চন্ডিগড়, ২৩ জুন — ডাক্তারির সর্বভারতীয় প্রবেশিকা নিট-ইউজি-র প্রশ্ন ফাঁস কাণ্ডে তোলপাড় গোটা দেশ। বিষয়টি শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে গড়ায়। পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গিয়েছে একাধিক অসঙ্গতি। সেই বিতর্কের কারণে ইতিমধ্যে ১৫৬৩ জন পরীক্ষার্থীর রেজাল্ট বাতিল করে দেশের শীর্ষ আদালত। পাশাপাশি তাঁদের ফের পরীক্ষায় বসার নির্দেশ দেয় আদালত। আজ, ২৩ জুন পুনরায় পরীক্ষা গ্রহণের সেই নির্ধারিত তারিখ। সেই মতো বন্দোবস্ত করে ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি বা এনটিএ। দেশের সাতটি পরীক্ষাগ্রহণ কেন্দ্রে নেওয়া হয় পুনরায় পরীক্ষা। চন্ডিগড়ে এরকমই একটি পরীক্ষাগ্রহণ কেন্দ্রে আজ দুই জন পরীক্ষার্থীর সিট পড়ে। পরীক্ষা কেন্দ্রে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বাইরে কড়া পুলিশ প্রহরা। রয়েছে মেটাল ডিটেক্টর। পরীক্ষা কেন্দ্রের ভিতরে রয়েছেন দুইজন পরীক্ষক। কিন্তু রহস্য থেকে গেল পরীক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিয়ে! কারণ চণ্ডীগড়ের ৪৪ সেক্টরের সেন্ট জোসেফ সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলে দুইজন পরীক্ষার্থীর কেউই পুনরায় পরীক্ষা দিতে আসেননি। এই নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন।
গত ৪ জুন নিট-ইউজি-র ফলাফল বেরনোর পর একাধিক প্রশ্নের সম্মুখীন হয় কেন্দ্র সরকার। দেশজুড়ে নিট-ইউজি-র এই বিতর্ক শুরু হওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্র সরকারের ভূমিকা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। মামলাটি শীর্ষ আদালতে শুনানির সময় কেন্দ্র জানায়, গত ৫ মে পরীক্ষা চলাকালীন কিছু পরীক্ষার্থীর সময় নষ্ট হয়। এতে তাঁদের কোনও দোষ ছিল না। সেই পরীক্ষার্থীদের গ্রেস মার্ক দিয়েছিল পরীক্ষা আয়োজক সংস্থা ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি (এনটিএ)। আদালত সব শোনার পর ওই পরীক্ষার্থীদের বাড়তি নম্বর বাতিল করে দেয়। পরিবর্তে পুনরায় তাঁদের পরীক্ষায় বসার নির্দেশ দেয়। ২৩ জুন, রবিবার সেই পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরীক্ষার আয়োজক সংস্থা ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি (এনটিএ)-এর তরফে দেশের সাতটি পরীক্ষা কেন্দ্রে রিটেস্টের জন্য সবরকম ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু চন্ডিগড়ের পরীক্ষা কেন্দ্রে নিরাশ হতে হল পরীক্ষকদের। এই কেন্দ্রের এক পরীক্ষক সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‘পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল দুপুর ২টার সময়। যথারীতি দুপুর দেড়টায় গেট বন্ধ হয়ে যায়। সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত। আমরা অপেক্ষা করে ছিলাম। পরীক্ষার্থীদের কেউ আসেননি।’’
উল্লেখ্য, গত ৫ মে নিট-ইউজি পরীক্ষা নেওয়া হয়। দেশ জুড়ে প্রায় ২৪ লক্ষ পড়ুয়া ৪,৭৫০টি কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু তড়িঘড়ি করে গত ৪ জুন লোকসভা ভোটের গণনার দিনেই ফলপ্রকাশ করা হয়। যা নির্ধারিত সময়ের অন্তত ১০ দিন আগে। যাতে দেখা যায়, ৬৭ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষার পূর্ণমান ৭২০ পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। এই ৬৭ জনের মধ্যে অনেকে একই পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে পরীক্ষা দিয়েছেন। তাঁদের এক নম্বরও কাটা যায়নি। যা দেখে তাজ্জব বনে যান দেশের শিক্ষাবিদ থেকে সাংবাদিক, বুদ্ধিজীৰী এমনকি রাজনীতিবিদরাও। শুধু তাই নয়, এই পরীক্ষায় মোট ১৮০টি প্রশ্ন থাকে। প্রতিটি প্রশ্নের সঠিক উত্তরের মান ৪ এবং ভুল করলে ১ নম্বর নেগেটিভ মার্কিং হয়। অথচ অনেকে ৭১৯ নম্বর পেয়েছেন। যা কোনও অঙ্কে মেলে না। কিভাবে এটা সম্ভব হল? প্রশ্ন ওঠে, পরীক্ষার আগেই নির্দিষ্ট কোনও কোনও এলাকায় প্রশ্ন ফাঁস হয়ে গিয়েছিল কি না। কেন্দ্রের নির্দেশে বর্তমানে এই নিয়ে তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই।