নিজস্ব প্রতিনিধি— নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছিল বাংলাদেশের আওয়ামি লিগের সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনারকে৷ শুধু খুন করাই নয়, তথ্যপ্রমাণ মুছে ফেলতে লোপাট করা হয়েছিল তাঁর দেহ৷ হাড়হিম করা এই হত্যাকাণ্ড নাড়িয়ে দিয়েছে সমাজকে৷ বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় ডেকে নিয়ে এসে খুন করা হয় এই সাংসদকে৷ বাংলাদেশের এই সাংসদ খুনের ঘটনায় ধৃত কসাই জিহাদকে জেরা করে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্যের সন্ধান পেয়েছেন সিআইডি-র আধিকারিকরা৷ কীভাবে সাংসদকে খুন করা হয়েছিল, সেই ঘটনার পুননির্মাণও করা হয় সোমবার জিহাদকে নিউটাউনের ওই ফ্ল্যাটে নিয়ে গিয়ে৷ পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির পাশাপাশি বাংলাদেশের পুলিশের শীর্ষকর্তারা উপস্থিত ছিলেন৷ বাংলাদেশের ঢাকা থেকে গোয়েন্দা প্রধানকেও ভিডিও কলে জুড়ে নেন পশ্চিমবঙ্গে তদন্তে থাকা আধিকারিকরা৷ ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে যে তথ্য উঠে আসে, তাতে জানা যায়, প্রথমে হাড় থেকে মাংস আলাদা করা হয়েছিল৷ তারপর সেই মাংস ৫০ থেকে ১০০ গ্রাম ওজনে টুকরো করা হয়৷ এর জন্য দাঁড়িপাল্লাও নাকি নিয়ে এসেছিল খুনিরা৷
মঙ্গলবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বাংলাদেশ পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান হারুণ আর রশিদ জানিয়েছিলেন, যে ফ্ল্যাটে সাংসদকে খুন করা হয়েছিল, সেখানকার সোয়ারেজ লাইন এবং সেপটিক ট্যাঙ্ক খুলে দেখা হবে৷ তদন্তকারীরা অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আভাস পেয়েছিলেন, যে সাংসদের দেহের টুকরো থাকতে পারে সেপটিক ট্যাঙ্কে৷ অবশেষে সেই সন্দেহ সত্যি প্রমাণিত হল৷ নিউটাউনের আবাসনের সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে উদ্ধার হল মাংসের টুকরো৷ প্রায় সাড়ে তিন কেজি ওজনের টুকরো করা মাংস উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে৷ কাঁচের জারে নুন মিশ্রিত জলে মাংসগুলি রাখা হয়েছিল৷ এই মাংস বাংলাদেশের সাংসদের কিনা, তা জানার জন্য ফরেন্সিক তদন্ত করা হবে৷
উল্লেখ্য, সাংসদের দেহাংশ উদ্ধার না হলে তদন্তে বিঘ্ন ঘটার সম্ভাবনা প্রবল৷ কারণ মামলাটি দুর্বল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল৷ সে কারণে বাংলাদেশ পুলিশের টিম ও পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি একযোগে তদন্ত শুরু করে৷ বাগজোলা খালে যেখানে দেহাংশ ফেলা হয়, সেখানে একটি বাঁশঝাড় ছিল৷ সংশ্লিষ্ট জায়গাটিও পরিদর্শন করেন বাংলাদেশের ডিবি প্রধান হারুন উর রশিদ সহ শীর্ষ পুলিস কর্তারা৷ কীভাবে দেহ টুকরো টুকরো করা হয়েছিল, তার বর্ণনা উঠে আসে জিহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে৷ যতদূর জানা গিয়েছে, প্রথমে সাংসদের মুণ্ড ও পরে প্রতিটি অংশ থেকে মাংস, হাড় আলাদা করা হয়েছিল৷ জিহাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য ভিডিও রেকর্ডিং করেন তদন্তকারীরা৷ কোথায় প্যাকেট রাখা হয়েছিল, কতক্ষণ দেহ টুকরো টুকরো করতে সময় লেগেছিল, তাও উঠে আসে সিআইডির তদন্তে৷ জিহাদের দেওয়া তথ্য গ্রেফতার হওয়া আমানু্ল্লার সঙ্গে মিলিয়ে দেখেন তদন্তকারীরা৷ বয়ানে কোথাও ফাঁকফোকর রয়েছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