• facebook
  • twitter
Thursday, 19 September, 2024

‘ইকোসিস্টেম পুনরুদ্ধার’-ই বিশ্ব পরিবেশ দিবসের আহ্বান

হীরক কর ৫ জুন, বিশ্ব পরিবেশ দিবস৷ মানুষের সঙ্গে পরিবেশের অস্তিত্ব ওতপ্রোতভাবে জডি়য়ে রয়েছে৷ একটি ছাড়া অন্যটির বেঁচে থাকা সম্ভব নয়৷ অথচ, শিল্প বিপ্লবের পর থেকে ক্রমশ বেডে়ই চলেছে পরিবেশ দূষণ৷ সেই কথা মাথায় রেখেই শুরু হয় এই বিশেষ দিনটি পালন৷ এই দিনটি পালনের শুরু ১৯৭৩ সাল থেকে৷ প্রতি বছর কোনও না কোনও নতুন ভাবনা

হীরক কর

৫ জুন, বিশ্ব পরিবেশ দিবস৷ মানুষের সঙ্গে পরিবেশের অস্তিত্ব ওতপ্রোতভাবে জডি়য়ে রয়েছে৷ একটি ছাড়া অন্যটির বেঁচে থাকা সম্ভব নয়৷ অথচ, শিল্প বিপ্লবের পর থেকে ক্রমশ বেডে়ই চলেছে পরিবেশ দূষণ৷ সেই কথা মাথায় রেখেই শুরু হয় এই বিশেষ দিনটি পালন৷ এই দিনটি পালনের শুরু ১৯৭৩ সাল থেকে৷ প্রতি বছর কোনও না কোনও নতুন ভাবনা নিয়ে পালন করা হয় বিশ্ব পরিবেশ দিবস৷

প্রতি বছর ৫ জুন বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক কর্মোদ্যোগ আর জনসচেতনতার মাধ্যমে পরিবেশ সচেতনতার লক্ষ্যে পালিত হয় এই দিবস৷ এই দিনটিতেই রাষ্ট্রসংঘের মানবিক পরিবেশ সম্মেলন শুরু হয়েছিল৷ এই সম্মেলন হয়েছিল ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ৫ থেকে ১৬ জুন অবধি৷ ওই সম্মেলনে ওই বছরই চালু হয়ে ছিল রাস্ট্রসংঘের সাধারণ সভা৷ দিবসটি প্রথম পালিত হয় ১৯৭৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্পোকানে শহরে৷ ১৯৭৪ সালে “একমাত্র পৃথিবী” স্লোগান দিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয়৷ প্রতি বছরই বিশ্ব পরিবেশ দিবসে নির্দিষ্ট থিম থাকে৷ ২০২৪- এর থিম ছিল ‘ভূমি পুনরুদ্ধার, মরুকরণ এবং খরা স্থিতিস্থাপকতা’৷ সংক্ষেপে “ইকোসিস্টেম পুনরুদ্ধার”৷ আমাদের বাস্তুতন্ত্র-বন, জলাভূমি, মহাসাগর-জীবন ধারণের জন্য অত্যাবশ্যক৷ তবুও বন, জলাভূমি, মহাসাগর – মানুষের কার্যকলাপের জন্য প্রচুর চাপের সম্মুখীন৷ বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার মানে গাছ লাগানোর চেয়েও বেশি কিছু৷ যা প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া৷ কিন্ত্ত মানুষ প্রকৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে৷ এটাই জীবন ধারণকে টিকিয়ে রাখে৷

রাস্ট্রসংঘের কনভেনশন অনুসারে ,এই গ্রহের ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ভূমি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে৷ যা সরাসরি বিশ্বের অর্ধেক জনসংখ্যাকে প্রভাবিত করছে৷ বিশ্বব্যাপী জিডিপির প্রায় অর্ধেককে (৪৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার) বিপদের মুখে ফেলেছে৷ ২০০০ সাল থেকে খরার সংখ্যা এবং সময়কাল ২৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে৷ জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে খরা ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যার তিন-চতুর্থাংশকে প্রভাবিত করতে পারে৷

