দিল্লি, ৩১ মে – কেরলে বর্ষা ঢুকে গেলেও তীব্র তাপপ্রবাহে দগ্ধ হচ্ছে দেশ। তাপপ্রবাহের দাপটে দেশে ৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রবল গরমে গত ৪৮ ঘন্টায় বিহারে মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের, যার মধ্যে ৮ জন ভোট-কর্মী । তাপপ্রবাহের জেরে ওড়িশায় বৃহস্পতিবার মৃত্যু হয়েছে ৩১ জনের। একই কারণে ঝাড়খণ্ডের পালামৌ ও রাজস্থানে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের সুলতানপুরে মৃত্যু হয়েছে ১ জনের। এর সব মিলিয়ে এবার তাপপ্রবাহে দেশের এই অংশে মৃত্যু হল ৫৪ জনের। দিল্লিতে ৫২.৯ ডিগ্রির পর মহারাষ্ট্রের নাগপুরের তাপমাত্রা পৌঁছল ৫৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। নাগপুরে চারটি স্বয়ংক্রিয় আবহাওয়া স্টেশন রয়েছে। সেখানে এই অস্বাভাবিক পারদ চড়ে যায় যা নিয়ে স্তম্ভিত আবহাওয়া দফতরের আধিকারিকরা।
বিহার, ওড়িশা, রাজস্থানের মতো হরিয়ানার মতো উত্তরপ্রদেশে, মধ্যপ্রদেশের রাজ্যেগুলিতেও একাধিক জায়গার তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি পার করেছে। আর তার ধাক্কাতেই পর পর মৃত্যুর ঘটনায় বাড়ছে আতঙ্ক।
উত্তর-পশ্চিম দিল্লির মুঙ্গেশ্বরে বুধবার সর্বকালের রেকর্ড ভেঙে তাপমাত্রা পৌঁছে যায় ৫৩ ডিগ্রির কাছাকাছি। এবার সেই রেকর্ডকেও ভেঙে দিল নাগপুর। মুঙ্গেশ্বর গ্রামের জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ে একটি স্বয়ংক্রিয় আবহাওয়া স্টেশনে এই তাপমাত্রা দেখা যায়। এবার আইএমডি বা দেশের আবহাওয়া দফতর এই হিসাবগুলি খতিয়ে দেখা শুরু করেছে।নাগপুরের রামদাসপীঠে একটি চাষের মাঠে রাখা তাপমাত্রা পরিমাপকে ৫৬ ডিগ্রি তাপমাত্রা ধরা পড়েছে। সোনেগাঁওয়ে অবস্থিত অন্য যন্ত্রে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫৪ ডিগ্রি।
এদিকে স্থানীয় আবহাওয়া অফিসের আধিকারিকরা জানিয়েছেন স্বয়ংক্রিয় আবহাওয়া স্টেশনগুলি ৩৮ ডিগ্রির উপরে তাপমাত্রা চলে গেলে ঠিক তথ্য দেয় না। আবহাওয়া আধিকারিকরা জানান, এডব্লুএস সেন্সর ইউরোপীয় দেশগুলি থেকে আমদানি করা হয়েছে। যেখানে ভারতীয় শহরগুলির মতো তাপমাত্রা এতটা উপরে ওঠে না। তাই সেখানকার মেশিনগুলির কার্যক্ষমতাও ওর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।
এই পরিস্থিতিতে আবার চোখ রাঙাচ্ছে ধুলোঝড়ের আশঙ্কা। শুক্রবার উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, চণ্ডীগড় ও দিল্লিতে ঝড়ের পূর্বাভাস রয়েছে। উত্তরপ্রদেশে ধুলোঝড়ের পূর্বাভাস রয়েছে শনিবারও। সেই সঙ্গে উত্তর পশ্চিম ভারতের বিভিন্ন স্থানে রবিবার পর্যন্ত বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
এদিকে দিল্লি সরকারের তরফে আর্জি জানানো হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট যেন প্রতিবেশী তিন রাজ্যের সরকারকে নির্দেশ দেয় একমাসের জন্য দিল্লিতে বাড়তি জল সরবরাহের। পাশাপাশি বিজেপির কাছেও কেজরিওয়াল আর্জি জানান, এই জলসংকট মেটাতে সাহায্যের হাত বাড়ানোর জন্য। গত কয়েক দিন ধরে রাজধানীর প্রবল দাবদাহ আগের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। সেখানকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছে যায় ৫২.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা দেশের সর্বকালের সর্বোচ্চ। মৌসম ভবন জানিয়েছিল, উত্তর-পশ্চিম দিল্লির মুঙ্গেশপুরের স্বয়ংক্রিয় আবহাওয়া কেন্দ্রে বুধবার এই তাপমাত্রা পাওয়া যায়। আগামী কয়েক দিনেও তাপপ্রবাহের হাত থেকে মুক্তি পাবেন না দিল্লিবাসী, জানিয়েছে মৌসম ভবন। এই তীব্র গরমে জলসঙ্কট দেখা দিয়েছে শহরের বিভিন্ন এলাকায়। যা মেটাতে তিন প্রতিবেশী রাজ্যের সাহায্য চায় দিল্লি। সুপ্রিম কোর্টে দিল্লি সরকারের তরফে যে মামলা করা হয়েছে, সেখানে হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ এবং হিমাচল প্রদেশ থেকে বাড়তি জল চাওয়া হয়েছে।