• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

অক্টোবরে শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের প্রস্তুতি তুঙ্গে

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদির আমন্ত্রণে আগামী অক্টোবরে দিল্লি সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। (Photo: PID/Handout via Xinhua/IANS)

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদির আমন্ত্রণে আগামী অক্টোবরে দিল্লি সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। বাংলাদেশ সরকার আশা করছে, শেখ হাসিনার ভারত সফরে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।

ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনার ভারত সফরকে সফল করার জন্য দু’দেশের কর্মকর্তারা আলােচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। গত এক মাসে অন্যান্য বৈঠকের পাশাপাশি দু’দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও জলসম্পদ সচিব পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে।

এর মধ্যে জলসম্পদ সচিবদের বৈঠক আট বছর পর অনুষ্ঠিত হলাে। শুধু তাই নয়, শেখ হাসিনার আসন্ন সফর নিয়ে আলােচনার জন্য ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকরও আগামী সােমবার ঢাকায় আসছেন। মন্ত্রী হিসেবে জয়শংকরের এটা প্রথম ঢাকা সফর। এর আগে পররাষ্ট্র সচিব থাকাকালীন তিনি কয়েকবার ঢাকা সফর করেন।

দু’দেশের অগ্রাধিকার ও ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সম্পর্ক আরও মজবুত করার জন্য আগামী মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মােমেন এবং জয়শংকর আলােচনায় বসবেন। সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, দু’দেশই একে অপরের মনােভাব ও চাহিদা ভালােমতাে বুঝতে চায়। কারণ উভয় দেশের রাজনৈতিক নেতারা জানেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে প্রতিবন্ধকতা থাকবে।

প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়াটা সমস্যা নয়, কিন্তু সমাধানের জন্য মনােবৃত্তি না থাকাটা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, সমুদ্র সীমানা বিরােধ নিষ্পত্তির জন্য বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক আদালতের আশ্রয় নেয়। ওই সময় পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কীভাবে সামনে এগােনাে যায় তা বুঝতে অনেক কর্মকর্তার অসুবিধা হচ্ছিল।

কিন্তু রাজনৈতিক নেতৃত্বের দৃঢ়তার কারণে পরে এই সমস্যা কেটে যায়। তিনি বলেন, আলােচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে বিশ্বাস করে বাংলাদেশ এবং এজন্য রাজনৈতিক বােঝাপড়া অত্যন্ত জরুরি। রােহিঙ্গা সমস্যা সমাধান দুরূহ মন্তব্য করে তিনি বলেন, মায়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে বিশ্বাসের ঘাটতি আছে। কিন্তু বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক ভালাে হওয়ার কারণে সীমানা নির্ধারণের মতাে স্পর্শকাতর বিষয় সমাধান করা সম্ভব হয়েছে।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে জলের ন্যায্যবন্টন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একইসঙ্গে বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। আট বছর পরে দু’দেশের মধ্যে জলসম্পদ সচিব পর্যায়ের বৈঠক এমাসে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্পের ভালাে-মন্দ যাচাইয়ের জন্য একটি যৌথ কমিটি এ বছরের মধ্যে গঠন করা হবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ ছাড়া, সাতটি যৌথ নদীর জল প্রবাহের তথ্য-উপাত্ত সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিশ্লেষণ করে জলবণ্টনের চুক্তির খসড়া তৈরি করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

নদীগুলাে হচ্ছে মনু, ফেনী, খােয়াই, গােমতী, ধরলা, দুধকুমার ও মুহুরি। এ বিষয়ে সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রতিটি নদীর জন্য আলাদা আলাদা চুক্তি হবে। তবে কবে হবে, এটি এখন বলা যাবে না। তিস্তা নিয়ে আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। এটি বিবেচনায় নিয়ে বলা যায়, আমরা কাজ করছি এবং বাকিটা রাজনৈতিক নেতৃত্বের দৃঢ়তার ওপর নির্ভর করছে।

২০১১ সালে তিস্তা চুক্তির আলােচনা শেষ করে ঢাকা ও দিল্লি। কিন্তু গত আট বছরেও ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে এখনও চুক্তি হয়নি।

আসামের জাতীয় নিবন্ধন সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে অন্য একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করায় শর্তে বলেন, এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সেখানকার মানুষের সমর্থন আদায় করার জন্য প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ কার্ড ব্যবহার করে থাকে। তবে ঢাকা অবগত আছে, আসামে ৪০ লাখ ভারতীয় নাগরিকের এখনও নিবন্ধন সম্পন্ন হয়নি। কিন্তু আমরা এই সমস্যাকে সীমান্ত পার হতে দেবাে না।

তিনি বলেন, ভারতের শাসক বিজেপি সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারা অভিযােগ করেন, অনেক বাংলাদেশি সীমান্ত অতিক্রম করে আসামে আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ এর তীব্র বিরােধিতা করে আসছে।

এই কর্মকর্তা জানান, এই বিষয় নিয়ে মতানৈক্য থাকায় গত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়নি। তবে পরবর্তী সময়ে ভারতের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই বিষয়ের উল্লেখ থাকার কারণে বাংলাদেশ এর প্রতিবাদ করে।