প্রতি বছর, বিশ্ব পরিবেশ দিবস ভিন্ন ভিন্ন দেশে আয়োজিত হয়৷ সেখানে সরকারীভাবে উদযাপন করা হয়৷ ভূমি পুনরুদ্ধার এবং মরুকরণ ও খরার বিরুদ্ধে অভিযোজন ক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে ২০২৪ সালের বিশ্ব পরিবেশ দিবস আয়োজন করেছে সৌদি আরব৷ রাস্ট্রসংঘের ষোড়শ অধিবেশনও ২ থেকে ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত সৌদি আরবের রিয়াদে অনুষ্ঠিত হবে৷ সৌদি আরব বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৪-এর থিম উদযাপন করবে “আমাদের ভূমি৷ আমাদের ভবিষ্যৎ”৷ এই থিমটি ভূমি এবং বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার, জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রয়োজনীয় সম্মিলিত প্রচেষ্টার উপর জোর দিয়েছে৷ ২০২৫ সালে কোরিয়া প্রজাতন্ত্র অর্থাৎ দক্ষিণ কোরিয়ায় বিশ্ব পরিবেশ দিবস সরকারীভাবে উদযাপন করা হবে৷

ইকোসিস্টেম হল জীবনের জটিল জাল৷ যা পৃথিবীর সমস্ত জীবন্ত প্রাণীকে বাঁচিয়ে রাখে ৷ বিস্তীর্ণ রেইনফরেস্ট থেকে বিস্তৃত মহাসাগর পর্যন্ত, প্রতিটি বাস্তুতন্ত্র আমাদের জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে, আমাদের বায়ু এবং জলকে বিশুদ্ধ করতে এবং মানুষ সহ অগণিত প্রজাতির জন্য বাসস্থান ও ভরণপোষণ প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ অথচ, বিশ্বজুডে় বাস্তুতন্ত্র গুলো অভূতপূর্ব হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে৷ বন উজাড়, দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অবৈধভাবে ভূমি ব্যবহারের অভ্যাস, উদ্বেগজনক হারে গুরুত্বপূর্ণ বাস্তুতন্ত্রের অবক্ষয় ও ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে ৷ এই অবক্ষয়ের পরিণতি সুদূরপ্রসারী৷ জীববৈচিত্র্য, মানব স্বাস্থ্য এবং আমাদের গ্রহের জলবায়ু ব্যবস্থার স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব ফেলছে৷ রাস্ট্রসংঘের মতে, “এই দিবসটি উদযাপন আমাদেরকে পরিবেশ সংরক্ষণ ও বর্ধিতকরণে ব্যক্তি উদ্যোগ, সম্মলিত মতামত এবং দায়িত্বশীল আচরণের ভিত্তি প্রসারিত করার সুযোগ তৈরি করে দেয়৷”

সুস্থ জীবনের জন্য পরিবেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ এটি আমাদের বায়ু, খাদ্য ইত্যাদি সরবরাহ করে৷ প্রাণী এবং মানুষের মধ্যে পার্থক্য হল যে প্রাণীরা পরিবেশের জন্য নিজেকে পরিবর্তন করে, কিন্ত্ত মানুষ নিজের জন্য পরিবেশ পরিবর্তন করে৷ পরিবেশ আমাদের প্রতিবেশীর মতো, এর আশেপাশের পরিস্থিতি আমাদের প্রভাবিত করে এবং উন্নয়নকেও পরিবর্তন করে৷

জীববৈচিত্র্য স্থলে এবং জলের নীচে সমস্ত জীবনকে বাঁচতে সাহায্য করে৷ মানুষের স্বাস্থ্যের প্রতিটি দিক এটির দ্বারা প্রভাবিত হয়৷ এটি বিশুদ্ধ বাতাস, জল , খাদ্য সরবরাহ করে; এবং প্রাণ দায়ী ওষুধ ইত্যাদির উৎস৷ বন উজাড়, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল দখল, জলবায়ু পরিবর্তনের ত্বরান্বিত হওয়ার মতো মানুষের কর্মকাণ্ড প্রকৃতিকে ভারসাম্য রক্ষা করতে দিচ্ছে না৷ বরং এটাকে প্রকৃতির সহ্য সীমার বাইরে ঠেলে দিয়েছে৷ সমস্ত অপরাধ হয়ত একসময় ক্ষমা করে দেওয়া যায়৷ কিন্ত্ত, প্রকৃতি কাউকে কখনও ক্ষমা করে না৷ ফলস্বরূপ, কেদারনাথ বা সিকিমে বিধ্বংসী ধ্বসের ঘটনা ঘটেছে৷ হিমবাহ ফেটে বেরিয়ে আসছে৷ পাহাড়ী নদীর আচমকা জলোচ্ছ্বাসে হাজারো লাখো মানুষের প্রাণহানি হচ্ছে৷

