প্রাথমিকভাবে এই বিপর্যয়ের ভয়াবহতা বোধগম্য হয়নি। মনে করা হয়েছিল শ’খানেক লোক চাপা পড়েছেন। মৃত্যু হয়েছে জনা দশেকের। কিন্তু, পাপুয়া নিউ গিনি সরকার এদিন হতাহতের যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে, তাতে এই বিপর্যয়, একুশ শতকের সবথেকে মারাত্মক ভূমিধসের ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের আবাসিক সমন্বয়কের কাছে এদিন একটি চিঠি লিখেছেন সেই দেশের জাতীয় বিপর্যয় কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত ডিরেক্টর। তিনি বলেছেন, “এই ধস ২০০০ জনেরও বেশি মানুষকে জীবিত অবস্থায় কবর দিয়েছে।”
স্বজনকে একবার চোখের দেখা দেখার আর্তনাদ এখন গোটা পাপুয়া-নিউগিনি জুড়ে। বিশাল পার্বত্য উপত্যকায় ধসে চাপা পড়া ২০০০ জনকে উদ্ধারের কাজ শুরু হয়েছে। এই উদ্ধার পর্ব নিয়ে ইউনিসেফের আধিকারিক বলেন, ‘এটি একটি উদ্ধার অভিযান নয়, এটি একটি পরিস্থিতিকে পুনরায় সুস্থ করে তোলার মিশন।’ তিনি বলছেন, যাঁরা চাপা পড়েছেন, ‘তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম।’
পাপুয়া নিউগিনির যে এলাকায় এই ভয়াবহ ভূমিধস হয়েছে সেই যামবালি গ্রাম মূল সদর থেকে বহু দূরে। প্রান্তিক এই গ্রামে ২০০০ মানুষের চাপা পড়ে যাওয়ার ঘটনা বিশ্বের আঙিনায় খুবই উদ্বেগের খবর। এদিকে, জানা যাচ্ছে, এলাকা পর্যন্ত উদ্ধারকারী দলের পৌঁছতেই বেশ সময় লাগছে। কারণ, সেখানে রাস্তা বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে, ব্যাপক বৃষ্টিপাত হচ্ছে, স্থানীয় এলাকায় উপজাতিগত দাঙ্গা হচ্ছে। এই সমস্ত বিপর্যয়কে কাটিয়ে এগোচ্ছে উদ্ধারকারী দল।
বিপর্যয় যে এখনও কাটেনি তার আভাস দিচ্ছে স্থানীয় প্রকৃতি। এখনও এলাকায় ভূমির কম্পন টের পাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয় এক আধিকারিক জানান , বিপদ এখনও রয়েছে, ‘ প্রতি ঘণ্টায় আমরা পাথর ভাঙার শব্দ শুনতে পাচ্ছি। এর আওয়াজ বোমার মতো, গুলি ছোড়ার শব্দের মতো, পাথর ক্রমাগত পড়ে যাচ্ছে।’ তিনি বলছেন, ‘ এটি এমন একটি এলাকা ছিল যেখানে বাড়িঘর, ব্যবসা, গির্জা এবং স্কুলগুলি ছিল, এটি সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এটা যেন চাঁদের পৃষ্ঠ – এটি যেন কেবল পাথর।
প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে প্রায় ৭৯০০ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তবে রাষ্ট্রসংঘের প্রতিনিধি যাঁরা সেখানে রয়েছেন, তাঁরা বলছেন, অনেকেই নিজের জায়গা থেকে সরে অন্যত্র যেতে চাইছেন না। তাঁদের আশা এখনও ধ্বংস্তূপের মধ্যে থেকে তাঁরা ফিরে পাবেন তাঁদের স্বজনকে।
এর আগে, ধসের সবথেকে বড় ঘটনাটি ঘটেছিল ছিল ফিলিপাইনের সাদার্ন লেই প্রদেশে। ২০০৬ সালে সেখানে টানা ১০ দিন ভারী বৃষ্টি হয়েছিল। তারপর নেমেছিল ধস। মোট ১,১২৬ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। যদিও, ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন এখনও আনুমানিক মৃতের সংখ্যা ৬৭০-ই রেখেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, তারা নতুন প্রমাণের অপেক্ষা করছে। প্রসঙ্গত, পাপুয়া নিউগিনি সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে উদ্ধার কাজে হাত লাগিয়েছে সংস্থাটি।