দিল্লি, ২৪ জুন – নিট পরীক্ষায় অনিয়ম নিয়ে যে মামলাগুলি পড়ে রয়েছে, সেখানে এখনই সিবিআই-ইডিকে যুক্ত করা জরুরি নয়।নিট-ইউজি ২০২৪ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের অভিযোগের তদন্তে সিবিআই, ইডিকে যুক্ত করা বিষয়ে আবেদনকারীদের আনা এক আর্জির জবাবে সোমবার একথা জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি এএস ওকাকে নিয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের অবসরকালীন বেঞ্চ সিবিআই এবং ইডিকে মৌখিক নোটিস দেওয়ার আবেদন গ্রহণই করেনি। উল্লেখ্য, পড়ুয়াদের তরফে আইনজীবী ম্যাথুজ নেদুমপারা শীর্ষ আদালতের কাছে মৌখিক নির্দেশের আর্জি জানিয়েছিলেন। আগামী ৮ জুলাই এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। এদিকে নিট পরীক্ষায় জঙ্গি যোগের ছায়া দেখতে পাচ্ছেন তদন্তকারীরা। বিপুল অর্থের বিনিময়ে নিটের প্রশ্ন বিক্রি করে সেই টাকার বড় অংশ সন্ত্রাসবাদীদের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে সন্দেহ করছেন তদন্তকারী দল । নিট প্রশ্নফাঁস মামলায় মহারাষ্ট্রের নান্দেড়ে অ্যান্টি টেরোরিস্ট স্কোয়াড ৪ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে। রবিবার রাতে তাদের মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
শিবাঙ্গী মিশ্র নামে এক পরীক্ষার্থী তথা আবেদনকারীর আইনজীবী নেদুমপারা আর্জিতে বলেছিলেন, প্রশ্নফাঁস কাণ্ডে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দেওয়া উচিত। শিবাঙ্গীর দাবি, ইডি এই অনিয়মের তদন্ত এবং শাস্তি দেওয়ানোর কাজে দায়বদ্ধ। তাদের কর্তব্য এই মুহূর্তে তদন্তভার নেওয়া।
প্রশ্ন ফাঁস কাণ্ডে সুপ্রিম কোর্টের কাছে ইডি এবং সিবিআইকে তলবের আর্জি জানানো হয়। সরকারি অর্থ তছরুপ দমন আইন এবং তথ্যপ্রযুক্তি আইনে তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার আবেদন রাখা হয়।নিট পরীক্ষায় যে কেলেঙ্কারি হয়েছে, এ বিষয়ে আর কোনও সন্দেহ নেই। সে কারণে এর তদন্তভার নেওয়া ইডির কর্তব্যের মধ্যে পড়ে বলে আবেদনকারীর মত।
আবেদনকারীর আরও দাবি, যতক্ষণ না ইডি স্বতঃপ্রণোদিতভাবে এই কেলেঙ্কারির তদন্তভার নিচ্ছে কিংবা সুপ্রিম কোর্ট ইডিকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছে, ততক্ষণ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পিএমএলএ আইনের আওতায় আনা যাবে না। উল্লেখ্য, গত শনিবারই কেন্দ্রীয় সরকার নিট মামলা সিবিআইয়ের হাতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছিল। এদিনও সুপ্রিম কোর্টে এই আর্জি তোলা হয় ।
এদিকে নিট পরীক্ষায় আবার জঙ্গি যোগের অভিযোগ উঠেছে।বিপুল অর্থের বিনিময়ে নিটের প্রশ্ন বিক্রি করে সেই টাকার বড় অংশ সন্ত্রাসবাদীদের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে অনুমান তদন্তকারীদের। নিট প্রশ্নফাঁস মামলায় মহারাষ্ট্রের নান্দেড়ে অ্যান্টি টেরোরিস্ট স্কোয়াড ৪ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছ। রবিবার রাতে তাদের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপরই উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
নিট মামলার তদন্তে রবিবার রাতে লাতুর থেকে দুই শিক্ষককে আটক করে মহারাষ্ট্রের অ্যান্টি টেরোরিস্ট স্কোয়াড। অভিযুক্ত দুজনের নাম সঞ্জয় তুকারাম যাদব ও জলিল উমরখাঁ পাঠান। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর সঞ্জয়কে মুক্তি দেয় তদন্তকারীরা। রাতেই গ্রেপ্তার করা হয় জলিলকে। তাঁকে জেরা করে প্রাথমিকভাবে তদন্তকারীদের অনুমান, প্রশ্ন ফাঁস কাণ্ডে জঙ্গিযোগ রয়েছে। লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন বিক্রি করে সেই টাকার একটা বড় অংশ জঙ্গিদের কাছে পাঠানো হয় বলে তদন্তকারীদের অনুমান।
