প্রশান্ত দাস: চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের কাছে তুরুপের তাস ছিল তাঁরই মস্তিস্ক প্রসূত ‘ডায়মন্ড হারবার মডেল’৷ এই মডেলকে সামনে রেখেই নিজ কেন্দ্রে নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছিলেন ডায়মন্ড হারবারের বিদায়ী সাংসদ তথা তৃণমূল প্রার্থী অভিষেক বন্দোপাধ্যায়৷ লক্ষমাত্রা রেখেছিলেন ৪ লক্ষ৷ ১লা জুন মিটেছে এই কেন্দ্রের ভোট৷ তুলনামূলক শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হলেও কিছু বুথ অশান্ত হতে দেখা গিয়েছিল এদিন৷ কিন্ত্ত সেই অশান্তিকে নিজ হাতে দমন করেছেন তৃণমূল সেনাপতি অভিষেক তথা তাঁর সেনাবাহিনী৷
তবে সমালোচনা করতে পিছপা দেয়নি বিরোধীরা৷ ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রের ৪০০-র বেশি বুথে পুনর্নির্বাচনের দাবি তুলে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে পদ্মশিবির৷ বিজেপির দাবি, ওই বুথগুলিতে ভোটগ্রহণ স্বচ্ছভাবে হয়নি৷ অনেক বুথে অবাধে ছাপ্পা ভোট দেওয়া হয়েছে৷ অভিযোগ, ভুঁয়ো ভোটও পডে়ছে অনেক বুথে৷ বিজেপির অভিযোগ, ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রের ফলতা বিধানসভার সব ক’টি বুথে কারচুপি হয়েছে, পাশাপাশি বজবজ, মহেশতলা বিধানসভার দিকেও উঠেছে আঙ্গুল৷ যদিও বাস্তব চিত্রটা অন্যরকম৷ দেখা যায়, ভোটের দিন সকাল থেকে দফায় দফায় জনসাধারণের বিক্ষোভের মুখে পড়েন ডায়মন্ড হারবারের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ দাস ওরফে ববি৷ কখনও তাঁর গাড়ি আটকে দেওয়া হয়েছে, আবার কখনও তাঁকে ঘিরে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দেন সাধারণ জনতা৷ গ্রামের মহিলারা অভিজিৎকে লক্ষ করে বলতে থাকেন, ‘‘আমরা ১০০ দিনের টাকা চাই৷ এখানে তো শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হচ্ছে, তিনি কেন আসবেন?’’
যদিও এই পুনর্নির্বাচনের দাবি ন্যাসাৎ করেছেন অভিষেক৷ তাঁর ভাষায়, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ভাবেই হয়েছে৷ দু-এক জায়গায় গন্ডগোল হলেও তা সামাল দেওয়া হয়েছে তৎক্ষণাৎ৷ নির্বাচনের দিন বিরোধী দলের প্রার্থীরা যদি জনরোষের মুখে পড়েন, সেই সূত্রে পুনর্নির্বাচনের দাবি তোলা অযৌক্তিক৷ সন্দেশখালিতেও বিজেপি চক্রান্ত করে মহিলাদের বাধ্য করেছিল ভুয়ো অভিযোগ করতে৷ বিজেপি সেটিকে ‘মহিলাদের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন’ বলে চালিয়েছিল৷ তাহলে এখন এই বিজেপিই কেন তাঁদের প্রার্থীর বিরুদ্ধে জনসাধারণের রোষকে তৃণমূলের বিক্ষোভ বলে দাবি করছে? সেই প্রশ্নই তুলে বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন অভিষেক সহ অন্যান্য তৃণমূল নেতৃত্বরা৷ এই কেন্দ্রে তুলনামূলক শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলেও পুনর্নির্বাচনের দাবি বিরোধীদের! অভিষেকের ‘ডায়মন্ড হারবার মডেল’-কে ভয় পেয়েই ক্রমাগত ব্যাকফুটে যাচ্ছে এই কেন্দ্রের বিরোধীরা, মত রাজনৈতিক মহলের৷
২০১৪ সালে প্রথমবার অভিষেক দিল্লি দখলের লড়াইয়ে নামেন ডায়মন্ড হারবার থেকে, সেসময় তিনি জিতলেও তাঁর ভোট ব্যবধান থাকে মাত্র ৭১ হাজার৷ পাঁচ বছর ঘুরতেই ২০১৯ সালে সেই ব্যবধান পাড় করে ৩ লক্ষ৷ উল্লেখ্য, তখনও জন্ম নেয়নি ডায়মন্ড হারবার মডেল৷ এরপর আসে মানব ইতিহাসের এক কঠিন পর্যায়, করোনা অতিমারী৷ সেই কঠিন সময়েও দিনরাত জনসেবায় নিযুক্ত থেকে দৃষ্টান্ত গড়েন বছর ৩২ এর অভিষেক৷ সে সময় তাঁর হাত ধরেই জন্ম নেই ডায়মন্ড হারবার মডেল, যার জয়যাত্রা এখনও বর্তমান৷ এবার ভোট ব্যবধান ৪ লক্ষ করার আর্জি অভিষেক জানিয়েছেন তাঁর পরিবার অর্থাৎ ডায়মন্ড হারবারবাসীর কাছে৷ স্বাভাবিকভাবে, ডায়মন্ড হারবারের যাবতীয় উন্নয়নে মানুষ অভিষেক-বিমুখ হবেন না, তা নিঃসন্দেহে বলাই যায়৷ অভিষেকের ভাষায়, ‘‘জয় আমার নিশ্চিত৷ ব্যবধান বাড়ানোর লড়াই শুধু৷ ডায়মন্ড হারবারের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভার মধ্যে কে এগিয়ে থাকবে তার লড়াই৷’’
কেবল আদর্শ সাংসদ নন, পাশাপাশি আদর্শ ‘লিডার’ এর দায়িত্ব পালন করেছেন অভিষেক৷ গণনার দিন অর্থাৎ আজ গণনাকেন্দ্রগুলি আঁকড়ে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন নিজ দলীয় নেতৃত্ব, কর্মী এবং অবজার্ভারদের৷ প্রতি গণনাকেন্দ্রে অবজার্ভার পাঠাচ্ছেন অভিষেক৷ ব্যতিক্রম হবে না তাঁর নিজ কেন্দ্রও৷ বিভিন্ন জনসভা থেকেও যুবরাজ স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, গণনার দিন তিনি নিজ আমতলার অফিসেই উপস্থিত থাকবেন৷ নজরদারি রাখবেন সব কেন্দ্রের ওপর৷ বিরোধীদের প্ররোচনা এবং এক্সিট পোলের ভুয়ো তথ্যে পা না দিয়ে প্রার্থীদের আত্মবিশ্বাসী থেকে ভোট গণনার দিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সেনাপতি৷ ডায়মন্ড হারবারে অভিষেকের জয় যে কেবল সময়ের অপেক্ষা, তা নিশ্চিত৷ এমনকি বুথফেরৎ সমীক্ষাও তাই বলছে৷ অন্যদিকে নির্বাচনের দিন ডায়মন্ড হারবারে যে বিজেপি-বিরোধী চিত্র সামনে এসেছে, তাতে অভিষেকের জয়ই স্পষ্ট৷