• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

সব রাজ্যকে ‘খেলায়’ ছাপিয়ে পশ্চিমবঙ্গ

শিরোনাম পড়ে বেশ গর্ববোধ হওয়ার কথা, তাই না? কিন্তু বিশ্বাস করুন এই ‘খেলার’ আসল সত্য জানলে গর্ববোধ তো দূর, আপনি আজ রাতে ঘুমোতে পারবেন কিনা সন্দেহ৷ কারণ আপনার সন্তানদের ভবিষ্যতের প্রশ্ন এসে দাঁড়াবে আপনার কাছে৷ আসলে এখানে যে ‘খেলার’ কথা বলা হচ্ছে তা হল অনলাইন গেম৷ জানা গিয়েছে বাজি ধরে অনলাইনে গেম খেলার প্রবণতা গোটা দেশ

শিরোনাম পড়ে বেশ গর্ববোধ হওয়ার কথা, তাই না? কিন্তু বিশ্বাস করুন এই ‘খেলার’ আসল সত্য জানলে গর্ববোধ তো দূর, আপনি আজ রাতে ঘুমোতে পারবেন কিনা সন্দেহ৷ কারণ আপনার সন্তানদের ভবিষ্যতের প্রশ্ন এসে দাঁড়াবে আপনার কাছে৷
আসলে এখানে যে ‘খেলার’ কথা বলা হচ্ছে তা হল অনলাইন গেম৷ জানা গিয়েছে বাজি ধরে অনলাইনে গেম খেলার প্রবণতা গোটা দেশ জুড়ে বাড়লেও সবার ওপরে নাম রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের৷ এ রাজ্যে তার বৃদ্ধির হার ছাপিয়ে গিয়েছে জাতীয় গড়কেও৷ অনলাইন গেমিং সংস্থাগুলির সংগঠন স্কিল অনলাইন গেমস ইনস্টিটিউট-এর (সোগি)-র তথ্য জানলে চমকে উঠবেন৷ সোগি বলছে, দেশে এক জন খেলোয়াড় গডে় যত ঘণ্টা এই গেম খেলেন, পশ্চিমবঙ্গে তার থেকে ২৫% বেশি৷ এই খেলার বাড়বাড়ন্তের কথা মানলেও, দেশে এতে যে হারে জিএসটি চাপানো হয় এবং পুরো বাজির উপরে কর বসে, তা নিয়ে আপত্তি তুলে কেন্দ্রের কাছে দরবার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংগঠনটি৷
প্রসঙ্গত, নেটে বাজি রেখে তাস, দাবা-সহ আরও কিছু খেলা হয়৷ তাসের মধ্যে আবার রামি, পোকার, ব্রিজ উল্লেখযোগ্য৷ ভারতে মাত্র বছর পাঁচেক আগে এই খেলা শুরু হলেও বর্তমানে এখানে খোলোয়ারের সংখ্যা ছুঁয়েছে ৫০ কোটি৷ তারমধ্যে বঙ্গে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ৪ কোটি৷
কেন্দ্র ইতিমধ্যেই এই ধরনের খেলার উপরে সর্বোচ্চ হারে জিএসটি চাপিয়েছে৷ পাশাপাশি, বাজির পুরো টাকার উপরেই করের হিসাব করা হচ্ছে৷ জিএসটি পরিষদের আসন্ন বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে৷ এই পরিস্থিতিতে সোগির সভাপতি অমৃত কিরণ সিংহ জানান, ‘সম্প্রতি অনলাইন খেলায় জিএসটি ১৮% থেকে বাডি়য়ে ২৮% করা হয়েছে৷ আগে খেলা থেকে সংস্থাগুলির যে আয় হত, তার উপরেই জিএসটি বসত৷ নতুন ব্যবস্থায় বাজির মোট টাকার ভিত্তিতে কর হিসাব হচ্ছে৷ অথচ বাস্তব ঘটনা হল, বাজির টাকা সংস্থার আয় নয়৷ খেলার পরিকাঠামো ব্যবহারের জন্য খেলোয়াডে়রা আয়োজক সংস্থাকে যে টাকা দেন, সেটাই তার আয়ের উৎস৷ তাই এ নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে শীঘ্রই আলোচনায় বসব৷’
বস্তুত, অনলাইনের খেলাগুলি কার্যত যেমন এক ধরনের নেশা আবার জুয়াও৷ যদিও অনলাইনে গেম খেলাটাই আইনত অবৈধ নয়৷ কিন্তু যে হারে এই খেলায় সাধারণ মানুষের আগ্রহ বাড়ছে তাতে চিন্তার ভাজ পড়েছে প্রশাসনের কপালে৷ তাই এই আগ্রহ কমাতে মানুষের পকেটে কোপ ফেলার জন্য করের হার এবং তা হিসাবের নীতি বদলেছে সরকার৷ তবে সোগির বক্তব্য, করের হার বাডি়য়ে মানুষকে বিরত করা যাবে না৷ যেহেতু অনলাইনে গেমিং তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক, তাই ভারতে খেলার সুযোগ না থাকলেও, খেলোয়াডে়রা এখানে বসে অন্য যে কোনও দেশেই তা খেলতে পারেন৷
সিংহ জানান, ‘বিশ্বে অনলাইন গেমিংয়ের ২৫% রয়েছে চিনের দখলে এবং ২৩% আমেরিকার৷ মোট বাজির অঙ্ক বছরে ১৫,০০০ কোটি ডলার (প্রায় ১২.৫৩ লক্ষ কোটি টাকা)৷ ভারতে এই খেলা শুরু হয় বছর পাঁচেক আগে৷ বর্তমানে এই বাজারের মাত্র ১% রয়েছে এ দেশের দখলে৷ কিন্ত্ত তাতেই এখানে খোলোয়ারের সংখ্যা ছুঁয়েছে ৫০ কোটি৷ বাজির পরিমাণ বছরে ৩৫০ কোটি ডলার (প্রায় ৩০,০০০ কোটি টাকা)৷ কর্মসংস্থান হয়েছে ২ লক্ষ৷’ তাঁর দাবি, অতিরিক্ত কর এবং অতি-নিয়ন্ত্রণের যাঁতাকলে না পড়লে বিশ্বে নেট গেমিংয়ের ৫% আসবে ভারতের দখলে৷
আর এ ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের ভূমিকা রয়েছে বলে মত সোগির৷ দেশে ৪০০ অনলাইন গেমিং সংস্থা রয়েছে৷ রাজ্যে খেলায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ৪ কোটিতে ঠেকেছে বলে জানিয়ে সিংহের দাবি, ‘এতে অংশগ্রহণ করে যাতে কারও লোকসান মাত্রা না ছাড়ায়, করের হার বাডি়য়ে সেই ব্যবস্থার কথা ভাবা অবাস্তব৷ বরং তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমেই খেলার সময় বেঁধে দেওয়া-সহ আরও কিছু ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে৷’ সেই সঙ্গে খুব শীঘ্রই অনলাইন গেমিং সংস্থাগুলির সমস্যা ও সম্ভাবনাগুলি নিয়ে তাঁরা কেন্দ্রের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বলেও জানিয়েছেন সিংহ৷ দেশে এই ক্ষেত্রের নানা দিক নিয়ে সমীক্ষার পরিকল্পনা করেছে সোগি৷ এতে তারা সাহায্য নেবে আইআইটি, আইআইএম এবং ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিটি অব জুরিডিক্যাল সায়েন্সেসের মতো প্রতিষ্ঠানগুলির৷