ঋত্বিক মুখোপাধ্যায়
সব চমকালো জিনিসই যে সোনা নয় তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হল বিজ্ঞাপন স্ট্যান্ডার্ড কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার কাছে আসা ভুরি ভুরি অভিযোগ৷বিজ্ঞাপন স্ট্যান্ডার্ড কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া বা এএসসিআই-এর সাম্প্রতিকতম বার্ষিক অভিযোগ রিপোর্ট বলছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আপত্তিজনক বলে বিবেচিত বিজ্ঞাপনগুলি নিয়ে এতো বিস্তৃত অভিযোগ জমা পড়েছে যা চমকে দেওয়ার মত৷ এক্ষেত্রে বহু বিজ্ঞাপনে এএসসিআই-এর ধারা লঙ্ঘন করে বহু সেলিব্রিটিরা বিজ্ঞাপনে কাজ করেন৷ এএসসিআই এমনই ১০১টি বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে বেবস্থা নিতে চলেছে যাতে বহু সেলেব্রেটি আইন অমান্য করেই কাজ করেছেন৷ এই ১০১টি বিজ্ঞাপনে উপস্থিত ১০৪ জন এমন সেলিব্রিটির বিরুদ্ধে এএসসিআই ব্যবস্থা নিতে চলেছে যারা নির্দেশিকা লঙ্ঘন করে সেই বিজ্ঞাপন বাবদ তাদের পরিশ্রমের কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি৷ উল্লেখ্য ভোক্তা সুরক্ষা আইন, ২০১৯ এর অধীনে প্রাপ্য পারিশ্রমিকের প্রমান না দিতে পারা আইনত অপরাধ৷ এছাড়াও যে পাঁচ ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে আইন ভাঙা হয়েছে তা হল ব্যক্তিগত যত্ন (২২ %), খাদ্য ও পানীয় (২১%) অবৈধ/বাজি (২০%) স্বাস্থ্যসেবা (৯%) এবং টেকসই (৬%)
উল্লেখযোগ্যভাবে, এএসসিআই-এর এমন ১০,০৯৩টি অভিযোগ পরীক্ষা করেছে এবং ৮২৯৯টি বিজ্ঞাপনে নিয়ম ভাঙা হয়েছে কিনা তার তদন্ত করেছে৷ অভিযোগগুলির মধ্যে ৮১শতাংশ অভিযোগই এসেছে এমন বিজ্ঞাপন নিয়ে যারা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে৷ ৩৪শতাংশ এসেছে ক্ষতিকর পণ্য বা ক্ষতিকর পরিস্থিতি তৈরী করতে পারে এমন বিজ্ঞাপন নিয়ে৷ এই বিজ্ঞাপনগুলি গ্রাহকদের অনলাইন নিরাপত্তাকে গুরুতর প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দেয়৷ এমনই ৯৪ শতাংশ ক্ষেত্রে এএসসিআই নিজে থেকেই সুয়োমোটো করে ৷
আরও উদ্বেগের বিষয় হল এই বছর, স্বাস্থ্যসেবা যেটি সবচেয়ে জটিল এবং সংবেদনশীল বিষয় হিসেবে পরিচিত সেই ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বেশি উপভোক্তা স্বার্থ লংঘিত হয়েছে৷
শুধু অভিযোগের জন্য বসে না থেকে এএসসিআই নিজস্ব প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আপত্তিকর বিজ্ঞাপনগুলির বিরুদ্ধে আইন লঙ্ঘনের জন্য বিভিন্ন নিয়ন্ত্রকদের কাছে সরাসরি ৩২০০টি বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করেছে৷ তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের কাছে ১৩১১টি অফশোর অবৈধ/বেটিং বিজ্ঞাপন এবং ড্রাগস অ্যান্ড ম্যাজিক রেমেডিজ অ্যাক্ট, ১৯৫৪ এর সম্ভাব্য লঙ্ঘনের জন্য আয়ুষ মন্ত্রকের কাছে রিপোর্ট করা৷ স্বাস্থ্যসেবা বিজ্ঞাপনগুলি ছাড়াও, অন্যদের মধ্যে রয়েছে রিয়েলটি ৪৯৩ টি বিজ্ঞাপন, অ্যালকোহল পানীয় ৮২টি বিজ্ঞাপন, এবং তামাক এবং তামাক ভিত্তিক পণ্য ৬৫ টি বিজ্ঞাপন৷ এএসসিআই -এর চেয়ারম্যান সৌগত গুপ্তা জানিয়েছেন ‘যেহেতু ডিজিটাল একটি প্রভাবশালী মাধ্যম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এবং যেখানে বিজ্ঞাপনগুলি অতি সক্রিয় প্রভাব ফেলে তাই এএসসিআই এখানকার প্রতিটি বিজ্ঞাপন নিয়ে দ্রুত সমস্যা সমাধানে প্রস্তুত হয়েছে৷ আপত্তিকর বিজ্ঞাপনের চটকদার এবং স্বচ্ছ রেজোলিউশন নিশ্চিত করতে আমরা আমাদের প্রক্রিয়া এবং দক্ষতা সদা উন্নত করতে থাকব৷ এই সংকটময় পরিস্থিতিতে আমরা নৈতিক বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য সমস্ত বিজ্ঞাপনদাতাদের সাথে সহযোগিতা করার অনুরোধ রাখি৷’মজার বিষয় হল, এএসসিআই, এএসসিআই একাডেমির মাধ্যমে ইতিমধ্যেই ‘দ এএসসিআই গাইড টু রেস্পন্সিবল এডভার্টাইজিং’ নামে একটি সার্টিফিকেশন কোর্স নিয়ে এসেছে৷ কোর্সটি, ছাত্র এবং পেশাদারদের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, বিজ্ঞাপনের ইকোসিস্টেমকে সমর্থন করা, নৈতিক বিজ্ঞাপনের মান অর্জন করা এবং এএসসিআই ধারা এবং বিভিন্ন প্রবিধানের সাথে সম্মতি এবং আপত্তিকর বিজ্ঞাপনের ঘটনা হ্রাস করা নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা তৈরী করে৷
এএসসিআই সিইও এবং সেক্রেটারি জেনারেল মনীষা কাপুর জানান, ‘২০২৩-২৪ বছরটি সত্যিই একটি চ্যালেঞ্জিং বছর ছিল এবং এএসসিআই ডিজিটাল মিডিয়ার উপর আমাদের প্রচেষ্টাকে কেন্দ্র করে এটিতে এগিয়েছে৷ আইনের সরাসরি লঙ্ঘনের জন্য ৩২০০টি বিজ্ঞাপন বিভিন্ন নিয়ন্ত্রকদের সাথে শেয়ার করা হয়েছে, যেমন MIB, আয়ুষ এবং MahaRera৷ স্বাস্থ্যসেবার মতো বিষয়ের সঙ্গে জড়িত বিজ্ঞাপনগুলি সমস্ত নাগরিকের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য উদ্বেগ৷ অনলাইনে সর্বাধিক সংখ্যক লঙ্ঘনমূলক বিজ্ঞাপন দেখা গেলে, গ্রাহকদের সুরক্ষিত রাখতে বিজ্ঞাপনদাতা এবং প্ল্যাটফর্মগুলিকে নিয়ন্ত্রক এবং স্ব-নিয়ন্ত্রকদের সাথে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে হবে৷ এএসসিআই একাডেমি সম্প্রতি দায়িত্বশীল বিজ্ঞাপন এবং তার প্রভাবের উপর ই-লার্নিং কোর্সগুলি চালু করে ভোক্তাদের জন্য আরও বেশি শিল্পের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে৷