• facebook
  • twitter
Thursday, 19 September, 2024

বর্ষায় উকামবুরু থেকে মুরগুমা

সাগর মাহাত ইঁট কাঠ পাথরের শহরে থাকতে থাকতে যখন মানুষের মন বিষিয়ে উঠে তখন ভ্রমণের প্রয়োজন হয় ৷ একমাত্র ভ্রমণেই পারে বিষিয়ে যাওয়া মনকে ফুলের সৌরভে ভরিয়ে দিতে ৷ প্রকৃতির রূপ-রস-গন্ধ ঋতুতে ঋতুতে পরিবর্তন হয় বলেই আমাদের ভ্রমণগুলোও কিছুটা ঋতুকেন্দ্রিক হয়ে থাকে৷ আমি যে জায়গার কথা আজ আপনাদের শোনাবো সে জায়গা বেশি দূরে নয়, আমাদের

সাগর মাহাত
ইঁট কাঠ পাথরের শহরে থাকতে থাকতে যখন মানুষের মন বিষিয়ে উঠে তখন ভ্রমণের প্রয়োজন হয় ৷ একমাত্র ভ্রমণেই পারে বিষিয়ে যাওয়া মনকে ফুলের সৌরভে ভরিয়ে দিতে ৷
প্রকৃতির রূপ-রস-গন্ধ ঋতুতে ঋতুতে পরিবর্তন হয় বলেই আমাদের ভ্রমণগুলোও কিছুটা ঋতুকেন্দ্রিক হয়ে থাকে৷ আমি যে জায়গার কথা আজ আপনাদের শোনাবো সে জায়গা বেশি দূরে নয়, আমাদের রাজ্যেই৷ সুন্দরী পুরুলিয়া৷ প্রতিটি ঋতুতে পুরুলিয়া নব নব রূপে সেজে ওঠে ৷ আর এই বর্ষায় লাল পাথরে মাটির এই দেশের সৌন্দর্য সত্যিই  অসাধারণ ৷
আমরা রওনা হয়েছিলাম ভরা শ্রাবণে ৷  উকামবুরু ও মুরগুমা যাবার জন্য পুরুলিয়া শহর থেকে তিনটি রাস্তা রয়েছে৷ প্রথমটি জয়পুর হয়ে দ্বিতীয়টি বলরামপুর অযোধ্যা হয়ে আর তৃতীয় রাস্তাটি টামনা হয়ে৷ আমরা টামনা হয়েই গিয়েছিলাম কারন এই রাস্তাটা অনেক ফাঁকা, ভিড়ভাট্টাও কম ৷ পথের দুপাশে ছোটো ছোটো গ্রাম, সবুজ মাঠ আর উঁচু উঁচু পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে সকাল ১০ টা নাগাদ পৌঁছে গিয়েছিলাম মুরগুমা বাজারে৷ মুরগুমা থেকে উকামবুরু পাহাড়ের দূরত্ব সাড়ে তিন কিমির মতো৷ পাহাড়ের রাস্তা বড় চড়াই আর প্রচুর বাঁক ৷ সাবধানে গাড়ি না চালালে বিপদ ৷
উকামবুরু পৌঁছে আমরা সোজা গেলাম ভিউ পয়েন্টে৷ সেখান থেকে পুরো মুরগুমার একটা প্যানারমিক ভিউ দেখতে পাওয়া যায়৷ চারিদিকে অফুরান সবুজ আর অনাবিল শান্তি৷ বর্ষার জলে ধুঁয়ে চারিদিক চকচক করছে৷ সামনেই একটি ঝরণা ৷ বর্ষার জলে সে এখন যৌবনবতী নারী৷ এখানে আপনাদের একটু বলে রাখা ভালো সাঁওতালি ভাষায় ‘বুরু’ শব্দের অর্থ পাহাড়৷ উকামবুরু পাহাড়ের নাম বদলে কলকাতার টু্যরিস্টরা নাম রেখেছে সুইসাইট পয়েন্ট ৷ অথচ এই নামের সঙ্গে মৃতু্যর কোনো সম্পর্ক নেই ৷ এইভাবে নাম বদলে দেওয়া অত্যন্ত নিন্দনীয় ব্যাপার বলেই মনে করি ৷
উকামবুরু থেকে নেমে এবার আমাদের গাড়ি ছুটলো মুরগুমা ড্যামের লাল রাস্তায়৷ মুরগুমা হল সাহারজোর নদীর উপর তৈরি একটি কৃত্রিম বাঁধ ৷ পাহাড় আর সবুজে ঘেরা মুরগুমা হ্রদের সৌন্দর্য সত্যিই অসাধারণ৷ এখানে সারাদিন পাহাড়ের চূড়োয় চলে মেঘেদের লুকোচুরি৷ বিকেল হলেই আকাশের গায়ে ভেসে উঠে রং বেরঙের নানান ছবি৷ কোনো সুনিপুণ শিল্পী যেন আপন খেয়ালে আকাশে রঙ ছড়িয়ে আঁকে সে সব ছবি৷ চারিদিকে নির্জনতায় মোড়া রাত্রি নামলে মুরগুমা হয়ে উঠে বড় মায়াবি ৷ আর তখন পাহাড়ে পাহাড়ে শুরু হয় যেন রাতপরীদের আনাগোনা৷
কীভাবে যাবেন— প্রথমে ট্রেন ধরে আসতে হবে পুরুলিয়া৷ তারপর গাড়ি করে চলে আসুন মুরগুমা৷ কিংবা মুরগুমার কাছের স্টেশন বেগুনকোদর৷ যে স্টেশন ভূতুড়ে স্টেশন বলেই পরিচিত বেশি ৷ বেগুনকোদরে নেমেও আসতে পারেন ৷ তবে গাড়ির যোগাযোগ পুরুলিয়া থেকেই ভালো ৷
কখন আসবেন— সারা বছরই আসা যায় মুরগুমা৷ তবে বর্ষার রূপ সত্যিই অসাধারণ ৷ শরৎকালেও ভালো ভিউ পাওয়া যায়৷
কোথায় থাকবেন— মুরগুমাতে অনেক রির্সোট রয়েছে থাকার৷ পকেট বুঝে উঠে পড়ুন একটাতে৷
সঙ্গে রাখুন— প্রয়োজনীয় ঔষুধপত্র, দরকারি কাগজপত্র সঙ্গে রাখুন৷ সঙ্গে জল আর শুকনো খাবার নিতে ভুলবেন না ৷ আর হ্যাঁ অবশ্যই টু্যরিস্ট স্পটে নোংরা ফেলে, অশ্লীল কথাবার্তা বলে পরিবেশের সৌন্দর্য নষ্ট করবেন না ৷