রাস্ট্রসংঘের মতে, প্রতি বছর প্রকৃতির যে চাহিদা তৈরি করে তা পূরণ করতে মানুষের আরও ১ দশমিক ৬ শতাংশ পৃথিবী লাগবে৷ যদি এভাবে চলতে থাকে তবে বিশাল জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করবে৷ যা খাদ্য ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় মারাত্মক প্রভাব ফেলবে৷ বন উজাড় এবং গাছ কেটে মরুকরণ, প্রাকৃতিক জল চক্রকে ব্যাহত করতে পারে৷ যা জলের অভাব এবং দূষণের দিকে নিয়ে যাবে ৷ এতে ডায়রিয়া, কলেরা এবং টাইফয়েডের মতো জলবাহিত রোগের ঝুঁকি বাড়ায়৷ যা শিশু এবং বয়স্কদের আরও বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে৷

ভূমির অবনতি ধুলো ঝড় বাড়াতে পারে, বাতাসে ক্ষতিকারক কণা নির্গত করে৷ এটি হাঁপানি, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) এবং ফুসফুসের সংক্রমণের মতো শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়৷ বায়ূ দূষণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ এবং এটা নিয়ন্ত্রণ করা জটিল৷ আমরা নিশ্বাস বন্ধ করতে পারি না৷ কিন্ত্ত আমরা যে বাতাস শ্বাস নিই তার গুণমান উন্নত করতে পারি৷ বিশ্বব্যাপী প্রায় ৯২ শতাংশ মানুষ পরিষ্কার বাতাসে নিশ্বাস নেয় না৷ বাতাসে ক্ষতিকর গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধির ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে৷ যা কলকাতায় বসে আমরা পরিস্কার বুঝতে পারছি৷ গ্রীষ্মের দিনে আকাশ মেঘলা৷ ফুরফুরে বাতাস বইছে৷ কিন্ত্ত কি অজানা কারণে সারা শরীর জ্বলে যাচ্ছে৷ চিড়বিড় করে ঘাম দিচ্ছে৷ আবহাওয়া বিঞ্জান অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে প্রতি বছর ৮ জুন বর্ষা আসার কথা৷ কিন্ত্ত, বর্ষাও কখনও পিছিয়ে, কোথাও বা এগিয়ে আসছে৷

পৃথিবীর উষ্ণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ সেই সঙ্গে পরিবর্তিত হচ্ছে পৃথিবীর জলহাওয়া৷ পরিবেশ দূষণের ফলে জলজ প্রাণীদের জলে থাকতে কষ্ট হয়৷ কারণ তারা পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন পায় না৷ উদ্ভিদরা সতেজ থাকতে পারছে না৷ আর পরিমন্ডলের এই সমস্ত কিছু পরিবর্তনের ফলে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানুষ৷ আর এইভাবে চললে প্রাণীজগত একদিন প্রায় শেষের পথে চলে যাবে বলে বিঞ্জানীদের সতর্কতা শোনা গেছে ইতিমধ্যেই৷

যদিও পৃথিবীর অর্ধেক অক্সিজেন আসে সমুদ্র থেকে৷ এবং একটি পরিপক্ক গাছ আমাদের বাতাসকে পরিষ্কার করে৷ ২২ কিলো কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে, বিনিময়ে অক্সিজেন ছেডে় দেয়৷ মানুষের ক্রিয়াকলাপের কারণে বিশ্বের অনেক মহাসাগরে অক্সিজেন হ্রাস ঘটছে, যার কারণে জলবায়ু পরিবর্তন সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র এবং মানব জীবনের জন্য একটি বড় হুমকির কারণ হয়ে দাঁডি়য়েছে৷ প্রতি বছরই বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় অন্ধ্র, ওডি়শা বা পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী জেলায় আছডে় পরছে৷

