বাসুদেব ধর, ঢাকা, ২৭ মে— প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে বাংলাদেশের উপকূলীয় ছয় জেলায় অন্তত ১০ জনের মৃতু্য হয়েছে৷ উপকূলীয় জেলাগুলোতে ৩৫ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে৷ এই ঝড়ে উপকূলের ৩৭ লাখ ৫৮ হাজারের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷
ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতির মুখে পড়েছে উপকূল ও আশপাশের ১৯ জেলা৷ এগুলো হলো সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, ফেনী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও যশোর৷
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান আজ সোমবার বিকেলে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিকভাবে এসব ক্ষয়ক্ষতির তথ্য জানিয়েছেন৷ তিনি বলেছেন, এখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা ও চট্টগ্রামে ১০ জনের মৃতু্যর খবর পাওয়া গেছে৷
ঘূর্ণিঝড় রেমাল গতকাল রোববার রাত আটটার দিকে মোংলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল ও বাংলাদেশের খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম শুরু করে৷ এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ উপকূলের বিভিন্ন জেলায় ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যায়৷ রাত দেড়টা থেকে দুইটার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১১১ কিলোমিটার গতিতে বাতাস বয়ে গেছে পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায়৷ এই ঝড়ের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে উপকূলের অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে৷ ভেসে গেছে বহু মাছের ভেড়ি৷
সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে ১৯ জেলার ১০৭টি উপজেলার বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন৷ এসব এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৩৭ লাখ ৫৮ হাজারের বেশি৷ সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৮৩টি ঘরবাড়ি৷ এছাড়া আংশিকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৯২টি ঘরবাড়ি৷
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য ৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে৷ এর মধ্যে ১৫টি জেলায় নগদ সহায়তার ৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, ৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চাল, ৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, শিশুখাদ্য কেনার জন্য ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা, গোখাদ্য কেনার জন্য ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে৷
প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, ঘূর্ণিঝড় সতর্কতার পরিপ্রেক্ষিতে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ৯ হাজার ৪২৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে৷ এসব আশ্রয়কেন্দ্র ও স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৮ লাখের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে৷ গরু, মোষ, ছাগল-ভেড়াসহ আশ্রিত পশুর সংখ্যা ৫২ হাজার ১৪৬৷ এছাড়া দুর্গত মানুষকে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে ১ হাজার ৪৭১টি মেডিকেল দল গঠন করা হয়েছে৷
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে রাজধানীতে আজ সোমবার সকাল থেকে দমকা হাওয়ার সঙ্গে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে৷ এই আবহাওয়া আজ সারা রাত এবং আগামিকাল মঙ্গলবারও অব্যাহত থাকবে৷ টানা বৃষ্টিতে এরই মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জল জমে মানুষের চলাচলে ভোগান্তি হচ্ছে৷
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বিকেলে বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি গতকাল রোববার রাতে উপকূলে আঘাত হানার পর সেটি শক্তি হারিয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে৷ সেটি এখন স্থল নিম্নচাপ হিসেবে যশোরে অবস্থান করছে৷ এর একটি অংশ ঢাকাসহ দেশের মধ্যাঞ্চলের ওপরে অবস্থান করছে৷ এর প্রভাবেই ঢাকায় দমকা হাওয়া ও ভারী বৃষ্টি হচ্ছে৷ আজ সকাল থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ঢাকায় ১২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে৷ চলতি মরশুমে ঢাকায় এটাই সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত৷
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ঢাকায় ভোর থেকে দমকা হাওয়া বইছে৷ আগামিকাল পর্যন্ত থেমে থেমে ঝোড়ো বাতাস বয়ে যাবে বলে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন৷ আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান জানান, ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বেগে দমকা হাওয়া বয়ে গেছে আজ সকাল ছয়টার দিকে, ঘণ্টায় ৫৯ কিলোমিটার৷