মোদির ‘গ্যারান্টি’ শব্দটি এবার নির্বাচনে আমরা বহুবার শুনেছি৷ এর কপিরাইট দাবি করতে পারে বিজেপি৷ কিন্ত্ত শাসক দলের পাশাপাশি কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম-সহ কম-বেশি সব দলের নেতা-মন্ত্রীর ভাষণে কোনও না কোনও সময় শব্দটির ব্যবহার হতে দেখা গিয়েছে৷ বিজেপি নেতারা এবং স্বয়ং নরেন্দ্র মোদি বারে বারে বলেছেন, ‘মোদির গ্যারান্টি’র কথা৷ এবারের ভোটে পদ্ম শিবিরের ইস্তাহারও আসলে মোদির গ্যারান্টি হিসাবেই প্রকাশ পেয়েছে৷
কিন্ত্ত শেষ কয়েক দফার ভোট প্রচারে নরেন্দ্র মোদির ‘উত্তরসূরি’ (!) কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকেও গ্যারান্টি বিলোতে দেখা গেল৷ নরেন্দ্র মোদির দক্ষিণ হস্ত বলে পরিচিত অমিত শাহ বিভিন্ন সভায় কখনও বিজেপি তো কখনও এনডিএ প্রার্থীদের নাম করে জনতাকে গ্যারান্টি দিচ্ছেন৷ বলছেন, ইনি জিতলে অনেক বড় জায়গায় দেখা যাবে৷ আমি সেই গ্যারান্টি দিচ্ছি৷ শাহ স্পষ্ট না করলেও কারও বুঝতে বাকি থাকছে না তিনি আসলে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক অথবা পার্টির উচ্চপদে বসানোর আশ্বাস বিলোচ্ছেন৷
অমিত শাহর ভাষণের এই দিকটি এখন আর গোপন নেই বিজেপিতেও৷ ফলে রীতিমতো আলোচনা শুরু হয়েছে দলের অভ্যন্তরে৷ মোদির অতি বিশ্বস্ত অমিত শাহ কি তাঁর নেতাকেও দল ও সরকারে তাঁর ক্ষমতা নিয়ে বার্তা দিচ্ছেন৷ নাকি মোদির উত্তরসূরি হওয়ার লক্ষ্যে এখন থেকেই ঘঁুটি সাজাতে শুরু করেছেন অমিত শাহ৷ তবে মোদির উত্তরসূরি কে তা নিয়ে বিজেপিতে প্রকাশ্যে কোনও আলোচনা শোনা যায়নি৷ দল ও প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে ৭৫ বছর পর্যন্ত থাকা যাবে বলে দলে এক অলিখিত নিয়ম চালু আছে৷ আগামী বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর মোদির বয়স ৭৫ পূর্ণ হবে৷ এবার ফের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পেলে তিনি ৭৫-এ পা দেওয়া মাত্র প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যাবেন, এমন ইঙ্গিত অবশ্য মোদি দেননি৷ বরং তাঁকে ঈশ্বর পাঠিয়েছেন বিশেষ কাজের জন্য এবং পরমাত্মা ২০৪৭-এ বিকশিত ভারত তৈরির সংকল্প তাঁকে দিয়ে পূরণ করাতে চান বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বিজেপি এবং আরএসএসের অন্দরেও জল্পনা উসকে দিয়েছেন তাঁর অবসর নিয়ে৷
তবে মোদি ফের প্রধানমন্ত্রী হয়ে পুরো পাঁচ বছর দায়িত্বে থাকলেও তাঁর উত্তরসূরি বাছাই নিয়ে আলোচনাই শুধু নয়, সম্ভাব্য নেতাকে তৈরির প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে যাবে৷ তবে তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে মন্ত্রিসভা৷ অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর পর দ্বিতীয় কোনও ব্যক্তির প্রভাব এবং কার অনুগামীর মন্ত্রিসভায় বেশি সংখ্যায় স্থান পান সেটা সম্ভাব্য উত্তরসূরি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ইঙ্গিত বলে গুরুত্ব পাবে৷ বিজেপির অন্দরে জল্পনা শুরু হয়েছে, শাহ কি সেই প্রক্রিয়ায় শুরু করেছেন? প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি নিয়েই কি এগোচ্ছেন তিনি? শুধু কেন্দ্রীয় মন্দ্রিসভাই নয়, দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী করার আভাসও থাকছে তাঁর কথায়৷ যেমন বিহারের নেতা নিত্যানন্দ রাই কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী৷ বিহারে তাঁর হয়ে প্রচারে গিয়ে শাহ বলেছিলেন, ‘রাই আমার পরম-বন্ধু৷ আমাদের বোঝাপড়া অতুলনীয়৷ একথা ঠিক, সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সংক্রান্ত বেশিরভাগ প্রশ্নের জবাব রাই দিয়ে থাকেন৷ তাঁকে দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকেন শাহ৷ বিহারের রাজনৈতিক মহল মনে করছে, শাহ আসলে আগামী বছর বিহার বিধানসভার ভোটে রাইকে মুখ্যমন্ত্রী পদে প্রার্থী করার ইঙ্গিত দিতেই তাঁর সম্পর্কে বলেছেন, ‘বহত বড়া পদ মে দিখেঙ্গে৷’
শাহ যে সেটা পারেন তার প্রমাণ ছত্তিশগড়৷ গত বছর সেখানে বিধানসভার প্রচারে বিজেপি প্রার্থী তথা দলের আদিবাসী নেতা বিষ্ণুদেও সাঁই সম্পর্কে শাহ বলেছিলেন, ওঁকে জেতান৷ আমরা সরকার গড়তে পারলে ওঁকে অনেক বড় পদে বসাবো৷’ ফল প্রকাশের পর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংয়ের মতো পোড় খাওয়া নেতাকে সরিয়ে সাঁইকে মুখ্যমন্ত্রী করে বিজেপি৷
উত্তরপ্রদেশে অনেকদিন ধরে শাহ নিজের টিম তৈরি করছেন৷ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য বিতর্কিত অজয় মিশ্র বা টেনিকে সমর্থন করে বার্তা দিতে চেয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ যোগীকেও৷ মিশ্রকে হয় ক্যাবিনেটে মন্ত্রী করা হতে পারে, নয়তো, মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী হিসাবে যোগীর সমান্তরালে রাজ্যে কাজের সুযোগ করে দেওয়া হতে পারে৷
বিজেপি এবং রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, অমিত শাহ আসলে নিজে থেকেই আগামী দিনে তাঁর রাজনৈতিক গুরুত্ব বৃদ্ধির আভাস দিতে শুরু করেছেন৷ বিজেপির অন্দরে এই আলোচনাও আছে, মোদি তৃতীয়বার ক্ষমতা দখল করতে পারলেও কাজের ভার কমিয়ে দেবেন বয়সের কারণে৷ যদিও তিনি নিজেই দাবি করেছেন, ‘৭৩ পেরিয়েও তাঁর খাটাখাটনি করার শক্তি অফুরন্ত৷ এটা ঈশ্বরের আশীর্বাদ৷’