যতদিন যাচ্ছে বুথফেরত সমীক্ষার নামে প্রহসন সামনে আসছে৷ একই ধাঁচের ফল, তাই বুথফেরত সমীক্ষার ফল নিয়ে সংশয় ও প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে৷ ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল সব ক’টি সংস্থার এক্সিট পোলের পূর্বাভাসকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে৷ এখন থেকে বছর কুড়ি আগে ২০০৪ সালে ‘ইন্ডিয়া শাইনিং’ স্লোগান তুলেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী৷ জনপ্রিয় নেতার হাত ধরে বিজেপি ফের ক্ষমতায় ফিরবে, এ ব্যাপরে সংশয় ছিল না কোনও এক্সিট পোলের৷ ২৪০-২৭৫ আসন নিয়ে এনডিএ ক্ষমতা দখল করবে বলে পূর্বাভাসে জানানো হয়েছিল৷ কিন্ত্ত ফল মেলেনি মাত্র ১৮৭ আসন দখল করে এনডিএ৷ আর ২১৬ আসন পেয়ে মসনদে বসে মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বে ইউপিএ সরকার৷ এবারও এক্সিট পোলে প্রত্যেকেই এনডিএ-কে কমপক্ষে ৩৫০ আসনে জিতিয়েছিল৷ গোটা তিনেক সংস্থা তো ‘অব কি বার, ৪০০ পার’ স্লোগানের সঙ্গে সুর মেলাতে গিয়ে চারশোর বেশিও দিয়ে ফেলেছিল৷ কিন্ত্ত নির্বাচনী ফলাফল প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে দেখা গেল এক্সিট পোলের ভাঁওতাবাজি৷ পুরোটাই যে ম্যানুপুলেটেড তা স্পষ্ট বোঝা গেল৷ দেখা গেল, এনডিএ চারশো তো দূর অস্ত, তিনশোও টপকাতে পারলো না৷ এমনকি, বিজেপি একক গরিষ্ঠতাই হারাল৷ মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে চমক দেওয়ার মতো ফল করল ‘টিম ইন্ডিয়া’৷
এমনিতে বুথে ফেরত সমীক্ষাকারী সংস্থাগুলি বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণের মতো জানিয়ে দেয়, এই সমীক্ষায় ভোটারদের মনোভাবের একটা অাঁচ পাওয়া যেতে পারে, এটা চূড়ান্ত বা বাস্তব ফলের প্রতিফলন নয়৷
তাছাড়া ভারতের মতো বৈচিত্রপূর্ণ দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির সঙ্গে ভীতি ও গোপনীয়তার বিষয়টি এমন অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত যে ভোটারদের মনোভাবের কতটা প্রতিফলন এক্সিট পোলে উঠে আসে, তা নিয়ে অনেকেরই সংশয় আছে৷ তবে তার পরেও এবার একাধিক সংস্থার বুথফেরত সমীক্ষায় বেশকিছু তথ্যগত ভ্রান্তি রাজনীতিবিদদের চোখে পড়েছে৷ কোনও বুথফেরত সমীক্ষায় রাজস্থান, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশে মোট কতগুলি লোকসভা আসন রয়েছে, বিজেপির প্রাপ্ত আসনের সংখ্যা তার থেকে বেশি দেখানো হয়েছিল৷
কোনও বুথফেরত সমীক্ষায় আবার বিহারে লোক জনশক্তি পার্টি যতগুলি আসনে লড়াই করছে, তাদের ঝুলিতে প্রাপ্ত আসনের সংখ্যা তার থেকেও বেশি তুলে ধরা হয়েছিল৷ রাহুল গান্ধি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, অখিলেশ যাদব, সীতারাম ইয়েচুরির মতো ‘ইন্ডিয়া’র শরিক নেতারা আগেই দাবি করেছেন এইসব এক্সিট পোল বিশ্বাসযোগ্য নয়৷ এই বিতর্কের মধ্যেই বিশিষ্ট আইনজীবী প্রশান্তভূষণ দু’টি বুথফেরত সমীক্ষার ছবি তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেছেন৷ সেই পোস্ট অনুযায়ী, সংস্থার বুথফেরত সমীক্ষায় এনডিএ ৩৫৩-৩৬৭টি আসন পাচ্ছে দেখানো হয়েছিল৷ যদিও পরবর্তী সময়ে ওই সংস্থা আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স (এআই) ব্যবহার করে আর একটি বুথফেরত সমীক্ষার ফল প্রকাশ করে৷ সেখানে এনডিএ এক ধাক্কায় ৫০টি আসন কম পাচ্ছে দেখানো হয়েছে৷ এই এক্সিট পোল অনুযায়ী এনডিএ ৩০৫-৩১৫টি আসন পাচ্ছে৷ এই চিত্র তুলে ধরে আইনজীবী প্রশান্তভূষণের বক্তব্য, সমীক্ষার নামে এইসব প্রহসন করে ভোটারদের উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে৷
বুথফেরত সমীক্ষা এবার স্রেফ টিভি সিরিয়ালের মতো বিনোদনে পরিণত হয়েছে৷ সমীক্ষার বিধিবদ্ধ প্রক্রিয়া মেনে কতগুলি এক্সিট পোল হয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে৷ সেই কারণে ফলাফলের সংশোধন, ত্রুটি দেখা গিয়েছে৷ আসলে বুথফেরত সমীক্ষার জগতে বিভিন্ন ধান্দার লোক এসেছে৷ মাঠে নেমে আদৌ সমীক্ষা হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থেকে যায়৷ সমীক্ষার স্যাম্পেল সার্ভের চরিত্র কেমন, কেউই বলে না৷ সার্বিকভাবে বুথফেরত সমীক্ষার বিশ্বাসযোগ্যতা যে একবারে তলানিতে ঠেকে গিয়েছে, এবারের ভোটে তা আরও একবার প্রমাণিত হল৷