স্ত্রীর সাথে চার বছর ধরে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা
খায়রুল আনাম: স্ত্রীর সাথে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা চলাকালীন নিরঞ্জন দাস নামে সাঁইত্রিশ বছর বয়সী এক সিভিক ভলান্টিয়ারের অস্বাভাবিক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রীতিমতো রহস্য দানা বেঁধেছে। মৃতের ভাই পল্টু দাস দাবি করেছেন যে, তাঁর দাদাকে পরিকল্পনা করে তারাপীঠ শ্মশানে তন্ত্রসাধনার জন্য ডেকে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়েছে। তিনি ভাইয়ের মৃতদেহের কপালের ডান দিকে আঘাতের চিহ্ন দেখেছেন বলে দাবি করলেও, তারাপীঠ থানার পুলিশ এই দাবির সঙ্গে সহমত হয়নি। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত পুলিশ এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতেও রাজি হয়নি। নিরঞ্জন দাস নামে ওই সিভিক ভলান্টিয়ারের বাড়ি বীরভূমের পুর শহর নলহাটির ৯ নম্বর ওয়ার্ডে। তিনি সাঁইথিয়ায় জিআরপিতে সিভিক ভলান্টিয়ার হিসেবে ছিলেন। তিনি ডিউটি করতেন নলহাটি রেল স্টেশনে।
জানা গিয়েছে যে, সিভিক ভলান্টিয়ার নিরঞ্জন দাসের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর বনিবনা না হওয়ার কারণে তিনি চার বছর আগে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে চলে যান। সেই থেকে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা চলছে। এই মামলা চালাতে গিয়ে নিরঞ্জন দাস আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি স্ত্রীকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। এজন্য তিনি মামলা না চালিয়ে স্ত্রীকে ফিরে পেতে চেষ্টা করছিলেন বলে জানা যায়। তিনি স্ত্রীকে ফিরে পেতে হামেশাই তারাপীঠ মন্দিরে গিয়ে মা তারাকে পুজো দিয়ে স্ত্রীকে ফিরে পাওয়ার কামনা করতেন এবং তারাপীঠ শ্মশানে যেতেন। সেখানেই তিনি সাধুদের সংস্পর্শে আসেন। তাঁর স্ত্রীও মঝেমধ্যে তারাপীঠ মন্দিরে মা তারাকে পুজো দিতে যেতেন। সেখানে তাঁদের দেখা হলেও উভয়ের মধ্যে কোনও কথাবার্তা হয়নি বলে জানা যায়। এই সময়ই তারাপীঠ শ্মশানের এক সাধু নিরঞ্জন দাসকে পরামর্শ দেন যে, নিরঞ্জন তাঁর কাছে তন্ত্রসাধনা করলে মা তারা তাঁর কাছে স্ত্রীকে ফিরিয়ে দেবেন। তন্ত্রসাধনার জন্য নিরঞ্জন ওই সাধুকে বেশকিছু টাকাও দেন। নিরঞ্জনের ভাইয়ের স্ত্রী পারমিতা দাস জানিয়েছেন, শনিবার ১৫ জুন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার সময় ভাসুর তাঁর এক বন্ধু রিপনকে সঙ্গে নিয়ে তারাপীঠ যাচ্ছি বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। রাত ৯ টার সময় বাড়িতে মোবাইলে ফোন করে জানায় যে, রিপন না আসায় সে একাই তারাপীঠে গিয়েছে। তারপর থেকেই তাঁকে আর ফোনে পাওয়া যায়নি। মধ্য রাতে তাঁরা মোবাইলে ফোন করলে সেই ফোন ধরে তারাপীঠ থানার পুলিশ। তখনই তাঁদের জানায় যে, তারাপীঠ শ্মশানে নিরঞ্জন দাসকে অচৈতন্য অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। তাঁকে সেখান থেকে উদ্ধার করে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে জানান। নিরঞ্জন দাসের এই রহস্যজনক মৃত্যুকে ঘিরে তারাপীঠ শ্মশানে উত্তেজনা দেখা দেয়ে। তারাপীঠ থানার পুলিশ সিভিক ভলান্টিয়ারের এই রহস্য-মৃত্যুর তদন্ত শুরু করেছে।।