পুনে, ২৭ মে – পুনের পোর্শে দুর্ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এল৷ পুণের পোর্শে দুর্ঘটনায় অভিযুক্ত কিশোরকে আড়াল করতে রক্তের নমুনা বদলে দিয়েছিলেন খোদ ফরেন্সিক বিভাগের প্রধান। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সাসুন হাসপাতালের এক চিকিৎসককেও এই অভিযোগে গ্রেফতার করেছে পুণে পুলিশের অপরাধ দমন শাখা। ধৃতরা হলেন চিকিৎসক অজয় টাওয়ারে ও শ্রীহরি হারলার।দু’জনকে সোমবার শিবাজিনগর আদালতে পেশ করার কথা ।
জানা গিয়েছে, গাড়ি দুর্ঘটনার নয় ঘণ্টা পর নাবালকের রক্ত পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করা হয়৷ তার রক্ত পরীক্ষা করার জন্য সাসুন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল৷ দুর্ঘটনার সময় অভিযুক্ত মদ্যপ অবস্থায় ছিল কি না তা জানার জন্যই পুলিশ সাসুন হাসপাতালে নাবালকের রক্ত পরীক্ষা করে। কিন্তু নাবালককে বাঁচাতে সাসুন হাসপাতালের চিকিৎসক তার রক্তের নমুনা বদল করে দেন বলে অভিযোগ৷ নাবালকের সঙ্গে অন্য একজনের রক্তের নমুনা পালটে দেওয়া হয় যিনি মদ্যপান করেননি৷
ফরেন্সিক বিভাগের রিপোর্টে দেখা যায়, কিশোরের শরীরে মদ খাওয়ার বা নেশা করার কোনও চিহ্ন নেই। কিন্তু এই রিপোর্টে সন্দেহ হয় পুলিশের। দ্বিতীয় বার রক্ত পরীক্ষা করানো হয় অভিযুক্তের। সেই রিপোর্টেই ধরা পড়ে কিশোর মদ্যপ ছিল। এর পরেই ডিএনএ পরীক্ষার ব্যবস্থা করে পুলিশ। সেখান থেকে জানা যায়, প্রথম এবং দ্বিতীয় রিপোর্টটিতে আলাদা আলাদা রক্তের নমুনা ব্যবহার করা হয়েছে।সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা যে নমুনা বদলে দিয়েছেন, তখনই পুলিশের কাছে তা পরিষ্কার হয়ে যায়। এর পর ওই দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়।
হাসপাতালের ফরেন্সিক বিভাগের প্রধান অজয় তাওড়ের নির্দেশেই এই কাজ করেন শ্রীহরি। তদন্তে জানা গিয়েছে, অন্য একটি হাসপাতালেও অভিযুক্ত নাবালকের রক্তের নমুনা পাঠানো হয়েছিল। সেখানকার ডিএনএ রিপোর্টের সঙ্গে সাসুনের হাসপাতালের রিপোর্ট মেলেনি। সেখান থেকেই প্রমাণিত হয়, বদলে দেওয়া হয়েছিল রক্তের নমুনা। তাছাড়া হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজেও রক্তের নমুনা ফেলে দেওয়ার প্রমাণ মিলেছে। উল্লেখ্য, দুর্ঘটনার রাতে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিল ওই নাবালক। তার রক্তে অ্যালকোহলের পরিমাণ জানতেই ফরেন্সিকে পাঠানো হয়েছিল নমুনা। সেটাও পালটে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে বলে অভিযোগ।
প্রসঙ্গত, ওই দুর্ঘটনার পরে নাবালককে বাঁচাতে গাড়ির ড্রাউভারের উপর দোষ চাপাতে চেয়েছিল গোটা পরিবার। তারা চেয়েছিল, গোটা ঘটনার দায় নিক পোর্শে গাড়ির চালক। তাঁর ফোন কেড়ে নিয়ে একটি বাংলোয় আটকে রেখেছিলেন নাবালকের বাবা ও দাদু। চালককে বলা হয়, দুর্ঘটনায় দুজনের মৃত্যুর দায় নিজের কাঁধে নিয়ে নিতে হবে। তবে সময়মতো পুলিশি হেফাজত থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হবে বলেও চালককে
আশ্বাস দেয় নাবালকের পরিবার। চালককে অপহরণের দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল নাবালকের দাদুকে। এবার গ্রেপ্তার হলেন দুই চিকিৎসককে।
কেন নমুনা বদল করা হল, কেন অভিযুক্তকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন ফরেন্সিক প্রধান এবং ওই চিকিৎসক, পুলিশ তা জানার চেষ্টা করছে। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
গত ১৯ মে পুণেতে একটি পোর্শে গাড়ির ধাক্কায় দু’জনের মৃত্যু হয়। গাড়িটি চালাচ্ছিল ১৭ বছরের কিশোর। সে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিল বলে অভিযোগ। এমনকি, তদন্তে উঠে এসেছে, ওই গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করানো ছিল না আদৌ। ঘাতক গাড়িটিতে কোনও নম্বর প্লেটও ছিল না। পোর্শেকাণ্ডে অভিযুক্ত কিশোরকে প্রথমে ঘটনার ১৫ ঘণ্টার মধ্যেই শর্তসাপেক্ষে জামিন দিয়ে দিয়েছিল আদালত। বুধবার সেই জামিন বাতিল হয়েছে। কিশোরের জামিনের আবেদন খারিজ করে জুভেনাইল আদালত জানিয়েছে, আগামী ৫ জুন পর্যন্ত ওই কিশোরকে জুভেনাইল হোম বা শিশু পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে থাকতে হবে।