo: IANS/PIB)

ঋত্বিক মুখোপাধ্যায়
ভারতে মোদি সরকারের তৃতীয়বারের সরকারের সূচনা হয়েছে৷ ঠিক তেমনই কয়েক মাস আগে প্রতিবেশী বাংলাদেশের শেখ হাসিনা সরকার তাঁর রেকর্ড ভোট প্রাপ্তির মাধ্যমে চতুর্থবারের সরকার গড়েছেন৷ এমনকী ভারতে মোদি সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী৷ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক যে বেশ ভালো তা বোঝা যায় চলতি মাসেই বাংলাদেশের প্রধানামন্ত্রীর দ্বিতীয় দফায় ভারত সফরের মাধ্যমে৷ চিন যাত্রার আগেই ভারতকে আশ্বস্ত করতে ফের ভারতে ঝটিকা সফর সারেন হাসিনা৷ এর মাধ্যমেই স্পষ্ট যে, দু’দেশই বাণিজ্য, অর্থনীতি ও ব্যবসায়িক এবং ভূ-রাজনীতির ক্ষেত্রে আগামী দিনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে চলেছে৷
গত এক বছরে দুই নেতার দশম বৈঠকের পরপরই, শনিবার ভারতের রাজধানীতে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করেন মোদি-হাসিনা৷ সেই চুক্তি স্বাক্ষরের পর দু’দেশের নানান অর্থনৈতিক উত্থান-পতনের বিষয়ে দ্য স্টেটসম্যানের সঙ্গে আলোচনায় বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং প্রাক্তন গভর্নর, বাংলাদেশ সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক, ডঃ আতিউর রহমান৷

প্রশ্ন: বাংলাদেশের নতুন অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় ভারতের স্থান কোথায়?

আতিউর রহমান: আমি বারবার বলে আসছি যে, নতুন সরকারের নীতিনির্দেশগুলো বেশির ভাগই হবে বিগত সরকারের নীতিগত পদক্ষেপের ধারাবাহিকতা ও পরিবর্ধন৷ গত ১৫ বছরে ভারত বাংলাদেশের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে সবচেয়ে মূল্যবান অংশীদার৷ তাই বাংলাদেশের এই নতুন সরকারের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার অগ্রসরে ভারত সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার৷ দুই সরকার গত ১৫ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে পারস্পরিক আস্থার স্থান দখল করে আছে৷ এটি সংযোগ পরিকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি অভূতপূর্ব স্তরের সহযোগিতা প্রদান করেছে৷ আগামী পাঁচ বছরে, নীতিনির্ধারকদের উচিত এই অংশীদারিত্বকে আরও সুসংহত করা যাতে কেবল এই দুটি দেশের মধ্যে নয়, অন্য দুটি বিবিআইএন দেশের সাথেও বাণিজ্য সহযোগিতা জোরদার করা যায়৷ আমরা যে কানেক্টিভিটি অবকাঠামো তৈরি করেছি এবং অদূর ভবিষ্যতে বিকাশ করব তার সর্বোত্তম ব্যবহার করার জন্য ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের থেকে আরও বিনিয়োগ প্ররোচিত করার জন্য আমাদের অবশ্যই চেষ্টা করতে হবে৷

প্রশ্ন: ভারত-বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের গুরুত্ব কোন-কোন ক্ষেত্রে কী হওয়া উচিত?

