• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

মুখ্যমন্ত্রীর মানবিক উদ্যোগ

আজকাল প্রায় প্রতিদিনই মিছিল, মিটিং, শােভাযাত্রা এই শহরের স্বাভাবিক চলা বন্ধ করে দেয়।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (File Photo: Kuntal Chakrabarty/IANS)

আজকাল প্রায় প্রতিদিনই মিছিল, মিটিং, শােভাযাত্রা এই শহরের স্বাভাবিক চলা বন্ধ করে দেয়। আবার নিৰ্বাচন এলে, প্রতিযােগী রাজনৈতিক দলগুলির রােড শাে শহরের প্রাণকেন্দ্রে আঘাত করে। লােকারণ্য এই শহরের স্বাভাকি চলা বন্ধ হলে সাধারণ মানুষের অশেষ দুর্গতি নেমে আসে।

কত কাজ নিয়ে প্রতিদিন এই শহরে মানুষ বের হােন।শহরতলি থেকেও লক্ষ লক্ষ মানুষ শহরে ঢােকেন- তাদেরও থাকে নানা কাজ। সুতরাং মিছিল বের হলে, অথবা কোনও ভিভিআইপি’র আগমন উপলক্ষে, ট্রাফিক পুলিশকে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। উদ্দেশ্য, যান চলাচল যথাসম্ভব চালু রেখে মিছিলকে চলতে দেওয়া আর ভিভিআইপি’র চলা মসৃণ করা।

কিন্তু যে রাস্তায় এই যান নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তার প্রভাব পড়ে শহরের অন্যান্য রাস্তার ওপর। সেখানেও যান জটের ঠেলায় মানুষের দুর্ভোগ চরমে ওঠে। এ তাে এই শহরের নাগরিকদের প্রতিদিনের বিড়ম্বনা। শহর কোনও দিন মিছিলহীন হল, ভিভিআইপিদের আগমন নেই, তা ভাবাই যায় না। তাই এই বৃহৎ জনবহুল শহরের যানবাহন সমস্যা, নিত্যদিনের সমস্যা। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান নেই।

সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চেন্নাই সফর শেষে বিমানবন্দর থেকে নিজ আবাসে যাওয়ার পথে দেখতে পান, তাঁর কনভয়ের চলার জন্য যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর গাড়ি থেকে নেমে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশকে বলেন, প্রয়ােজন হলে তিনি অপেক্ষা করবেন, কিন্তু তাঁর জন্য সাধারণ মানুষের যাতাযাতে অসুবিধার সৃষ্টি হােক তা তিনি চান না। আগে সাধারণ মানুষ তারপর ভিআইপি। তিনি যান চলাচল শুরু করে দিয়ে নিজের গাড়িতে ওঠেন। মুখ্যমন্ত্রীর জনস্বার্থে এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

এটা তাে ঠিক ভিআইপিদের কনভয় আসার অনেক আগের থেকেই নির্দিষ্ট রাস্তায় যান চলাচল প্রায় বন্ধ করে রাখে পুলিশ। এরজন্য সংশ্লিষ্ট রাস্তায় অসংখ্য বাস, মিনিবাস, ট্যাক্সি, প্রাইভেট গাড়ি এবং অন্যান্য যান দাঁড়িয়ে পড়ে। যাত্রীরা অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে পড়ে। ভিআইপিদের কোনভয় আগে যাবে, তারপর আটকে থাকা গাড়িগুলি চলা শুরু করবে এই তাে চলে আসছে দিনের পর দিন। শহরের স্বাভাবিক চলা তাে ওই ভাবেই ব্যাহত হয়।

আগে সাধারণ মানুষ, তারপর ভিআইপি- মুখ্যমন্ত্রী বললেন, কারণ তিনি বুঝতে পারেন একটি বাস আটকে থাকলে ভিড়ে ঠাসা সেই বাসের যাত্রীদের এই গরমে কী দুঃসহ যাতনা হতে পারে। কিন্তু পুলিশ বা নিরাপত্তা কর্মীরা তা কী মানবে? এই যান নিয়ন্ত্রণ শুধু মুখ্যমন্ত্রীর বেলায় নয়, অন্যান্য ভিভিআইপিদের বেলাতেও। রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শহরে এলে তাে শহরে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে যান চলাচল স্তব্ধ করে দেওয়া হয়। তাই পুলিশের কথায়, আগে ভিভিআইপি, তারপর সাধারণ মানুষ।

ভিভিআইপিদের কনভয়ের চলাচল মসৃণ করতে পুলিশ কোনও ঝুকি নেবে না। যদিও পাইলট নিয়ে, হুটার বাজিয়ে, একাকি গাড়ির কনভয় নিয়ে, যাতায়াত মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দের নয়। কিন্তু তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি এমন হলেও, নিরাপত্তারক্ষীরা কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি নন। সুতরাং মুখ্যমন্ত্রী চাইলেও, তা হবার নয়, হয়ও না।

জ্যোতি বসু যখন মুখ্যমন্ত্রী, তখন একদিন বলেছিলেন তাঁর গাড়ি চলাকালে হুটার বাজুক, তা তিনি চান না- তাঁর গাড়ির বনেটে জাতীয় পতাকা উড়ক তাও তাঁর অপছন্দের ছিল। কিন্তু তিনি যখন মহাকরণ থেকে বের হয়ে ইন্দিরা ভবনে যেতেন, তখন তাঁর কনভয় চলার পুরাে রুটে অনেক আগে থেকেই যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হত। তেমনি ব্যবস্থা বহাল ছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বেলায়ও।

সুতরাং কলকাতা শহরে ভিভিআইপিদের আগমনের যেমন শেষ নেই, তেমনি মিছিলেরও শেষ নেই। তাই যান চলাচল স্বাভাবিক রাখা খুবই কঠিন। তবুও কলকাতা পুলিশ মিছিলের জন্য যানজট যতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, ভিভিআইপিদের বেলায় তা পারেনা, আর তা সম্ভবও নয়। কারণ তাতে নিরাপত্তার ঝুঁকি থেকে যায়। আর আজকাল তাে রাজ্য মন্ত্রীরাও হুটার বাজিয়ে চলাচল করেন। রাস্তায় চলা সাধারণ মানুষ যাতে বুঝতে পারেন মন্ত্রী গেলেন।