• facebook
  • twitter
Saturday, 9 November, 2024

দণ্ড সংহিতা নিয়ে প্রবল আপত্তি মমতার, প্রধানমন্ত্রীকে কড়া চিঠি মুখ্যমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিনিধি: গত বছর ডিসেম্বরে প্রবল বিরোধিতাকে তোয়াক্কা না করে ব্রিটিশ আমলের তিনটি পুরনো আইনের প্রতিস্থাপন সংক্রান্ত বিল পাশ করে কেন্দ্রের মোদী সরকার। এই তিন আইনে দেশের ফৌজদারি বিচার পদ্ধতির কাঠামো সম্পূর্ণ বদলে দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রদ্রোহ আইন প্রত্যাহারের নামে নতুন পাশ করা এই তিন কঠোর আইনের ফের প্রবল বিরোধিতা করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘নৈতিকতা

নিজস্ব প্রতিনিধি: গত বছর ডিসেম্বরে প্রবল বিরোধিতাকে তোয়াক্কা না করে ব্রিটিশ আমলের তিনটি পুরনো আইনের প্রতিস্থাপন সংক্রান্ত বিল পাশ করে কেন্দ্রের মোদী সরকার। এই তিন আইনে দেশের ফৌজদারি বিচার পদ্ধতির কাঠামো সম্পূর্ণ বদলে দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রদ্রোহ আইন প্রত্যাহারের নামে নতুন পাশ করা এই তিন কঠোর আইনের ফের প্রবল বিরোধিতা করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘নৈতিকতা এবং বাস্তবতা’ যাচাই করে এই তিন বিল পুনর্বিবেচনার দাবি জানালেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। মমতা চিঠিতে লিখেছেন, “নৈতিকতার দিক থেকে আমি মনে করি, সংসদীয় ব্যবস্থার স্বচ্ছতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতার কথা ভেবে নবনির্বাচিত লোকসভার সদস্যদের তাঁদের আমলে কার্যকর হওয়া আইন নিয়ে বিতর্কে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত।”

গত ২০২৩ সালের ১১ আগস্ট বাদল অধিবেশনের শেষ দিনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই বিল তিনটি পেশ করেন। সেই বিল তিনটি ছিল ভারতীয় ন্যায় সংহিতা(২০২৩), ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা(২০২৩) ও ভারতীয় সাক্ষ্য বিল(২০২৩)। সে সময় এই তিনটি বিল সংসদে প্রস্তাব আকারে পেশ করার সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছিলেন, ১৮৬০ সালে তৈরি ‘ইন্ডিয়ান পেনাল কোড’ অর্থাৎ ভারতীয় দণ্ডবিধি প্রতিস্থাপিত হবে ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’-র মাধ্যমে। আর ১৮৯৮ সালের ‘ক্রিমিনাল প্রসিডিয়োর অ্যাক্ট’ অর্থাৎ ফৌজদারি দণ্ডবিধি প্রতিস্থাপিত হবে ‘ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা’ দিয়ে। এছাড়া ১৮৭২ সালের ‘ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্যাক্ট’ অর্থাৎ ভারতীয় সাক্ষ্য আইন প্রতিস্থাপিত হবে ‘ভারতীয় সাক্ষ্য বিল’-এ।

এই আইন পেশের পর পরবর্তীকালের শীতকালীন অধিবেশনে কংগ্রেস, তৃণমূল সহ অন্যান্য বিরোধী দলের সাংসদদের প্রবল বিরোধের মুখে পড়ে কেন্দ্রের মোদী সরকার। এই আইন-কে বিরোধীরা ‘কালা কানুন’ বলে আক্রমণ শানাতে থাকে সংসদে। কিন্তু সেসময়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে বেপরোয়া মোদী সরকার বিভিন্ন অজুহাতে সংসদের দুই কক্ষ থেকে ১৪৬ জন সাংসদকে বরখাস্ত করে এই তিন আইন পাশ করে নেয়। এবার সদ্য পাশ করা ভারতীয় ন্যায় সংহিতা(২০২৩), ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা(২০২৩) এবং ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম(২০২৩) আইন আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হতে চলেছে। এবিষয়ে সরকারি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়েছে। যদিও সে সময় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই আইনের বিরোধিতা করে পুনর্বিবেচনার দাবি জানান। সেসময় তিনি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিতে লিখেছিলেন, “আগে রাষ্ট্রদ্রোহ আইন ছিল। তা প্রত্যাহারের নাম করে, তারা (কেন্দ্রের মোদী সরকার) প্রস্তাবিত ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় আরও কঠোর এবং স্বেচ্ছাচারী ব্যবস্থা চালু করতে চাইছে। যা নাগরিকদের আরও মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।”

