ইসলামাবাদ, ১ জুন – ‘অধিকৃত কাশ্মীর পাকিস্তানের অংশ নয়’, সম্প্রতি এক মামলায় ইসলামাবাদ হাই কোর্টে এ কথা স্বীকার করে নিল পাকিস্তান সরকার। পাক অধিকৃত কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের রাজনীতি যখন সরগরম ঠিক তখন শাহবাজ শরিফ সরকারের বার্তায় স্বাভাবিকভাবেই শোরগোল পড়ে গেছে। ইসলামাবাদ হাই কোর্টে শুক্রবার জমা দেওয়া হলফনামায় প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সরকার নিযুক্ত অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে বলেছেন, ‘‘কাশ্মীরের যে অংশ থেকে কাশ্মীরি কবি এবং সাংবাদিক আহমেদ ফারহাদ শাহকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে, তা পাকিস্তানের অংশ নয়, বিদেশি ভূখণ্ড।’’
কাশ্মীরের বিখ্যাত কবি আহমেদ ফারহাদকে গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই জোর করে ধরে নিয়ে গিয়ে কোনও গোপন জায়গায় আটকে রেখেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।তাঁকে আদালতে পেশ করার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। সেই আবেদনের শুনানিতে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সরকার নিযুক্ত অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে একথা বলেছেন।
১৯৪৮ সালে হামলা চালিয়ে তৎকালীন রাজন্যশাসিত রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীরের একাংশ বেআইনি ভাবে দখল করেছিল পাকিস্তান। জম্মু ও কাশ্মীরের রাজা হরি সিংহ ভারতভুক্তি চুক্তি সইয়ের পর পাকিস্তানের জবরদখল করা ভূখণ্ডের একাংশ মুক্ত করেছিল ভারতীয় সেনা। কিন্তু বাকি অংশ পাকিস্তানের দখলে থেকে যায়। সেখানে পৃথক আইনসভাও গঠিত হয় পাক সরকারের তত্ত্বাবধানে।
এই পরিস্থিতিতে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের স্বাধীনতাপন্থী সাংবাদিক ফারহাদের গ্রেফতারি নিয়ে মামলায় সরকারি আইনজীবীর মন্তব্য ঘিরে হৈচৈ শুরু হয় । ইসলামাবাদ হাই কোর্ট ফারহাদকে হাজির করানোর নির্দেশ দিলে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল যুক্তি দেন, যে হেতু পাক অধিকৃত কাশ্মীর একটি বিদেশি ভূখণ্ড তাই ধৃত ফারহাদকে ইসলামাবাদ হাই কোর্টে হাজির করানো যাবে না। কিন্তু সেই জবাবে সন্তুষ্ট না হয়ে আদালত প্রশ্ন তোলে— ‘‘যদি তা বিদেশ ভূখণ্ডই হবে তো কোন অধিকারে সেখানে প্রবেশ করে পাক সেনা এবং রেঞ্জার্স বাহিনী শিবির বানায়? কোন অধিকারে বিদেশি নাগরিককে গ্রেফতার করে?’’তার কোনও উত্তর দিতে পারেনি পাক সরকার। এদিকে এই ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই তোলপাড় শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, পাকিস্তানের এই বক্তব্যকে হাতিয়ার করে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ফের সরব হতে পারে ভারত। কারণ ভারতের তরফে রাষ্ট্রসংঘের মঞ্চে বারবার স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, অধিকৃত কাশ্মীর ভারতের অংশ ছিল, আছে এবং থাকবে।
অস্বাভাবিক হারে কর বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি-সহ একাধিক বিষয় নিয়ে পাক সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন শুরু করেছে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের নাগরিকরা। বিক্ষোভ থামাতে তথৈবচ অবস্থা পাক সরকারের। এই পরিস্থিতিতে চলছে ব্যাপকহারে ধড়পাকড় চলছে । অধিকৃত কাশ্মীরে জেলবন্দী হয়েছেন সাংবাদিক তথা কাশ্মীরী কবি আহমেদ ফারহাদ শাহ। এই সংক্রান্ত এক মামলায় ফারহাদকে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে হাজির করানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি। এর প্রেক্ষিতেই পাক সরকারের আইনজীবী স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, ‘ফারহাদ বর্তমানে কাশ্মীরের পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। যা বৈদেশিক অঞ্চলভুক্ত। ওই অঞ্চল কোনওভাবেই পাকিস্তানের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার আওতায় আসে না।’
উল্লেখ্য, ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুধু করে বিজেপির ছোট বড় নেতারা দাবি করেছেন, তৃতীয়বারের জন্য মোদি সরকার ক্ষমতায় এলে ৬ মাসের মধ্যে পাক অধিকৃত কাশ্মীর ভারতের অংশ হবে। এই পরিস্থিতিতে পাক সরকারের নয়া দাবি ভারতের হাতে নয়া অস্ত্র বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহল।