বাসুদেব ধর, ঢাকা ০২ জুন– দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে পুলিশের প্রাক্তন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের বিপুল সম্পদের তথ্য বেরিয়ে আসার পর থেকে তাকে নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা চলছে৷ দুর্নীতির জন্য তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর দাবি উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে৷ তবে বেনজীর আহমেদ এখন কোথায় আছেন, সে বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কারও কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না৷ তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে, বেনজীর আহমেদ দেশে নেই৷
বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের নামে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, ঢাকাসহ কয়েকটি জেলায় ৬২১ বিঘা জমি, ঢাকার গুলশানে ৪টি ফ্ল্যাট, ৩৩টি ব্যাঙ্ক হিসাব, ১৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ৩টি বিও হিসাব (শেয়ার ব্যবসা করার বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট) এবং ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রের সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন৷ কমিশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এসব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দিয়েছে আদালত৷
আদালতের ওই আদেশ আসার আগেই বেনজীর আহমেদ স্ত্রী ও তিন কন্যাসহ দেশ ছেড়েছেন বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওই সূত্র জানিয়েছে৷ তিনি বলেন, বিভিন্ন মহলে আলোচনা আছে বেনজীর আহমেদ এখন সিঙ্গাপুরে আছেন৷ তবে তিনি আসলেই সিঙ্গাপুর আছেন নাকি অন্য কোনো দেশে আছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, বেনজীর দেশে আছেন নাকি চলে গেছেন, সে ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না৷
এদিকে সংবাদ মাধ্যমে গতকাল আরও তথ্য বেরিয়েছে যে, পুলিশের প্রাক্তন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুরে প্রায় ৬০০ বিঘা জমি কেনা হয়েছে৷ এসব জমির প্রায় সবই হিন্দু সম্প্রদায়ের৷ হিন্দুরা বলছেন, জমি বিক্রি ছাড়া তাদের কোনো উপায় ছিল না৷ ভয় দেখিয়ে, জোর করে এবং নানা কৌশলে তাদের কাছ থেকে জমিগুলো কেনা হয়েছে৷ এই দুই জেলা হিন্দু অধু্যষিত৷
গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুরে গিয়ে জমি বিক্রি করা হিন্দু পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের জমি কিনতে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে নিয়োজিত রেখেছিলেন বেনজীর আহমেদ৷ বেনজীর আহমেদ এসব জমি কেনার কাজটি করেছেন আইজিপি (২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর) ও র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক থাকার সময়ে (২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের এপ্রিল)৷
আজ খবর বেরিয়েছে, বেনজীর বঙ্গোপসাগরের প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিন ও কক্সবাজারের ইনানী সৈকতেও স্ত্রী ও মেয়েদের নামে জমি কিনেছেন৷
সাংবাদিকরা বেনজীর আহমেদের গুলশান-১ নম্বরের বাড়িতে গিয়ে তাদের কাউকে পাননি৷ সেখানে বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী সবুজ মিয়া জানান, দুই সপ্তাহ ধরে বেনজীর আহমেদকে তিনি দেখেননি৷ পুলিশের প্রাক্তন এই শীর্ষ কর্মকর্তা ও তার পরিবারের কেউ বাড়িতে আছেন কি না, সে বিষয়েও তিনি নিশ্চিত নন৷
এ ছাড়া গোপালগঞ্জে বেনজীর আহমেদের পরিবারের মালিকানাধীন সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্কে গেলেও সেখানকার কেউ তার অবস্থান সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেননি৷
বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইজিপি ছিলেন৷ এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন৷ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র৷ ওই সময় র্যাবের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের পাশাপাশি এই বাহিনীর প্রাক্তন কর্মকর্তারাও নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিলেন৷ যার মধ্যে বেনজীর আহমেদের নামও ছিল৷ যুক্তরাষ্ট্র যখন নিষেধাজ্ঞা দেয়, তখন আইজিপির দায়িত্বে ছিলেন বেনজীর আহমেদ৷