কিন্তু সেসবকে তোয়াক্কা করেনি কেন্দ্র। এবার লোকসভা ভোটে শক্তিশালী বিরোধী জোট। এরকম পরিস্তিতিতে ফের সরব হলেন মমতা। তিনি ফের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এই আইন পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়ে চিঠি লিখলেন। শুধু তাই নয়, এই আইন প্রচলনের দিন পিছিয়ে দেওয়ারও আর্জি জানিয়েছেন চিঠিতে। যা অনেকটা স্থগিত রাখার সামিল। আইনটি প্রচলিত হওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রীকে মমতার এই চিঠি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে দেশের রাজনৈতিক মহল। তৃণমূল নেত্রী চিঠিতে আরও লিখেছেন, “গত ডিসেম্বরে সংসদের দুই কক্ষের ১৪৬ জন সাংসদকে বহিষ্কারের পর যে স্বৈরাচারী পদ্ধতিতে ওই তিনটি বিল পাশ করানো হয়েছিল, তা ভারতীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটি কালো দাগ। এখন তা পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন।”

প্রসঙ্গত কথায় বলে, ‘এক মাঘে শীত যায় না’। রাজনীতির ক্ষেত্রেও এই গুরু বাক্যটা অতি সত্য। আজ যে শক্তিশালী, কাল সে দুর্বল হবে না এমন নয়। কেন্দ্রের মোদী সরকারের ক্ষেত্রেও এই কথাটা সত্য। ২০১৪ ও ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল বিজেপি-র। এই সময়ে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে বিরোধীদের তোয়াক্কা না করে এককভাবে একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রের মোদী সরকার। নোট বাতিল থেকে সিএএ-এর মতো নতুন আইন পাশ থেকে শুরু করে রাষ্ট্রদ্রোহ আইন রোধের নামে আরও কঠোর আইন প্রণয়ন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় এজেন্সির প্রয়োগ, এজেন্সী দিয়ে বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের গ্রেফতার– এরকম একাধিক সিদ্ধান্ত, যা একনায়কতান্ত্রিক বলে অভিযোগ করেছে কংগ্রেস, তৃণমূল সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলি। কিন্তু গত বছর ডিসেম্বরে বিরোধীদলগুলির বিরোধিতাকে তোয়াক্কা না করে তিনটি পুরনো আইনের প্রতিস্থাপন সংক্রান্ত বিল পাশ করেন মোদী-অমিত শাহরা।

এবার ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সংসদে পালাবদল না হলেও যথেষ্ট শক্তিশালী হয়েছে বিরোধীরা। অন্যদিকে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে জোট নির্ভর মোদী সরকারের একাধিক ব্যর্থতা এক এক করে সামনে আসছে। আগামী ২৪ জুন সংসদের অধিবেশন। এরই মধ্যে ‘নিট’ এবং ‘ইউজিসি নেট’ কেলেঙ্কারিতে জেরবার মোদী-অমিত শাহরা। সেজন্য বিরোধীদের সাঁড়াশি আক্রমণের মধ্যে পড়তে চলেছে তৃতীয় বারে শপথ নেওয়া জোট নির্ভর মোদী সরকার। এবার সেই আক্রমণে নতুন সংযোজন দেশের চতুর্থ বৃহত্তম দল তৃণমূল কংগ্রেস। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের কেন্দ্রের মোদী সরকারকে কঠোরভাবে চিঠি লিখেছেন প্রধানমন্ত্রীকে। বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক যুক্তি দেখিয়ে আর্জি জানানো হয়েছে, মোদী সরকারের পাশ করা তিন কঠোর আইন পুনর্বিবেচনার জন্য।

মমতা অভিযোগ করেন, এই তিন আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রাজ্য সরকারগুলির পরামর্শ নেওয়া হয়নি। এভাবে বিভিন্ন রাজ্য সরকারের মতামত উপেক্ষা করে একতরফাভাবে বিলের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এবং তা সংসদে পাশ করানো হয়েছে। যা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর সম্পূর্ণ পরিপন্থী বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। এ এদিকে কেন্দ্রীয় আইন ও বিচার মন্ত্রক নতুন আইন কার্যকর করার জন্য গত ১৬ জুন কলকাতায় একটি কর্মশালার আয়োজন করেছিল। সেই বিষয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মমতা। তিনি অভিযোগ করেন, ১৬ জুন কলকাতায় যে কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল, সেবিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে পুরোপুরি অন্ধকারে রাখা হয়েছিল!