শিরোনাম পড়ে বেশ গর্ববোধ হওয়ার কথা, তাই না? কিন্তু বিশ্বাস করুন এই ‘খেলার’ আসল সত্য জানলে গর্ববোধ তো দূর, আপনি আজ রাতে ঘুমোতে পারবেন কিনা সন্দেহ৷ কারণ আপনার সন্তানদের ভবিষ্যতের প্রশ্ন এসে দাঁড়াবে আপনার কাছে৷
আসলে এখানে যে ‘খেলার’ কথা বলা হচ্ছে তা হল অনলাইন গেম৷ জানা গিয়েছে বাজি ধরে অনলাইনে গেম খেলার প্রবণতা গোটা দেশ জুড়ে বাড়লেও সবার ওপরে নাম রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের৷ এ রাজ্যে তার বৃদ্ধির হার ছাপিয়ে গিয়েছে জাতীয় গড়কেও৷ অনলাইন গেমিং সংস্থাগুলির সংগঠন স্কিল অনলাইন গেমস ইনস্টিটিউট-এর (সোগি)-র তথ্য জানলে চমকে উঠবেন৷ সোগি বলছে, দেশে এক জন খেলোয়াড় গডে় যত ঘণ্টা এই গেম খেলেন, পশ্চিমবঙ্গে তার থেকে ২৫% বেশি৷ এই খেলার বাড়বাড়ন্তের কথা মানলেও, দেশে এতে যে হারে জিএসটি চাপানো হয় এবং পুরো বাজির উপরে কর বসে, তা নিয়ে আপত্তি তুলে কেন্দ্রের কাছে দরবার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংগঠনটি৷
প্রসঙ্গত, নেটে বাজি রেখে তাস, দাবা-সহ আরও কিছু খেলা হয়৷ তাসের মধ্যে আবার রামি, পোকার, ব্রিজ উল্লেখযোগ্য৷ ভারতে মাত্র বছর পাঁচেক আগে এই খেলা শুরু হলেও বর্তমানে এখানে খোলোয়ারের সংখ্যা ছুঁয়েছে ৫০ কোটি৷ তারমধ্যে বঙ্গে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ৪ কোটি৷
কেন্দ্র ইতিমধ্যেই এই ধরনের খেলার উপরে সর্বোচ্চ হারে জিএসটি চাপিয়েছে৷ পাশাপাশি, বাজির পুরো টাকার উপরেই করের হিসাব করা হচ্ছে৷ জিএসটি পরিষদের আসন্ন বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে৷ এই পরিস্থিতিতে সোগির সভাপতি অমৃত কিরণ সিংহ জানান, ‘সম্প্রতি অনলাইন খেলায় জিএসটি ১৮% থেকে বাডি়য়ে ২৮% করা হয়েছে৷ আগে খেলা থেকে সংস্থাগুলির যে আয় হত, তার উপরেই জিএসটি বসত৷ নতুন ব্যবস্থায় বাজির মোট টাকার ভিত্তিতে কর হিসাব হচ্ছে৷ অথচ বাস্তব ঘটনা হল, বাজির টাকা সংস্থার আয় নয়৷ খেলার পরিকাঠামো ব্যবহারের জন্য খেলোয়াডে়রা আয়োজক সংস্থাকে যে টাকা দেন, সেটাই তার আয়ের উৎস৷ তাই এ নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে শীঘ্রই আলোচনায় বসব৷’
বস্তুত, অনলাইনের খেলাগুলি কার্যত যেমন এক ধরনের নেশা আবার জুয়াও৷ যদিও অনলাইনে গেম খেলাটাই আইনত অবৈধ নয়৷ কিন্তু যে হারে এই খেলায় সাধারণ মানুষের আগ্রহ বাড়ছে তাতে চিন্তার ভাজ পড়েছে প্রশাসনের কপালে৷ তাই এই আগ্রহ কমাতে মানুষের পকেটে কোপ ফেলার জন্য করের হার এবং তা হিসাবের নীতি বদলেছে সরকার৷ তবে সোগির বক্তব্য, করের হার বাডি়য়ে মানুষকে বিরত করা যাবে না৷ যেহেতু অনলাইনে গেমিং তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক, তাই ভারতে খেলার সুযোগ না থাকলেও, খেলোয়াডে়রা এখানে বসে অন্য যে কোনও দেশেই তা খেলতে পারেন৷
সিংহ জানান, ‘বিশ্বে অনলাইন গেমিংয়ের ২৫% রয়েছে চিনের দখলে এবং ২৩% আমেরিকার৷ মোট বাজির অঙ্ক বছরে ১৫,০০০ কোটি ডলার (প্রায় ১২.৫৩ লক্ষ কোটি টাকা)৷ ভারতে এই খেলা শুরু হয় বছর পাঁচেক আগে৷ বর্তমানে এই বাজারের মাত্র ১% রয়েছে এ দেশের দখলে৷ কিন্ত্ত তাতেই এখানে খোলোয়ারের সংখ্যা ছুঁয়েছে ৫০ কোটি৷ বাজির পরিমাণ বছরে ৩৫০ কোটি ডলার (প্রায় ৩০,০০০ কোটি টাকা)৷ কর্মসংস্থান হয়েছে ২ লক্ষ৷’ তাঁর দাবি, অতিরিক্ত কর এবং অতি-নিয়ন্ত্রণের যাঁতাকলে না পড়লে বিশ্বে নেট গেমিংয়ের ৫% আসবে ভারতের দখলে৷
আর এ ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের ভূমিকা রয়েছে বলে মত সোগির৷ দেশে ৪০০ অনলাইন গেমিং সংস্থা রয়েছে৷ রাজ্যে খেলায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ৪ কোটিতে ঠেকেছে বলে জানিয়ে সিংহের দাবি, ‘এতে অংশগ্রহণ করে যাতে কারও লোকসান মাত্রা না ছাড়ায়, করের হার বাডি়য়ে সেই ব্যবস্থার কথা ভাবা অবাস্তব৷ বরং তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমেই খেলার সময় বেঁধে দেওয়া-সহ আরও কিছু ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে৷’ সেই সঙ্গে খুব শীঘ্রই অনলাইন গেমিং সংস্থাগুলির সমস্যা ও সম্ভাবনাগুলি নিয়ে তাঁরা কেন্দ্রের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বলেও জানিয়েছেন সিংহ৷ দেশে এই ক্ষেত্রের নানা দিক নিয়ে সমীক্ষার পরিকল্পনা করেছে সোগি৷ এতে তারা সাহায্য নেবে আইআইটি, আইআইএম এবং ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিটি অব জুরিডিক্যাল সায়েন্সেসের মতো প্রতিষ্ঠানগুলির৷