আমিনুর রহমান , বর্ধমান , ১৮ জুন: মেয়ের বিয়ে দিতে সম্বন্ধের প্রয়োজন নেই আগে। মেলার মাঠে গিয়ে বিভিন্ন দামের পছন্দ সই জামাই বাবাজীবনকে কিনে আনা যাবে। ফেরিওয়ালা সাইকেল ভ্যানে করে জামাই ফেরি করে চলেছেন। চন্দনের আঁকিবুকি নিয়ে মাথায় টোপর চাপিয়ে ধুতি পাঞ্জাবি পরিহিত “বর বাবাজীবনরা” বসে আছেন ভ্যান গাড়িতে। রীতিমতো মাইকে হাঁক পেড়ে সেইসব বর অর্থাৎ জামাইদের ফেরি করছেন ফেরিওয়ালা। তাঁদের কারুর দাম ৫০০০, আবার কারুর কারুর ২০০০ এবং ১০০০ টাকা। আর সস্তার জামাই পেতে হলে ৫০০ টাকা দামেও পাওয়া যাবে। রেডিমেড বরের এই পসরা সাজিয়ে অভিনব কান্ডকারখানা চলছে পূর্ব বর্ধমানের খন্ডঘোষ এলাকার বোসপাড়ায় বুড়ো শিবের গাজন মেলা প্রাঙ্গণে।
প্রসঙ্গত দিন কয়েক আগে জামাই ষষ্ঠী মিটেছে। আর তারপরেই এভাবে ’জামাই বিক্রি’ হওয়ার বিষয়টি জেনে সবার অবাক হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে হ্যাঁ, ঘটনা সত্য। পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের বুড়ো শিবের গাজনে প্রতিবছর এভাবেই হয়ে থাকে জামাই বিক্রির রঙ্গ তামাসা। আর তিনদিন ধরে গাজন উপলক্ষে গ্রামীণ মেলা ও তা নিয়েই উন্মাদনায় ভাসেন গ্রামের মানুষজন। প্রায় চারশো বছর ধরে খণ্ডঘোষের বোসপাড়া সংলগ্ন এলাকায় হয়ে আসছে এই বুড়ো শিবের গাজন। মূলত খণ্ডঘোষের রায়পাড়া, ভট্টাচার্য পাড়া ও বোসপাড়া মিলিয়ে তিন দিনের বুড়ো শিবের গাজন হয়। পুরোহিত রাজেশ ভট্টাচার্য্য ও উমাপদ ভট্টাচার্য জানান,”সাবেক রীতি মেনেই গাজন হয়ে আসছে। তবে লোকসভা নির্বাচনের জন্য এবার গাজনের তারিখ একটু পিছিয়ে দিতে হয়েছে।”
গাজনে এলাকার প্রায় ১৫০ জন সন্ন্যাস গ্রহণের পর তাঁরা বুড়ো শিবের পূজোপাঠে অংশ নেন। আর বুড়ো শিবের গাজনকে ঘিরে সন্ন্যাসরা বিভিন্ন ’সং’ সাজার মাধ্যমে বিভিন্ন চরিত্র ও কাহিনী তুলে ধরেন। সেখানে যেমন থাকে বর্তমান সময়কালের ঘটনাবলী, তেমনি প্রাধান্য পায় পৌরাণিক কাহিনী। ভ্যান গাড়িতে ’জামাই ফেরি’ তেমনই এক রঙ্গ তামাসার কাহিনী।
তবে খণ্ডঘোষের বুড়ো শিবের গাজনে ‘জামাই ফেরি’ এবার বেশ সাড়া ফেলেছে। জামাই ষষ্ঠী কাটতে না কাটতেই ‘জামাই ফেরি’। অর্থাৎ একেবারে সদ্য মার্কেটে আসা জামাই বাবাজীবন। এ নিয়ে ঠাট্টা তামাশা করে অনেকে আবার বলছেন, এ যেন ‘দুয়ারে বর বাবাজীবন’। ফেরি ওয়ালার ভ্যান গাড়িতে চেপে থাকা জামাইদের নিয়ে মজা করে দরদাম করতেও দেখা গেল গ্রামবাসীদের।
খণ্ডঘোষের বাসিন্দা পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ অপার্থিব ইসলাম বলেন, “বুড়ো শিবের গাজনে মানুষের ঢল নামে। মেলা বা উৎসবে থাকে না কোনও জাতপাতের বেড়াজাল। গাজনে জামাই ফেরি নিয়ে অপার্থিববাবু এক গাল হেসে বলেন, ওটা আনন্দ দেওয়ার জন্যে। ওইসব রঙ্গ তামাসা দেখে গাজন উৎসবে আসা মানুষজন একটু আনন্দ পায়। মজাও করে। এই জামাই ফেরি গাজনের অন্যতম আকর্ষণও বটে। সবাই সেটা উপভোগও করেন!”