নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা, ১৩ জুন– নিট পরীক্ষায় দুর্নীতি নিয়ে বিক্ষোভ কলকাতায়। আজ, বৃহস্পতিবার বিকাশ ভবন অভিযান চালান বিক্ষোভকারীরা। একদিকে পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ, অন্যদিকে স্নাতকে ভর্তির নির্দেশিকা নিয়ে অনিশ্চয়তাজনিত কারণে বিক্ষোভ দেখান এই আন্দোলনকারীরা। বৃহস্পতিবার এআইডিএসও-র এই বিকাশ ভবন অভিযান ঘিরে পুলিশের বিরুদ্ধে বাধা দানের অভিযোগ উঠেছে। জানা গিয়েছে, এদিন করুণাময়ী থেকে বিকাশ ভবন যাওয়ার পরিকল্পনা করেন আন্দোলনকারীরা। কিন্তু মাঝপথেই পুলিশ তাঁদের আটকে প্রিজন ভ্যানে তোলে বলে অভিযোগ। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে বচসা বাধে।
ইতিমধ্যে এই দুর্নীতি নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আজ একটি চাঞ্চল্যকর রায় দিয়েছে। সেই রায়ে বলা হয়েছে, বিতর্কিত ১৫৬৩ জন পরীক্ষার্থীকে যে গ্রেস মার্ক দেওয়া হয়েছিল, তাঁদেরকে ফের পরীক্ষায় বসতে হবে। ফলে আদালতের এই নির্দেশের পর কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রক আজ বিবৃতি দিয়ে ঘোষণা করেছে, ১৫৬৩ জনকে যে বাড়তি নম্বর দেওয়া হয়েছে, তা বাতিল করা হচ্ছে। এবং আগামী ২৩ জুন ফের ডাক্তারিতে ভর্তির এই পরীক্ষা নেওয়া হবে। ৩০ জুন সেই পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হবে। পরীক্ষার্থীরা ইচ্ছে করলে সেই পরীক্ষায় বসতে পারেন। ৩০ জুন ফল প্রকাশের পর ৬ জুলাই কাউন্সেলিং শুরু হবে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি নিট ইউজি ২০২৪ পরীক্ষায় একাধিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। পরীক্ষায় অনিয়ম এবং ফলপ্রকাশে অস্বচ্ছতার অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন পড়ুয়া ও অভিভাবকরা। আজ সেই মামলার শুনানিতে নিট পরীক্ষার নিয়ামক সংস্থা বা ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সী সেই পরীক্ষায় ১৫৬৩ পরীক্ষার্থীকে সময় নষ্ট হওয়ার জন্য গ্রেস মার্ক দিয়েছিল বলে দাবি করা হয়। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রক। কেন্দ্রের শিক্ষা মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান এবিষয়ে বলেন, নিট-ইউজি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে বলে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তার কোনও প্রমাণ নেই।
প্রসঙ্গত নিট পরীক্ষায় ফুল মার্কস ৭২০ নম্বর। অথচ এবার নিট ইউজি ২০২৪ পরীক্ষায় একসঙ্গে ৬৭ জন পরীক্ষার্থীই ৭২০ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছেন। আর একসঙ্গে ৬৭ জন পরীক্ষার্থীর এই সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্তি নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন দানা বেঁধেছে। এই ৬৭ জনের মধ্যে আবার ৬ জন একই কেন্দ্র থেকে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। যা নিয়ে নানা বিতর্ক, সন্দেহ ও পরীক্ষার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শুধু তাই নয়, বেশ কিছু পরীক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বর নিয়েও একাধিক প্রশ্ন ও সন্দেহের অবকাশ রয়েছে।
কারণ নিট পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ণের নিয়ম হচ্ছে, সঠিক উত্তর দিলে ৪ নম্বর এবং প্রতি ভুল উত্তরে মাইনাস ১ নম্বর। এই পরীক্ষায় মোট ১৮০টি প্রশ্ন থাকে। কেউ সবগুলোর সঠিক উত্তর দিলে তবেই ৭২০ নম্বর পাবে। কিন্তু, কোনও পরীক্ষার্থী যদি ১৭৯টি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেন, আর বাকি একটি প্রশ্নের ভুল উত্তর দেন, তাহলে তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৭১৬ থেকে এক নম্বর কেটে গিয়ে ৭১৫ হয়ে যাবে। অর্থাৎ ওই একটি প্রশ্নের জন্য ৪ নম্বর তো পাবেনই না, উপরন্তু নেগেটিভ মার্কিংয়ের জন্য আরও ১ নম্বর বাদ যাবে। ফলে তিনি সর্বোচ্চ নম্বর ৭২০ থেকে মোট ৫ নম্বর কম পাবেন। অথচ পরীক্ষার ফলাফল বেরনোর পর দেখা যায়, অনেকে ৭১৮ বা ৭১৯ পেয়েছেন। যা নিট মূল্যায়ন পদ্ধতির কোনও অঙ্কেই মিলছে না।