ভোটের ফলাফলে বিজয়ী হলেও বর্ধমান পৌরসভায় পিছিয়ে তৃণমূল, বিধায়কের প্রতি ক্ষোভ দলেই
আমিনুর রহমান , বর্ধমান ,৭ জুন — বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা আসনে তৃণমূল কংগ্রেস জয়ী হলেও শহর এলাকায় অনেকটাই পিছিয়ে দল। আর এ নিয়ে দলের অন্দরে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন ওয়ার্ড ভিত্তিক ফলাফল প্রকাশ হবার পর দেখা যাচ্ছে, সিংহভাগ ওয়ার্ডে বিজেপি এগিয়ে আছে। দলের নেতা কর্মীদের বক্তব্য শহর বর্ধমানের ৩৫ ওয়ার্ডের দায়িত্ব নিয়েছিলেন বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস। বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভা এলাকা শহরের সব কটি ওয়ার্ড নিয়ে। কার্যত শহরের ভরাডুবি নিয়ে আঙ্গুল উঠেছে বিধায়কের বিরুদ্ধেই। একই সঙ্গে কালনা শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে শাসক দলের ভরাডুবির মধ্যেও কিছু ওয়ার্ডে দল জয়ী হয়েছে। তার মধ্যে দুটি ওয়ার্ডের মহিলা সভাপতিদের পদ থেকে আচমকা সরিয়ে দেওয়া নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেই জল্পনা শুরু হয়েছে। তাদের সরিয়ে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন শহর তৃণমূল।
এবার বর্ধমান লোকসভা আসনে জল্পনা ছিল বিজেপি এই আসন আগের মতোই দখলে রাখবে। গতবার এই আসনে বিজেপি প্রার্থী এস এস আলুওয়ালিয়া মাত্র দেড় হাজার ভোটে জয়ী হয়। কিন্তু এবার লড়াই জোরালো করতে বিজেপি তাদের হেভিওয়েট নেতা দিলীপ ঘোষকে প্রার্থী করে। কিন্তু কার্যত এই আসনে ব্যবধান বাড়িয়ে তৃণমূল কংগ্রেস জয়ী হয়েছে। যদিও বর্ধমানের দুটি আসনেই তৃণমূল এবার জয়ী। পূর্ব আসনে প্রত্যাশিত জয় পেয়েছে শাসক দল। কিন্তু দুটি আসনের ১৪ বিধান সভা এলাকায় এবার ভালো ভোটে জয়ী তৃণমূল। একমাত্র বর্ধমান পূর্ব আসনের কালনা শহর ও বর্ধমান দুর্গাপুর আসনে বর্ধমান শহরের ভোটের ঘাটতি রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের। আর এই ঘটনা নিয়েই শুরু হয়েছে দলের মধ্যে চাপান উতোর। পাশাপাশি দুটি আসনের ক্ষেত্রে বিধানসভা ভিত্তিক ফলাফল এতটাই ভালো যে, কোথাও আগের বারের তুলনায় দ্বিগুণ ভোট এসেছে শাসকদলের ঝুলিতে। জামালপুর, মন্তেশ্বর, পূর্বস্থলী, মেমারি সহ একাধিক এলাকায় ভোটের কান্ডারীরা বৈতরণী পার করে কর্মী সমর্থকদের কাছে সংবর্ধনা পাচ্ছেন। তার মধ্যে মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার, স্বপন দেবনাথ থেকে শুরু করে ব্লক নেতৃত্ব মেহেমুদ খান, ভূতনাথ মালিক, দিলীপ মল্লিক, জেলার মহিলা সভানেত্রী শিখা সেনগুপ্ত রয়েছেন। কিন্তু শুরু থেকে দায়িত্ব নেওয়া বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস-এর এলাকাতেই ভোট ব্যাংকে কেন টান, সে প্রশ্ন উঠেছে দলের অন্দরে। তার এলাকায় ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৮টিতে লিড বিজেপির। সূত্রের খবর, এব্যাপারে ইতিমধ্যেই ওই হিসাব পাঠানো হয়েছে কালীঘাটে। এব্যাপারে বিধায়ক শিবিরের পক্ষ থেকে কোনও মন্তব্য না আসলেও সকলেই এব্যাপারে বিধায়ককেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে ছাড়ছেন। জানা গেছে, বিধায়ক সব কিছু দায়িত্ব নেওয়ার জন্য দলের পুরনো দিনের নেতা নেত্রীদের খুব একটা দেখা যায়নি প্রচারে। এনিয়ে দলের নেতারা কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না। আগামী দিনে এ ধরনের কাজে নেতৃত্ব বদলের দাবি তোলা হয়েছে।
অন্যদিকে কালনাতেই দুই মহিলা তৃণমূল নেত্রীকে পদ থেকে অপসারণ নিয়ে কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। লোকসভা ভোটে কালনা শহরের ১৮ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১২ টি ওয়ার্ডে হেরেছে তৃণমূল। জয় পায় ছ’টি ওয়ার্ডে। এই জেতা ওয়ার্ডগুলির মধ্যে রয়েছে ১০ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড। এখানে তৃণমূল মহিলা ও পুরুষ কর্মীরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভোট প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তাতেই সাফল্য আসে দু’টি ওয়ার্ডে। কিন্তু এই দুটি ওয়ার্ডেই মহিলা সভাপতি ঊর্মিলা গায়েন ও রূপা দাসকে হঠাৎ করে বৃহস্পতিবার সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। রূপা দাস বলেন, দলকে মন থেকে ভালোবাসি। রাতদিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রচার করেছি। ওয়ার্ডে দল জিতেছে। হঠাৎ করে আমাদের দু’জনকে ওয়ার্ড সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল। আমরা বুঝতে পারছি না, দলকে জেতানোর জন্য পরিশ্রম করে এই ‘পুরস্কার’ কেন! যদিও শহর মহিলা তৃণমূল সভাপতি বলেন, ভোট প্রচারে ওরা দলের নির্দেশ মানেনি। তাই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার তথা জেলা আইএনটিটিইউসির সভাপতি সন্দীপ বসু বলেন, রূপার নেতৃত্বে মহিলারা যথেষ্ঠ পরিশ্রম করে ওয়ার্ডে দলের জয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে। এবিষয়ে জেলা মহিলা সভানেত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি আমাদের জানিয়েছেন, এরকম কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। এভাবে কাউকে সরিয়ে দেওয়া যায় না।