পি ভি সিন্ধু ইতিহাস রচনা করলেন। দেশের প্রথম ব্যাডমিন্টন খেলােয়াড় হিসেবে রবিবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ ব্যাডমিন্টনে প্রথম সােনা জিতলেন পি ভি সিন্ধু। ফাইনালে মাত্র ৩৮ মিনিটের লড়াইয়ে সিন্ধু হারিয়ে দিয়েছে তাঁর চিরন্তন প্রতিদ্বন্দ্বী জাপানের নাজোমি ওকুহারাকে ২১-৭, ২১-৭ পয়েন্টে।
দুই বছর আগে লাসগােতে এই ফাইনালেই সিন্ধু ১১০ মিনিট লড়াই করেও ওকুহারার কাছে হেরে গিয়েছিলেন। এটাকে ব্যাডমিন্টনের ইতিহাসেও অন্যতম সেরা লড়াই বলা হয়। সিন্ধু অবশেষে সেই হৃদয় বিদারক দিনটির স্মৃতি মুছে ফেলতে পারলেন রবিবার সম্পূর্ণ একতরফা লড়াইয়ে জিতে গিয়ে।
ফাইনাল ম্যাচ জেতার পর সিন্ধ বলেছেন, এর আগে আমি দু’বার ফাইনালে হেরে গিয়েছিলাম। তাই এই জয় আমার কাছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। উপস্থিত দর্শকদের আমাকে সমর্থন করার জন্য তাদের ধন্যবাদ দিচ্ছি। আমি দেশের জন্য এই পদক জিতেছি এবং একজন ভারতীয় হিসেবে আমি দারুণভাবে গর্বিত। আমার কোচ কিম এবং গােপাচাঁদ স্যারকে ধন্যবাদ দিচ্ছি। সেইসঙ্গে আমার সাপোর্টিং স্টাফদেরও রবিবার আমার মায়ের জন্মদিন ছিল তাই এই জয় তাঁকে উৎসর্গ করলাম।
সিন্ধু এর আগে ২০১৭ ও ২০১৮ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে জাপানের ওকুহারা এবং স্পেনের ক্যারােলিনা মেরিনের কাছে হেরে গিয়ে রৌপ্য পদক পেয়েছিলেন। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে এবার নিয়ে পাঁচটি পদক জিতলেন সিন্ধু। ব্যাডমিন্টনের ইতিহাসে সিন্ধু ইতিমধ্যেই মেয়েদের বিভাগে সর্বকালের অন্যতম সেরা সিঙ্গলস খেলােয়াড়ের মর্যাদা পেয়ে গিয়েছেন।
এই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ২০১৩ ও ২০১৪ সালে সিন্ধু ব্রোঞ্জ পদক জিতেছিলেন। তিনি এখন বর্তমানে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ইতিহাসে যুগ্মভাবে মেয়েদের সিঙ্গলসে সবচেয়ে বেশি পদক জেতার নজির গড়লেন। চিনের ঝ্যাং নিং এর আগে সিন্ধুর মতােই একটি সােনা, দুটি রূপাে এবং দুটি ব্রোঞ্জ পদক জিতেছিলেন ২০০১ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে।
ভারতের প্রকাশ পাড়ুকোন প্রথম ভারতীয় হিসেবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ ব্যাডমিন্টনে পদক জিতেছিলেন ১৯৮৩ সালের ছেলেদের সিঙ্গলসে ব্রোঞ্জ পদক। আর ভারতের সাইনা নেহওয়াল মেয়েদের সিঙ্গলসে রুপাে এবং ব্রোঞ্জ পদক জেতেন ২০১৫ ও ২০১৭। ভারতের জাওলা গাট্টা এবং অশ্বিনী পুনাপ্পা ২০১১ সালে মেয়েদের ডাবলসে ব্রোঞ্জ পদক জেতেন। আর এবারের চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের বি সাই প্রনীত শনিবারই ছেলেদের সিঙ্গলসে ব্রোঞ্জ পদক জিতেছেন।
সিন্ধু ২০১৮ কমনওয়েলথ গেমসে ও এশিয়ান গেমসে রূপাের পদক জিতেছিলেন। রবিবার জাপানের প্রতিদ্বন্দ্বীকে নিয়ে কার্যত ছেলেখেলা করেছিলেন। পঞ্চম বাছাই সিন্ধুকে রবিবার সম্পূর্ণ আলাদা ফর্মে দেখা গেল। তৃতীয় বাছাই ওকুহারার বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে সিন্ধু ৮ ৭ ম্যাচ এগিয়ে ছিলেন হেড টু হেড রেকর্ডে। রবিবার ম্যাচ শুরু হওয়া মাত্রই সিন্ধু ঝড় তােলেন এবং ৮-১ পয়েন্টে এগিয়ে যান। তাঁর লক্ষ্য ছিল কোর্টের ডিপ কর্নারগুলিতে বল ফেলা। সেইসঙ্গে তাঁর বিরাট স্ম্যাশগুলি ওকুহারাকে দিশেহারা করে দেয। কয়েকটি নেট শট নিয়ে ওকুহারা সিন্ধুকে আটকাতে চেষ্টা করলেও সিন্ধু খুব দ্রুত ম্যাচে নিজের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পান এবং ব্রেকের সময় ১১-২ পয়েন্টে এগিয়ে যান।
ওকুহারার ফোরহ্যান্ড ড্রাইভগুলি লক্ষ্য করে সিন্ধ ক্রমাগত স্ম্যাশ করতে শুরু করেন। দ্বিতীয় গেমে সিন্ধু ক্রস কোর্ট স্ম্যাশ থেকে দ্রুত দুটি পয়েন্ট তুলে নেন শুরুতেই। আসলে সিন্ধর রিটার্নগুলি ফেরাতে ওকুহারাকে সারা কোর্ট ছুটে বেড়াতে হয়েছে। বারবার জাপানী তরুণী হয় নেটে বল মেরেছেন অথবা লাইন মিস করেছেন।
বিরতির সময় সিন্ধু ১১-৪ পয়েন্টে এগিয়ে যাওয়ার পর একহারা কার্যত ম্যাচ ছেড়ে দেন। দ্বিতীয় গেমে সিন্ধু ম্যাচ পয়েন্ট পেয়ে যান। ওকুহারা লম্বা শটে বল কোর্টের বাইরে ফেলার পরই চ্যাম্পিয়ন হবার পরই সিন্ধু কোর্টেই দু’হাত ওপরে তুলে আনন্দে ফেটে পড়েন।