আতিউর রহমান: বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত গত ১০-১২ বছরে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে এর আইটি শিল্পের আকার ৫ বিলিয়ন ডলার ছাডি়য়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷ প্রকৃতপক্ষে, এই খাতটি বাংলাদেশের জন্য পরবর্তী আরএমজি সেক্টরে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷ এই প্রেক্ষাপটের পরিপ্রেক্ষিতে, এবং ভারত যে বৈশ্বিক আইটি অঙ্গনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়- বাংলাদেশকে অবশ্যই আগামী কয়েক দশকের জন্য আইটি সেক্টরে ভারতের সাথে সহযোগিতা নিশ্চিত করার চেষ্টা করতে হবে৷ মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে (বিশেষ করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে) ভারতীয় সহযোগিতা থেকে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্যভাবে উপকৃত হতে পারে৷
কৃষিও দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল ক্ষেত্রগুলির মধ্যে একটি হবে৷ ভারতীয় প্রাথমিক কৃষি উৎপাদনকারীরা বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে উপকৃত হতে পারে৷ সাধারণভাবে, বাংলাদেশের উচিত বিশেষ করে ভারতের অর্থনৈতিক স্টেকহোল্ডারদের সাথে সহযোগিতা বাড়ানোর উপর জোর দেওয়া (ভারতের ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতি থেকে সর্বাধিক সুবিধা পেতে)৷ নীতিনির্দেশের এই লাইনটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য অর্থনৈতিক শক্তির কাছ থেকেও উল্লেখযোগ্য সমর্থন লাভ করবে৷
ভারত-বাংলা অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকেও যথাসম্ভব নেপাল ও ভুটান উভয়কেই তাদের ছাতার মধ্যে নিয়ে আসার চেষ্টা করা উচিত৷ আন্তঃ-আঞ্চলিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে শক্তিশালী করা ভারত-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব কতটা ভালো কাজ করে তার উপর নির্ভর করে৷ এই দেশগুলির মধ্যে জ্বালানি বাণিজ্যও একটি শীর্ষ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত৷ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় এই দেশগুলির আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করা উচিত৷

প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন যে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়ার সময় ভারত যেভাবে বাংলাদেশের পাশে দাঁডি়য়েছিল, তা দুই দেশকে আরও কাছাকাছি নিয়ে আসবে?

আতিউর রহমান: ‘গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ভারত বাংলাদেশের পাশে দাঁডি়য়েছিল” এটা মোটেও আশ্চর্যজনক নয়৷ ভারত গত ১৫ বছর ধরে এই সরকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার৷ অতএব, ভারতের সাম্প্রতিক সমর্থন পারস্পরিক সহযোগিতার বিদ্যমান নীতির ধারাবাহিকতা হিসেবে এসেছে৷
বিশেষ করে বাংলাদেশের জনগণকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার বাংলাদেশের সকল মানুষের অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এবং অন্যান্য আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক উন্নয়ন অংশীদারদের বিশেষ করে ভারতের সাথে পারস্পরিক উপকারী সম্পর্ক বজায় রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে৷ তাই আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় ভারত বাংলাদেশকে জোরালোভাবে সমর্থন করেছে এটাই স্বাভাবিক৷ রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক বিশেষ নিশ্চিত যে ভারত অদূর ভবিষ্যতে তা চালিয়ে যাবে৷

প্রশ্ন: কীভাবে একটি শক্তিশালী ভারত-বাংলা সম্পর্ক উভয় দেশকে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে?

আতিউর রহমান: বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী দশকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিবেশ টালমাটাল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷ এটি ভারত এবং বাংলাদেশের মতো অর্থনীতির বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষত হতাশাজনক হতে পারে কারণ- এই ধরনের অস্থিরতা তাদের সামষ্টিক অর্থনৈতিক সম্ভাবনার (যেমন, পরবর্তী ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়া) উপলব্ধি করতে বাধা দিতে পারে৷ এর মানে হল- এই দুই দেশের আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক মিল ছাড়াও, তাদের সামষ্টিক-অর্থনৈতিক আকাঙ্খার পাশাপাশি তারা যে কাঠামোগত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয় তাতেও কিছু মিল রয়েছে বলে মনে হয়৷ তাই এই সহযোগিতাকে আরও জোরদার করা ক্রমবর্ধমান অস্থির বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে দু’দেশকেই আরও উন্নতির পথ দেখাবে বলেই আশা করা যায়৷