স্বাতীর দাবি, গত ১৩ মে তিনি কেজরিওয়ালের সঙ্গে দেখা করতে তাঁর বাসভবনে গেলে সেই সময় তাঁকে শারীরিক নিগ্রহ করেন কেজরির ব্যক্তিগত সচিব বৈভব কুমার। স্বাতীর দাবি, বৈভব তাঁকে চড় এবং পেটে লাথি মারেন। একটি টেবিলে তাঁর মাথাও ঠুকে দেন ১৬ মে দিল্লি পুলিশের কাছে বৈভবের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন স্বাতী। সেই রাতেই দিল্লির এইমসে স্বাতীর মেডিক্যাল পরীক্ষা করা হয়। ১৭ মে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৬৪ ধারার অধীনে স্বাতী নিজের বয়ান নথিভুক্ত করেন।
স্বাতীর অভিযোগ এবং এইমসের মেডিক্যাল রিপোর্টের ভিত্তিতে ১৮ মে পুলিশ বৈভবকে গ্রেফতার করে। মেডিক্যাল পরীক্ষার রিপোর্টে স্বাতীর ডান গাল এবং বাঁ পায়ে আঘাতের চিহ্ন মিলেছে বলে দিল্লি পুলিশের দাবি। জখমের চিহ্ন রয়েছে চোখের তলায়। দিল্লি পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, স্বাতীর নিগ্রহের সময় কেজরির বাসভবনে তাঁর বাবা-মাও উপস্থিত ছিলেন। তাই তদন্তের স্বার্থেই তাঁদের বয়ান নথিভুক্ত করা প্রয়োজন।
স্বাতী পুলিশে অভিযোগ জানানোর পরেই গোটা ঘটনা নিয়ে ‘রাজনৈতিক টানাপড়েন’ শুরু হয়। ঘটনায় দলের পুরনো অবস্থান থেকে সরে গিয়ে ১৭ মে বিকেলে দিল্লির আপ মন্ত্রী অতিশী দাবি করেন, স্বাতী বিজেপির এজেন্ট হয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন । কেজরী সে দিন বাসভবনে না থাকায় তিনি মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বৈভবকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছেন বলে দাবি করেন অতিশী।
যদিও গত ১৪ মে আপের রাজ্যসভার সাংসদ সঞ্জয় সিংহ বিবৃতি দিয়ে বৈভবের হাতে স্বাতীর হেনস্থা হওয়ার কথা স্বীকার করেছিলেন। স্বাতীর দাবি, অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর দল প্রথমে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু বৈভবের শাসানিতে আপের নেতারা বৈভবের পাশে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে সোমবার বৈভবের আইনজীবী তাঁর মক্কেলের স্বপক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে অভিযোগ তোলেন, কৌশলে বৈভবকে ফাঁসিয়েছেন স্বাতী। বলেন, ১৩ মে বৈভবের দিকে শারীরিক হেনস্থার অভিযোগ করতে স্বাতী ইচ্ছা করেই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনকেই বেছে নিয়েছিলেন। কারণ সেখানে কোনও সিসিটিভি নেই। সিসিটিভি থাকলে সেখানে কী হয়েছে না হয়েছে তা রেকর্ড থাকত। সত্য বেরিয়ে আসত।’
এদিকে রবিবার নতুন করে অভিযোগ করেন আপ-এর রাজ্যসভার সাংসদ স্বাতী মালিওয়াল। এ বার তাঁর অভিযোগ, তাঁকে খুন ও ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এই সূত্রেই জার্মানিতে বসবাসকারী জনপ্রিয় ইউটিউবার ধ্রুব রাঠীকে নিশানা করেন তিনি। পাশাপাশি স্বাতীর দাবি, বৈভবের জামিনের দাবি যদি কোর্ট মঞ্জুর করে তবে তাঁর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়বে।
বিপরীতে বৈভব কুমারের আইনজীবী বলেন, ‘সবটাই পূর্বপরিকল্পিত। সকলের সামনে হেয় করার উদ্দেশ্যেই মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে । বিভবের আইনজীবী আরও বলেন, ‘কেজরিওয়ালের বাসভবনের যে ড্রয়িং রুমে করে হেনস্থা করা হয়েছে বলে স্বাতী অভিযোগ তুলেছেন বৈভবের বিরুদ্ধে সেখানে কোনও সিসিটিভি নেই। ইচ্ছা করেই ওই ঘরটিকে বেছে নিয়েছেন তিনি। কারণ উনি খুব ভালো করেই জানতেন এই ঘরে তাঁকে হেনস্থা করা হয়েছে বললে তার স্বপক্ষে কোনও সিসিটিভি প্রমাণ দেওয়া সম্ভব হবে না। মুখের কথাতেই অভিযোগ দায়ের হয়ে যাবে।’ এই কথা শুনে কোর্টেই কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বাতী।