অন্যদিকে, এই মামলার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে যাওয়ার পর গত ২৩ জুন নিট কাণ্ডে প্রথম এফআইআর দায়ের করেছে সিবিআই। গোটা ঘটনার তদন্তে নেমে বিহার থেকে ২ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোমবারই দিল্লি আনা হতে পারে। বিহারের পাশাপাশি এই কাণ্ডে উঠে এসেছে গুজরাটের গোধরা যোগ। দুই রাজ্যে তদন্ত চালিয়ে যেতে সিবিআইয়ের তরফে দুটি টিম গঠন করা হয়েছে। নিট কাণ্ডে এখনও পর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে বিহার পুলিশ। তাদেরকেও জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
এছাড়া এনটিএতে সংস্কারের জন্য ইসরোর প্রাক্তন আধিকারিক-সহ ৭ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রক। সোমবার সেই কমিটির প্রথম বৈঠক। উল্লেখ্য, সাত সদস্যের কমিটিতে রয়েছেন ইসরোর প্রাক্তন চেয়ারম্যান ড. কে রাধাকৃষ্ণন, এইমস দিল্লির প্রাক্তন ডিরেক্টর ডা. রণদীপ গুলেরিয়া, হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বি জে রাও, আইআইটি মাদ্রাজের অধ্যাপক রামমূর্তি কে, কর্মযোগী ভারতের সহ-প্রতিষ্ঠাতা পঙ্কজ বনসল, আইআইটি দিল্লির ডিন আদিত্য মিত্তল এবং শিক্ষা মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব গোবিন্দ জয়সওয়াল। উচ্চ পর্যায়ের এই কমিটি যে বিষয়গুলি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবে, সেগুলি হল পরীক্ষা পদ্ধতি, তথ্যের গোপনীয়তা, ন্যাশনাল টেস্ট এজেন্সির কার্যক্রম এবং কর্মপদ্ধতি। আগামী দুই মাসের মধ্যে মন্ত্রককে রিপোর্ট দেবে এই কমিটি।
নিট নিয়ে বিতর্কের মাঝেই আবার প্রকাশ্যে এল আরও এক বিরাট অনিয়ম। উত্তরপ্রদেশের সবচেয়ে বড় সরকারি চাকরির পরীক্ষা উত্তরপ্রদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে স্পেশাল টাস্ক ফোর্স । তদন্তকারীদের দাবি, উত্তরপ্রদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের যোগ রয়েছে মধ্যপ্রদেশের সঙ্গে। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাপা হয়েছিল মধ্যপ্রদেশের এক ছাপা খানায়। সেখানকার এক কর্মী রাজীব নয়ন মিশ্রর দৌলতে ফাঁস হয় প্রশ্নপত্র। পরীক্ষার ৮ দিন আগেই তা পৌঁছে যায় পরীক্ষার্থীদের কাছে।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষা হয়েছিল উত্তরপ্রদেশের একাধিক পরীক্ষাকেন্দ্রে। এর পরই অভিযোগ ওঠে উচ্চপদস্থ এই সরকারি চাকরির পরীক্ষায় ব্যাপক কারচুপি হয়েছে এবং প্রশ্নফাঁস হয়েছে। অভিযোগ ওঠার পরই তৎপর হয় প্রশাসন। ২ মার্চ পুরো পরীক্ষাকে বাতিল করা হয়। প্রশ্নফাঁসের তদন্তে গঠন করা হয় স্পেশাল টাস্ক ফোর্স। মামলার তদন্তে শুরুতেই জানা যায়, প্রয়াগরাজের এক পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে প্রশ্নফাঁস হয়। পরীক্ষা শুরুর আগেই প্রশ্নের ছবি তুলে তা বাইরে পাঠানো হয়। সেই ঘটনার তদন্তে প্রয়াগরাজের বিনীত যশবন্ত গ্যাংয়ের ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
তবে তদন্ত যত এগোতে থাকে প্রকাশ্যে আসে একের পর এক তথ্য। তদন্তকারীরা জানতে পারেন, পরীক্ষার অন্তত ৮ দিন আগে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। সেই ঘটনার তদন্তে জানা যায় প্রশ্নফাঁসের যোগ রয়েছে মধ্যপ্রদেশে। ভোপালের ছাপাখানার কর্মী রাজীব নয়ন মিশ্রকে জিজ্ঞাসাবাদের পরই প্রকাশ্যে আসে গোটা ঘটনা। প্রশ্ন ছাপানোর সময়েই তার বাড়তি কপি ছাপিয়ে টাকার বিনিময়ে তা তুলে দেওয়া হয় পড়ুয়াদের হাতে। গোটা ঘটনায় যুক্ত রাজীবের আরও ৫ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই মামলায় আরও এক মহিলা যুক্ত ছিলেন বলে জানা যাচ্ছে। তাঁর খোঁজ তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। জানা গিয়েছে, গ্রেপ্তার হওয়া ৬ জনই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র ছিলেন।