এই মামলার তদন্তকারী আধিকারিক মানবজিৎ সিং ধিলো সংবাদমাধ্যম পিটিআইকে চেক উদ্ধারের কথা জানান। তিনি বলেন, ‘এই ঘটনার তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা ছয়টি পোস্ট-ডেটেড চেক উদ্ধার করেছে। পরীক্ষার আগে পরীক্ষার্থীদের হাতে প্রশ্ন তুলে দেওয়ার শর্তে এই টাকা নিয়েছিল মাফিয়ারা। আমরা উদ্ধার হওয়া চেকগুলির সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কগুলির অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য খতিয়ে দেখছি। সবমিলিয়ে বিহার পুলিশের দাবি, এখনও পর্যন্ত আমরা যতদূর দেখতে পাচ্ছি তা আসলে হিমশৈলের চূড়া মাত্র। বিহার পুলিশের আরও দাবি, এই দুর্নীতির সঙ্গে অন্তত ৩৫ জন পরীক্ষার্থী যুক্ত ছিলেন। উল্লেখ্য, নিট প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে বিহার পুলিশের ইকোনমিক অফেন্স ইউনিট এখনও পর্যন্ত চার পরীক্ষার্থী এবং তাদের পরিবারের সদস্য সহ ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃত ১৩ জনই বিহারের।
কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান সাফ জানিয়েছেন, নিট দুর্নীতিতে আয়োজক সংস্থা এনটিএ-র আধিকারিকেরা যদি জড়িত থাকেন, কাউকে ছাড়া হবে না। সে ক্ষেত্রে কড়া পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। তবে মামলার তদন্তে পরীক্ষক সংস্থা এনটিএর বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছে বিহার পুলিশ। তাঁদের দাবি, এনটিএ সাহায্য করলে আরও অনেক কিছুই সামনে আসবে। যদিও সেই সাহায্য মিলছে না। বিহার পুলিশ সূত্রের খবর, অন্তত তিন বার নোটিস পাঠিয়েও এনটিএ-র কাছ থেকে অতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং নথি হাতে পাননি তদন্তকারী ইওইউ-এর আধিকারিকেরা। না মিলেছে মূল প্রশ্নপত্র, না মিলেছে ওই ১১ পরীক্ষার্থী সম্পর্কে কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য, যা রয়েছে নিট-কর্তৃপক্ষের কাছে।
উল্লেখ্য, নিট পরীক্ষায় দুর্নীতির প্রথম ইঙ্গিত পেয়েছিল বিহার পুলিশ। পুলিশের এফআইআরে দাবি করা হয়েছে, ৫ মে , ২০২৪ রাত ২টো নাগাদ আমাদের কাছে খবর আগে পরীক্ষা পরিচালনা বিভাগ ও কিছু পরীক্ষার্থীদের উদ্যোগে নিট পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হয়েছে। পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরেই একটি সন্দেহজনক গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেই মতো আমরা সেখানে গিয়ে গাড়িটি আটক করি। এরপর গাড়িটির চালক পালানোর চেষ্টা করে। গাড়িটিতে মোট ৩ জন ছিলেন। ৪ জন পরিক্ষার্থীর অ্যাডমিট কার্ডের জেরক্স কপি পাওয়া যায় তাঁদের থেকে। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা স্বীকার করে, পরীক্ষাকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের সঙ্গে রফার পর প্রশ্ন ফাঁস করছিল তাঁরা। আরও একাধিক সেন্টারে এই একই ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে শিক্ষামন্ত্রী জানান, ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের কোনও ঘটনা না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে সরকার সংশোধন আনার কথা ভাবছে। ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেন, ‘দু’টি জায়গায় অনিময় হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। আমি পরীক্ষার্থী এবং সব অভিভাবকদের আশ্বাস দিতে চাই, সরকার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছে। যদি এনটিএ-র কোনও শীর্ষ স্থানীয় আধিকারিক এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত বলে জানা যায়, তাহলেও তাঁদের ছাড়া হবে না। এনটিএ-তে আরও অনেক উন্নতি প্রয়োজন। সরকার এই নিয়ে উদ্বিগ্ন। কোনও অপরাধীকেই ক্ষমা করা হবে না। তাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।’
বিহার পুলিশের ইকোনমিক অফেন্স ইউনিটের তদন্তে জানা গিয়েছে, এই দুর্নীতির সঙ্গে অন্তত ৩৫ জন পরীক্ষার্থী যুক্ত ছিলেন। এর মধ্যে ৪ জনকে পরীক্ষার দিনই গ্রেফতার করা হয়েছিল। এছাড়া আরও ৯ জনকে চিহ্নিত করে তলব করা হয়েছে জেরার জন্যে। এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত আরও ২২ জন পরীক্ষার্থীকে শনাক্ত করা বাকি রয়েছে। এদিকে বিহার পুলিশ এই ঘটনায় ইতিমধ্যে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪০৭, ৪০৮, ৪০৯ এবং ১২০বি নং ধারায় মামলা রুজু করেছে।