• facebook
  • twitter
Monday, 25 November, 2024

ভোট মিটতেই ‘ছোট বিরতি’ রাজনীতি থেকে, কারণ জানিয়ে এক্স বার্তা অভিষেকের

প্রশান্ত দাস, ১২ জুন– বিগত কয়েক মাসে অক্লান্ত পরিশ্রম করে তৃণমূলে সাফল্যের জোয়ার এনে দিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মন্ড হারবারের নবনির্বাচিত সাংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। মিটে গিয়েছে ভোটপর্ব। বাংলায় ২৯টি আসনে জিতে শেষ হাসি হেসেছে তৃণমূলই। এই পরিস্থিতিতে রাজনীতি থেকে ‘ছোট বিরতি’ নিচ্ছেন যুবরাজ। কিন্তু কেন? বুধের দুপুরে নিজের এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে সেই

প্রশান্ত দাস, ১২ জুন– বিগত কয়েক মাসে অক্লান্ত পরিশ্রম করে তৃণমূলে সাফল্যের জোয়ার এনে দিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মন্ড হারবারের নবনির্বাচিত সাংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। মিটে গিয়েছে ভোটপর্ব। বাংলায় ২৯টি আসনে জিতে শেষ হাসি হেসেছে তৃণমূলই। এই পরিস্থিতিতে রাজনীতি থেকে ‘ছোট বিরতি’ নিচ্ছেন যুবরাজ। কিন্তু কেন? বুধের দুপুরে নিজের এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে সেই কারণ জানিয়েছেন খোদ অভিষেকই। পাশাপাশি তাঁর এক্স বার্তায় রয়েছে নির্বাচনী প্রচারে তৃণমূলের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের অঙ্গীকারও। ঠিক কি লিখেছেন অভিষেক? তিনি লেখেন, “চিকিৎসার জন্য আমি সংগঠন থেকে সংক্ষিপ্ত বিরতি নেব। এই সময় সাধারণ মানুষের চাহিদা কী, তা আরও ভালোভাবে অনুধাবনের সুযোগ আমার কাছে রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, রাজ্য সরকার দ্রুত এবং ভালোভাবে মানুষের সমস্যার সমাধান করবে। মানুষ যাতে ন্যায়বিচার পায় তা নিশ্চিত করবে।” তাঁর ছুটি বা বিরতির কারণ কেবল চিকিৎসা নয়। জনগণের সুবিধা-অসুবিধা এবং চাহিদার কথা আরও ভালোভাবে বোঝার চেষ্টাও করবেন তিনি এই সময়ে।

তাঁর ট্যুইটটি বেশ বড়োসড়ো। এক্স বার্তায় উত্থাপিত হয়েছে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের প্রসঙ্গ। বাংলার প্রতি কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে শতাধিকবার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন অভিষেক। কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে বাংলার আন্দোলনকে দিল্লি পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলেন তৃণমূল সেনাপতি। কিন্তু তাতেও সুরাহা হয়নি। তারপরই রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নেয় আবাস ও একশো দিনের কাজের টাকা রাজ্যের মানুষকে দেবে রাজ্য সরকারই। সেই মতো লোকসভা ভোটের আগে রাজ্যের ৫৯ লক্ষ শ্রমিককে একশো দিনের কাজের বকেয়া মজুরি মিটিয়েছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এবং অভিষেক লোকসভা ভোটের প্রচারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, চলতি বছরের ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যে আবাস যোজনার বাড়ির টাকাও দেবে রাজ্য সরকার। তা যাতে নিশ্চিত হয়, বুধবারের পোস্টে তাও উল্লেখ করেছেন তৃণমূল সেনাপতি। তৃণমূল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, ডিসেম্বরের মধ্যে বাড়ির আবেদনকারীদের আবাসের টাকা দেবে। তা যাতে নিশ্চিত হয়, সে ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনি অনুরোধও করেছেন বলে পোস্টে লিখেছেন অভিষেক। রাজ্য সরকার তার দায়িত্ব পালন করবে বলে নিজের বিবৃতিতে আশা প্রকাশ করেছেন যুবরাজ। অভিষেক লিখেছেন, “আমাদের ওপর ভরসা এবং বিশ্বাস রাখার জন্য আমি বাংলার মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব। কেন্দ্রীয় বঞ্চনার কারণে জনসাধারণের ক্ষোভের প্রতিফলন ঘটেছে ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের মধ্য দিয়ে।”

অভিষেকের এক্স বার্তায় মনরেগার পাশাপাশি উঠে এসেছে লক্ষ্মীর ভান্ডারের বরাদ্দ বৃদ্ধি, নবজোয়ার যাত্রা সহ একাধিক প্রসঙ্গ। গত বছর এই সময়েই তৃণমূলের নবজোয়ার যাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন অভিষেক। ৫১ দিনের সেই যাত্রায় কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ, প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কিলোমিটারের বেশি পথ যাত্রা করেছিলেন তিনি। রাজ্যের বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে মানুষের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। এই সময় গোপন ব্যালটে ভোট নিয়ে প্রার্থী চয়নের যে মডেল অভিষেক দেখিয়েছিলেন, তাতেই পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের ঝুলি জনসাধারণের ভোটে পরিপূর্ণ হয়েছিল। সেই স্মৃতিচারণা করে অভিষেক লিখেছেন,”গত বছর এই সময়েই আমি নবজোয়ার যাত্রায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে মানুষ কী সমস্যার এবং চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন তা বোঝার চেষ্টা করেছি। ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি এবং ১০০ দিনের কাজের টাকা কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়ায়, তা আমাকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। এর প্রতিবাদে তৃণমূল নেতৃত্বরা দিল্লিতে গিয়ে মানুষের অধিকারের জন্য লড়াই করেছিলেন।” এরপরই লক্ষ্মীর ভান্ডারের প্রসঙ্গ টেনে অভিষেক লিখেছেন,”লক্ষীর ভান্ডারের বরাদ্দ বৃদ্ধি অর্থনৈতিকভাবে পরিবারগুলিকে সহায়তা করেছে।”

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, চিকিৎসার জন্য সংগঠন থেকে বিরতি নেওয়ার কথা বললেও, আদতে তাঁর শারীরিক সমস্যাটি কি, সে বিষয়ে কিছুই লেখেননি অভিষেক। তবে তৃণমূলে অভিষেক-ঘনিষ্ঠদের অনেকের বক্তব্য, তিনি রুটিন চিকিৎসা করাতেই বাইরে যেতে পারেন। তবে বিরতি নেওয়ার আগে বঙ্গের মানুষের কাছে তাঁর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন। পাশাপাশি, রাজ্য সরকার নিজ প্রতিশ্রুতি পালনে যে তৎপর থাকবে, সেই আশাও প্রকাশ করেছেন অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। যুবরাজের এই এক্স বার্তার পরই শোরগোল পড়ে গিয়েছে বঙ্গ রাজনীতিতে। বিশেষত ছাত্র-যুবদের মধ্যে। প্রতিনিয়ত যাঁর কাছ থেকে রাজনৈতিক পাঠ শেখেন ছাত্র-যুবরা, তিনিই কিছুদিনের জন্য থাকবেন অনুপস্থিত। মুখ্যমন্ত্রীর অন্যতম ভরসার কাঁধ অভিষেক। তিনি রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন কিছুদিনের জন্য। অভিষেকহীন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে উন্নয়ন কার্যগুলি সুষ্ঠভাবে চালানোই এখন তৃণমূলের অন্যতম লক্ষ্য। এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।