পিছিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস
আমিনুর রহমান, বর্ধমান, ১১ জুন — দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের নির্দেশ কার্যকর করতে বর্ধমানের কালনায় ভোট পর্যালোচনা করবে তৃণমূল কংগ্রেস। এমনটাই জানা গেছে দলীয় সূত্রে। এবার লোকসভা ভোটে বর্ধমান পূর্ব আসনে কালনা শহরে অনেকটাই পিছিয়ে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। আর এতেই দলের অন্দরে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। তবে কেন শহর এলাকায় সাধারণ ভোটাররা তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি। ভোটে কালনা মহকুমার অনান্য অঞ্চলে তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপিকে অনেকটা পিছনে ফেলেছে। ব্যাতিক্রম শহরের ওয়ার্ড গুলোতে। সিংহভাগ ওয়ার্ডে বিজেপি এগিয়ে বলে ফল প্রকাশের পর জানা গেছে। দলের এক শ্রেনীর নেতা নেত্রীরা বলছেন শহরের উন্নয়ন নিয়ে মানুষের ক্ষোভ মাথা চাড়া দেওয়াতে এ ফলাফল। আর তার জন্য পর্যালোচনা করে রিপোর্ট পাঠানো হবে শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে।
কালনা পৌরসভায় রয়েছে ১৮ টি ওয়ার্ড। গত পৌরসভার ভোটে শাসকের ভোট ব্যাংকে ভালো রকমের প্রাপ্তি ঘটে। কিন্তু ঠিক তার পরে এই লোকসভা নির্বাচনে শাসক শিবিরের ভোট পদ্ম শিবিরে বেশিরভাগ চলে যাওয়াতে অস্বস্তি এনে দিয়েছে তৃণমূল শিবিরে। কালনা পৌরসভার শীর্ষ নেতারা বিশেষ করে কাউন্সিলররা এ নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন। কারণ এরই মধ্যে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনের জন্য আগাম প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। ভোটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে শাসক তৃণমূল কংগ্রেস কালনা শহরে বিজেপির থেকে ২৬৫৬ ভোটের ব্যাবধানে এগিয়ে ছিল। কিন্তু তার পরে পৌরসভার ভোটে ১৮ টি ওয়ার্ড এর মধ্যে ১৭ টিতে দখল নেয় তৃণমূল কংগ্রেস। সদ্য লোকসভা ভোটে আবার শাসক শিবির পিছিয়ে ১২ টি ওয়ার্ডে। আর এখানেই প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে। বিধানসভা ভোটে ২৭ হাজারের ব্যাবধান কমিয়ে বিজেপি ৩০৪৭ ভোটে এগিয়ে। এমনকি বিধায়ক দেব প্রসাদ বাগ, শহর সভাপতি ও উপ পৌরপতির ওয়ার্ডেও এগিয়ে বিজেপি।
লোকসভা ভোটের নিরিখে কেন দলের এই পিছিয়ে পড়া তা নিয়ে রীতিমত চর্চা শুরু হয়েছে তৃণমূল শিবিরে। দলের শহর সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন মানুষজন যে আমাদের কাজকর্মে সন্তুষ্ট নন তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। তাই আগামী বিধানসভা ভোটের আগে এখন থেকে ভালো রকমের ভাবতে হবে। প্রায় একই কথা বলেছেন বিধায়ক দেবপ্রসাদ বাগ। তিনি বলেন এ ব্যাপারে পর্যালোচনা করা উচিত। যদিও দলের অন্দরে এই ফলাফল নিয়ে রীতিমত ক্ষোভ আছে। দলের মধ্যে গোষ্ঠী কোন্দল, পৌরসভার পরিষেবা ঠিকঠাক না দেওয়া এ সবের জন্য ভরাডুবি বলে দাবি তাদের। জেলার শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে এ ব্যাপারে জানিয়েও কোন লাভ হয়নি বলে অভিযোগ। তাই ফলাফল এত খারাপ হয়েছে বলে দাবি। তবে পদ্ম শিবিরের এই বাড়বাড়ন্ত নিয়ে সাধারণ কর্মীরা শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন। তাদের মতে কালনা শহরে যে ভাবে গোষ্ঠী বিবাদ টিকিয়ে রাখা হয়েছে তাতে ফলাফল খারাপ হবারই কথা। এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটাতে লোকসভা ভোটের প্রচারে এসে দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দোপাধ্যায় কড়া ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন।
পৃথকভাবে কালনা শহরে সকলকে এককাট্টা করে বৈঠকও করেন অভিষেক। কিন্তু দলের সাধারণ কর্মী সমর্থকরা বলেছেন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায় চলে যাবার পরও সংযত হতে দেখা যায় নি নেতাদের। আর তার জন্য ওয়ার্ড ভিত্তিক ফলাফল পিছিয়ে পড়ে তৃণমূল। এই অভিযোগ এর বার্তা নিয়ে অনেকেই সরব। বিষয়টি ওপর মহলের নেতৃত্বের কাছে পাঠানো হবে বলেও জানা গেছে।