বর্তমানে কোনও কারণে দাঁত পডে় গেলে, কিংবা, দাঁত তুলে ফেলতে হলে, সেই জায়গাটা ফোকলাই থেকে যায়৷ কেউ কেউ নকল দাঁত ব্যবহার করেন, বাঁধিয়ে নেন৷ কিন্ত্ত, কেমন হত যদি পড়ে যাওয়া সেই দাঁতের জায়গা থেকে ফের দাঁ গজাতে শুরু করত৷ ভাবছেন মজা করার আজ জায়গা পেলাম না৷ আরে না, না মজা করছি না৷ এটাকেই বাস্তব করে দেখিয়েছেন একদল জাপানি গবেষক৷ তারা একটি নতুন ওষুধ বের করেছেন, যার সাহায্যে মানুষের দাঁত পডে় গেলে ফের দাঁত গজাতে পারে৷
আসলে দাঁত আর চুল এমন দুই অঙ্গ যা মানুষের জীবনে অতিব গুরুত্বপূর্ণ হিসেবেই ধরা হয়৷ যদিও দাঁত নিয়ে ভোগেননি, এমন মানুষের সংখ্যা হাতো গোনা৷ দাঁতে ব্যথা যেমন ধরাশায়ী করে দিতে পারে, তেমনই, দাঁত পডে় গেলে তা মানুষের সৌন্দর্যকেও নষ্ট করে দিতে পারে৷
আসলে, আমাদের মাডি়তে ‘ইউটারিন সেনসিটাইজেশন অ্যাসোসিয়েটেড জিন-১ প্রোটিন’ বা ‘ইউএসএজি-১ প্রোটিন’ নামে একটি অ্যান্টিবডি থাকে৷ এই অ্যান্টিবডিই ফের দাঁত গজানোকে প্রতিরোধ করে৷ জাপানের কিয়োটো ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের বিজ্ঞানীরা এই ইউএসএজি-১ প্রোটিনকে দমন করতে পারে এমন এক ইন্ট্রাভেনাস (সরাসরি শিরায় ওষুধ দেওয়া) চিকিৎসা আবিষ্কার করেছেন৷ তবে, এই চিকিৎসায় সত্যি সত্যি ফের মানুষের দাঁত গজাবে কিনা, তা এখনও পরীক্ষিত নয়৷ বেজি এবং ইঁদুরের উপর পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, কোন উল্লেখযোগ্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই ওষুধটি কাজ করছে৷ তবে হিউম্যান ট্রায়াল, অর্থাৎ, মানুষের উপর পরীক্ষা এখনও হয়নি৷
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫-এর অগস্ট মাস পর্যন্ত মানবদেহের উপর এই নয়া ওষুধের প্রথম পরীক্ষা করা হবে৷ কিয়োটো ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ৩০ থেকে ৬৪ বছর বয়সী ৩০ জন পুরুষের উপর এই পরীক্ষা চালানো হবে৷ অন্তত একটি করে ‘মোলার’ বা মাডি়র দাঁত পডে় গিয়েছে, এই ভাবেই বাছা হবে এই পুরুষদের৷ সেই পরীক্ষা সফল হলে, গবেষকরা যাদের আংশিকভাবে ‘ইডেন্টুলিজম’ আছে, অর্থাৎ, এক থেকে পাঁচটি দাঁত নেই, তাদের উপর এই ওষুধ প্রয়োগ করা হবে৷ তিনি আরও জানিয়েছেন, হিউম্যান ট্রায়াল ফল হলে, ২০৩০ সালের মধ্যেই বাজারে পাওযা যাবে ওষুধটি৷
গবেষণা দলের প্রধান তথা কিয়োটো ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের ডেন্টিস্ট্রি এবং ওরাল সার্জারি বিভাগের প্রধান, কাতসু তাকাহাশি বলেছেন, ‘যাদের দাঁত ক্ষয়ে গিয়েছে বা দাঁত পডে় গিয়েছে, তাদের সাহায্য করার জন্য আমরা কিছু করতে চেয়েছিলাম৷ এখনও পর্যন্ত দাঁতের ক্ষয় বা দাঁত পডে় যাওয়ার কোনও স্থায়ী নিরাময় নেই৷ কোনও চিকিৎসা নেই৷ আমরা মনে করি, অনেক মানুষই চান যে তাঁদের দাঁত ফের গজাক৷ এই নিয়ে মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি৷”