বন উজাড় করে, বন্য প্রাণীদের আবাসস্থলকে ব্যাহত করে, বন্যপ্রাণীকে মানব বসতির কাছাকাছি আসতে বাধ্য করা হচ্ছে৷ ফলে হাতি-মানুষে লড়াই, চিতাবাঘ বা লেপার্ড -মানুষে সংঘাত বাড়ছে৷ উত্তরবঙ্গ বা পশ্চিম-পশ্চিমবঙ্গে এতো নিত্য ঘটনা৷ বন্যপ্রাণী মানুষের কাছাকাছি এলে জুনোটিক রোগের সম্ভাবনা বাড়ায়৷ যা প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রামিত হয়৷

এক ধার থেকে গাছ কাটার ফলে মরুকরণ বাড়ছে৷ মরুকরণ একটি প্রক্রিয়া৷ যেখানে উর্বর জমি শুষ্ক এবং মরুভূমির মতো হয়ে যায়, মরুকরণ এই সমস্যা আরও বাডি়য়ে তোলে৷ খরা, অস্বাভাবিক শুষ্ক আবহাওয়ার সময়কাল বর্ধিত হয়, এই অঞ্চলে আরও ঘন ঘন এবং গুরুতর হয়ে ওঠে৷ এটি একটি চক্র তৈরি করে – মরুকরণ খরায় অবদান রাখে৷ খরা মরুকরণকে ত্বরান্বিত করে৷ ফলাফল বিধ্বংসী, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং জলের অভাবের কারণে বহু মানুষকে স্থানান্তরের দিকে ঠেলে দিচ্ছে৷ অথচ, মানুষ অধঃপতন ভূমিকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে৷ মাটিকে আরও উর্বর এবং বিস্তৃত শস্য চাষের জন্য উপযুক্ত করে তুলতে পারে৷ এটা খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করে এবং খাদ্যের বৈচিত্র্যকে উৎসাহিত করে, যা উন্নত পুষ্টি এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের দিকে নিয়ে যায়৷ স্বাস্থ্যকর জমি স্পঞ্জের মতো কাজ করে, বৃষ্টির জল শোষণ করে এবং ভূগর্ভস্থ জল পুনরায় পূরণ করে৷ এটি পরিষ্কার জলের উৎস নিশ্চিত করে এবং জলবাহিত রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে৷ পুনরুদ্ধার প্রকল্পগুলো জলাভূমি এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক পরিস্রাবণ ব্যবস্থা তৈরি করে, জলের গুণমানকে আরও উন্নত করতে পারে৷ ভূমি পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে গাছ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷

জলবায়ু পরিবর্তন রোধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা বাস্তবায়ন শুরু না করলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বড় বিপদে পড়বে৷ এটি প্রত্যেক ব্যক্তির দায়িত্ব৷ এবং সকলের উচিত আমাদের বিশ্বকে বাসযোগ্য করে তুলতে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণে অবদান রাখা৷ বিশ্ব পরিবেশ রক্ষায় প্রয়োজন, সকলের সহযোগিতা এবং সচেতনতা৷ গাছ কাটা বন্ধ করা, পাহাড় কাটা বন্ধ করা, যত্রতত্র আবর্জনা না ফেলা, গাড়ির কালো ধোওয়া বন্ধ করার চেষ্টা করা এবং যতটা সম্ভব পরিবেশকে পরিষ্কার রাখা যায় সেইদিকে খেয়াল রাখা৷

আমরা জানি যে প্লাস্টিক পুনঃব্যবহার করা সম্ভব নয়৷ তা নন-বায়োডিগ্রেডেবল৷ সুতরাং, এটা ব্যবহার না করাই ভাল৷ প্লাস্টিক বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ নিয়ে গঠিত যা বিষাক্ত বা হরমোন ব্যাহত করে৷ প্লাস্টিক ডাইঅক্সিন, ধাতু এবং কীটনাশক সহ অন্যান্য দূষণকারীর জন্য চুম্বক হিসাবেও কাজ করতে পারে৷ যা আমাদের বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি করে ৷ অতএব, প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে৷

