পিয়ালী হাজরা
পড়াশুনোর চাপ, অফিসের কাজ, বাডি়র দায়িত্ব সামলানো এবং বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রকম রোগব্যাধি নিয়ে বেঁচে থাকা এখন প্রতিটি মানুষের জীবনে প্রবলভাবে সত্যি৷ আট হোক কিংবা আশি, মানসিক উৎকন্ঠা, উদ্বেগ, মনের চাপ সব বয়সের মানুষের নিত্যসঙ্গী৷ পড়ার চাপ, কাজের চাপ, দায়িত্বভার মনের উপর যেভাবে থাবা বসাচ্ছে , তাতে শরীরে বাসা বাঁধছে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, মাথার যন্ত্রণা, অনিদ্রা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া- এমনই নানারকম অসুখ৷ মনের উপর চাপ এবং তা থেকে শরীরে যে সব রোগ বাসা বাঁধছে তা থেকে মুক্তির উপায় কী ৷ চিকিৎসকদের মতে, কিছু নিয়ম যদি মানুষ মেনে চলে তবে সহজেই টেনশন, স্ট্রেস কাটিয়ে সুস্থ থাকা যায় ৷
লাইফস্টাইল আধুনিক জীবনের একটা খুব পরিচিত শব্দ, যার হাত ধরে মানুষের জীবনে নিঃশব্দে প্রবেশ করছে টেনশন, স্ট্রেস৷ শুধুমাত্র শহুরে জীবন নয়, গ্রামের ক্ষেত্রেও ছবি বদলাচ্ছে অতি দ্রুত৷ কর্মজগত প্রযুক্তিগত ক্ষেত্র, ছোট-বড় ব্যবসায়ী, পড়ুয়া এমনকি গৃহবধুদের মধ্যেও প্রভাব ফেলছে বর্তমান জীবনযাত্রার কালো দিক৷ কাজে মনোনিবেশ করতে না পারা, ধৈর্যের অভাব, টেনশন থেকে কিছুক্ষণের জন্য মুক্তি পেতে মানুষ বেছে নিচ্ছে ধূমপান, মদ্যপানের মতো অভ্যাস৷ ক্ষণে ক্ষণে মুড চেঞ্জ, হিংস্র হয়ে ওঠা, মেজাজ হারানো সবই বর্তমান জীবনযাত্রার ফল যা বাডি়য়ে তুলছে জীবনের ঝুঁকি৷ চিকিতসা বিজ্ঞান উন্নত হয়েছে, মানুষের জীবনের গড় আয়ুও বেডে়ছে , কিন্ত্ত পাশাপাশি আরও যে জিনিসটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে তা হল, এখন খুব অল্প বয়সের ছেলেমেয়েদের জীবনে আকস্মিকভাবে মৃতু্য ছোবল মারছে৷ কিছু বুঝে ওঠার আগেই সব শেষ৷ অথচ তাদের অতীতের কোন খারাপ মেডিকেল রেকর্ড নেই৷ তাহলে কেন এই মৃতু্য৷ চিকিৎসকেরা এর জন্যও দায়ী করছেন এই লাইফস্টাইলকেই৷ বর্তমান লাইফস্টাইল এডি়য়ে যাওয়ায় এই গতিময়তার যুগে অসম্ভব৷ তার জন্য যে পরিকাঠামো দরকার, তা খুব অল্প পরিবারই বজায় রেখে চলতে পারেন৷ অগত্যা ভরসা সেই চিকিৎসকদের কাছে ছোটা৷ কী করলে মুক্তি পাওযা যেতে পারে এই দৈনন্দিন লাইফস্টাইলের কুপ্রভাব থেকে ?
‘আর্ট অফ লিভিং’ এমনই এক সংস্থা যার ব্যাপ্তি সারা পৃথিবী জুডে়৷ মনের স্থিতি আনতে এই সংস্থা নানা পদ্ধতি, নানা ধাপ অনুসরণ করে থাকে৷ এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন বহু চিকিৎসক, যাঁরা এই সংস্থার দ্বারাই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৷ তাঁরাই আবার পরবর্তীতে সাহায্য করে থাকেন রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে৷ ১৯৮১ সালে আর্ট অফ লিভিং ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন শ্রী রবিশঙ্কর, যার মূল লক্ষ্য মানুষের ব্যক্তিগত মানসিক চাপ, সামাজিক সমস্যা দূর করা৷ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর অবদানের জন্য তিনি বিভিন্ন দেশ থেকে রাষ্ট্রীয় সম্মান লাভ করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে ভারত, পেরু, কলম্বিয়া, এবং প্যারাগুয়ে৷ ২০১৬ সালে তিনি ভারত সরকারের ‘পদ্মভূষণ’ সম্মান পান৷
মূলত নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণে রাখার নানা পন্থা শেখানো হয় ‘আর্ট অফ লিভিং’-এ ৷ চিকিতসক পার্থসারথি সেনগুপ্ত জানালেন, কোন এক ব্যক্তির নিজের মনকে নিজের বশে রাখার প্রচেষ্টার প্রথম ধাপ শুরু হয় হ্যাপিনেস প্রোগ্রাম দিয়ে৷ এক্ষেত্রে দরকার হয় ‘মেডিটেশন’ যার প্রাথমিক ধাপ নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের সঠিক অভ্যাস৷ এক্ষেত্রে প্রথমেই যে পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় তা হল সুদর্শন ক্রিয়া, নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের ছন্দোবদ্ধ এক পদ্ধতি, যা নিয়মিত অভ্যাস করলে নিজের মন প্রাণশক্তিতে ভরপুর হয়ে ওঠে৷ কিন্ত্ত তা করতে হবে সঠিক ভাবে, প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের সাহায্য নিয়ে৷
আর্ট অফ লিভিং -এর শাখা ছড়িয়ে রয়েছে সমগ্র বিশ্ব জুড়ে, দেশ-বিদেশের সীমানা ছাড়িয়ে৷ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যেও প্রসারিত এর শাখা-প্রশাখা৷ এ রাজ্যের কলকাতা শিহির থাকা শুরু করে এই সংস্থা ডালপালা মেলেছে প্রত্যন্ত গ্রামেও৷ শিবিরে যোগ দিতে বয়স কোন বাধা নয়৷ শিশুদের জন্য রয়েছে পৃথক শিবির৷ অংশগ্রহণকারীকে মনে মনে একটি সহজ শব্দ ব্যবহার করতে শেখানো হয়, যা মনকে শান্ত, ও অন্তর্মুখী করে তোলে৷ এই বিশেষ অনুশীলনে মন ও স্নায়ুতন্ত্র গভীর মৌনতায় বিশ্রাম পায়৷
নদীর স্থির, স্বচ্ছ জলে প্রতিফলন স্বাভাবিক ভাবেই স্বচ্ছ হয়৷ একইভাবে মন যখন শান্ত থাকে তখন তার প্রকাশও হয় স্বচ্ছ৷ আমাদের নিজেদের প্রকাশ করার, জীবনের পথে চলার ক্ষমতা বাড়ে, দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করে৷ নিজের মানসিক সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে মন শক্ত হয়, নিজের কাছে, নিজের পরিবারের কাছে নিজেকে অপরিহার্য্য মনে হয়৷ আর নিজেকে নিজের কাছে, পরিবারের কাছে অপরিহার্য্য করে তুলতে পাশে রয়েছে ‘আর্ট অফ লিভিং’-এর অদম্য চেষ্টা৷