• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

‘ফারাক্কা-গঙ্গা চুক্তির নবীকরণ’ টের পেল না বাংলা! বন্যার আশঙ্কায় কেন্দ্রকে তোপ তৃণমূলের

নিজস্ব প্রতিনিধি: ফারাক্কা-গঙ্গা চুক্তির মেয়াদ নবীকরণের পথে ভারত-বাংলাদেশ। কিন্তু তাতে বাংলাদেশ উপকৃত হলেও বন্যা প্লাবিত হতে পারে পশ্চিমবঙ্গ! এমনই আশঙ্কা প্রকাশ বাংলার শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের। শুক্রবার বিকেলে দু’দিনের সফরে ভারতে এসেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে হাসিনা বৈঠক করেন। মোদী- হাসিনার এই বৈঠকেই ফারাক্কা চুক্তির মেয়াদের নবীকরণ করা হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিনিধি: ফারাক্কা-গঙ্গা চুক্তির মেয়াদ নবীকরণের পথে ভারত-বাংলাদেশ। কিন্তু তাতে বাংলাদেশ উপকৃত হলেও বন্যা প্লাবিত হতে পারে পশ্চিমবঙ্গ! এমনই আশঙ্কা প্রকাশ বাংলার শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের। শুক্রবার বিকেলে দু’দিনের সফরে ভারতে এসেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে হাসিনা বৈঠক করেন। মোদী- হাসিনার এই বৈঠকেই ফারাক্কা চুক্তির মেয়াদের নবীকরণ করা হয়েছে। কিন্তু তাতে সমস্যা কোথায়? তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় কে এ বিষয়ে কিছু না জানিয়েই ফারাক্কা-গঙ্গা চুক্তির মেয়াদ নবীকরণ করা হয়েছে। যেখানে এই চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ অংশ বাংলা নিজেই। এই চুক্তির মেয়াদ নবীকরণে বন্যা প্লাবিত হবে বাংলা, সে বিষয়টিতে দৃষ্টিপাত করেননি প্রধানমন্ত্রী মোদী।
রাজ্যের শাসকদলের বক্তব্য, “বাংলাকে আড়াল করে ফারাক্কা-গঙ্গা চুক্তির নবীকরণ করা হয়েছে। আমরাও এই চুক্তির অংশ। এমনকী আমাদের আগের চুক্তির টাকা দেয়নি। গঙ্গা ড্রেজিং বন্ধ হয়ে গেছে। যা বন্যা ও গঙ্গা ভাঙনের অন্যতম কারণ।” রাজ্যের শাসকদলের তরফে এনিয়ে একাধিকবার কেন্দ্রের কাছে জানানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় নিজেও এই বিষয়ে মোদীকে একাধিক বার চিঠি লিখেছেন। কিন্তু কোনো ইতিবাচক উত্তর আসেনি কেন্দ্রের তরফ থেকে। তৃণমূল কংগ্রেস সূত্রের খবর, বাংলার মানুষের স্বার্থে বিষয়টি আগামী দিনে সংসদে জোরালো ভাবে তুলে ধরতে চলছে দলীয় সাংসদগণ। সুতরাং কেবল যে বাংলা প্লাবিত হওয়ার ভয় রয়েছে তা নয়, পাশাপাশি তৃণমূলের আরও অভিযোগ যে গত চুক্তির প্রাপ্য অর্থও বাংলা কে দেওয়া হয়নি। এর ফলেই গঙ্গার ড্রেজিংয়ের কাজও বন্ধ হয়ে রয়েছে। এই জটিলতার মধ্যেই ফারাক্কা-গঙ্গা চুক্তির নবীকরণের পথে হেঁটে তৃণমূল কর্তৃক সমালোচিত হলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
উল্লেখ্য, শনিবার প্রতিরক্ষা, নির্মাণ, যোগাযোগ ব্যবস্থা, উন্নয়ন ও নদীর জল বন্টন সংক্রান্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল মোদী-হাসিনার বৈঠকের বিষয়বস্তু। জানা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বাংলাদেশে যাওয়া জন্য আমন্ত্রণও জানিয়েছেন হাসিনা। পাশাপাশি ভারতকে ‘বিশ্বস্ত বন্ধু’ বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, গোটা বিশ্বে যখন বিভিন্ন জায়গায় যুদ্ধের আবহ, তখন ভারত ও বাংলাদেশ বন্ধুত্বের নজির গড়েছে বিশ্বের দরবারে। বলা বাহুল্য, ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্বের বীজ নিহিত রয়েছে এই ফারাক্কা-গঙ্গা চুক্তিতে। তবে কি এই চুক্তি? প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালে গঙ্গা চুক্তি হয়। যার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২৬ সালে। ১৯৯৬ সালের গঙ্গা চুক্তির আর্টিকেল ১২ অনুযায়ী, দু’পক্ষের অর্থাৎ ভারত ও বাংলাদেশের সম্মতি ক্রমে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর কথা। এর মাঝেই বাংলার মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও নদিয়ার বিভিন্ন জায়গায় গঙ্গাপাড় ভাঙন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে চিঠি লিখেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চিঠিতে তিনি জানিয়েছিলেন, এই ভাঙনের একমাত্র কারণ ফারাক্কা ব্যারাজ। যার জেরে বাংলার বিপুল কৃষি সম্পদ, কৃষি জমি এবং আম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
পাশাপাশি বহু মানুষের বাসস্থান ধ্বংস হয়ে যায় প্রতিবছর। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন মমতা। ২০১৭ সালে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারও ফারাক্কা ব্যারাজ ধূলিসাৎ করে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। তাঁরও দাবি ছিল, ফারাক্কা ব্যারেজ কোনও কাজে লাগে না। প্রতি বছর কেবল বন্যা হয়। যাতে ভোগান্তি হয় লক্ষাধিক মানুষের। যদিও বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর দাবিতে কর্ণপাত করতে দেখা যায়নি প্রধানমন্ত্রী মোদী কে। ভারতীয় সংবিধানের ২৫৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী, অন্য দেশের সঙ্গে যেকোনো রকম চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সংসদের ক্ষমতা রয়েছে নির্দিষ্ট আইন বানানোর। কিন্তু তিস্তা চুক্তির সময় ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা গিয়েছিল। বাংলার হস্তক্ষেপ ছাড়া চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়েছিল কেন্দ্র সরকার। তারপর কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্যের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া তিস্তা চুক্তির বাস্তব রূপায়ন সম্ভব নয়। তাহলে ফারাক্কা-গঙ্গা চুক্তির মেয়াদ নবীকরণের ক্ষেত্রে বাংলা কে অন্ধকারে রাখা হলো কেন? যেখানে এই চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ অংশ বাংলা নিজেই! যেখানে বাংলাই এই চুক্তির জেরে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে দাঁড়িয়ে, সেখানে বাংলার প্রতিই উদাসীনতা প্রধানমন্ত্রী মোদীর? এই প্রশ্নই উঠছে বিভিন্ন মহলে।