রাষ্ট্রপুঞ্জের হিসেব অনুযায়ী, গোটা বিশ্বে গডে় ৪০ কোটি টনেরও বেশি প্লাস্টিক তৈরি হয়৷ কিন্ত্ত তার মধ্যে মোটে ১০ শতাংশ পুনর্ব্যবহারযোগ্য৷ বাকি প্লাস্টিকের বিরাট অংশ জলাশয়, নদী, সমুদ্রে এসে জমে থাকে৷ এর মধ্যে মাইক্রোপ্লাস্টিক খাবার, জল ও বাতাসের সঙ্গে মিশে যায়৷ ছডি়য়ে পডে় নানা ভাবে৷ কী ভাবে এই প্লাস্টিক-দৈত্যের মোকাবিলা করা যায়, কী ভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও বেশি করে এই নিয়ে কাজ করার জন্য উদ্দীপিত করা যায়, তা নিয়ে সকলেই ভাবতে হবে৷

পরিবেশকে নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাখার কথা শুধুমাত্র খাতায়, কলমেই সীমাবদ্ধ থাকে৷ আর বিশেষ বিশেষ দিন উদযাপনের জন্য স্লোগান তৈরি হয়৷ কিন্ত্ত আদতে কি আদৌ কোনও ফল পাওয়া যায়? কথায় আছে, আইন থাকলে, তার ফাঁকও থাকবে৷ আর মানুষ তো সেই ফাঁক খুঁজতে এক কথায় পারদর্শী৷ মানুষ যত উন্নয়নের পথে এগোচ্ছে, ততই নিজের জন্য বিপদ ডেকে আনছে৷ বছরভর গাছ লাগানোর ভাবনার বাস্তবায়ন নেই৷ একের পর এক গাছ কেটে সেখানে উঠছে বিরাট বিরাট ফ্ল্যাট৷ পাহাড় কেটে তৈরি হচ্ছে রির্সট৷ অরন্য কেটে পাঁচতারা হোটেল, থিমপার্ক৷

মানুষ এবং পরিবেশের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে৷ প্রকৃতি ছাড়া জীবন সম্ভব নয়৷ কিন্ত্ত মানুষ এই প্রকৃতির ক্ষতি করে চলেছে প্রতিনিয়ত৷ অজান্তে নয়, জেনে বুঝেই ঘটছে সব কিছু৷ অর্থাৎ মানুষ জ্ঞানপাপী ৷ আর তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগ এলে, তারও সম্মুখীন হতে হচ্ছে মানুষকেই৷ আয়লা,আমপান তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ৷ আর মানবজাতির এই গাফিলতির ফল ভুগতে হচ্ছে অন্যান্য প্রাণীকূলকেও৷ সুস্থ জীবনের জন্য প্রকৃতির সুরক্ষা এবং পরিবেশ রক্ষা করা আবশ্যিক৷

প্রতিবছর ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসে, আসুন আমরা পৃথিবীতে জীবনকে টিকিয়ে রাখে এমন বাস্তুতন্ত্র রক্ষা ও প#ুনরুদ্ধারের জন্য আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করি৷ আসুন আমাদের গ্রহের মুখোমুখি জরুরী পরিবেশগত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় সম্মিলিত পদক্ষেপ এবং উদ্ভাবনের শক্তিকে কাজে লাগাই৷ এবং আমাদের মনে রাখতে হবে যে আমাদের আজকের কর্মগুলো ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য আমরা যে বিশ্বকে রেখে যাচ্ছি তা গডে় তুলবে৷ আর এই ইকোসিস্টেম পুনরুদ্ধারে প্রাথমিক গুরুত্ব দিতে হবে সদ্য গঠিত হতে যাওয়া নতুন ভারত সরকারকেই৷ সে জন্য সুষ্ঠ রাজনৈতিক পরিবেশের পুনরুদ্ধারও প্রয়োজন৷