পূর্ণেন্দু চক্রবর্তী
না, হল না৷ সতেরোটা বছর হয়ে গেল, কিন্ত্ত বিরাটের স্বপ্ন অধরা থেকে গেল আইপিএল ক্রিকেটে৷ স্বপ্ন ভঙ্গে তাড়নায় বিরাট কোহলির হাতে এখন পর্যন্ত আইপিএল ট্রফিটা শোভা পেল না৷ বিরাট অনেক বড় মাপের ক্রিকেটার, তা নিয়ে নতুন করে ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন হয় না৷ বিরাট নিজেই একটা উপাখ্যান৷ তাঁর ক্রিকেট জীবন নিয়ে রূপকথার মতোন গল্প লেখা যায়৷ বৈচিত্র্যময় ক্রিকেট কাহিনিতে তিনি নিজেই নায়ক৷ কোহলির ব্যাটে প্রতি খেলায় ভয়ঙ্কর রূপ দেখতে পাওয়া যায়৷ প্রতিপক্ষ দলের বোলারদের সঙ্গে আপোষ করতে জানেন না বিরাট৷ বিরাট তাঁর চওড়া ব্যাটে জোড়ো ইনিংস খেলতে ভালোবাসেন৷ এমনই দর্শনে বিশ্বাসী হয়ে দলের জন্যে বড় ভূমিকা নিতে দ্বিধা প্রকাশ করেন না৷ ভয় বলে শব্দটা বিরাট কোহলির হূদয়কে চুরমার করে না৷ মনের গভীরে যেখানে ভালোবাসা কথা বলে, সেই বিরাটকে হারের যন্ত্রণায় ভেঙে পড়তে দেখা গেল৷ এবারের আইপিএল ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার প্রায় দোরগোড়ায় পেঁৗছে গিয়েও ছিটকে যেতে হল বিরাটকে৷ তাইতো বিমর্ষ হয়ে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল আমেদাবাদের স্টেডিয়ামে৷
প্লে অফ ম্যাচে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ৪ উইকেটে হেরে গেল রাজস্থান রয়্যালসের কাছে, তখন বিরাটের মুখটা কেমন যেন ফ্যাকাশে হয়ে গেল৷ তাইতো মাথা নিচু করে সবুজ ঘাসের দিকে তাকিয়ে হয়তো নিজের মনে বলতে চেষ্টা করেছিলেন আইপিএল ট্রফি জয়ের খরা থেকে কবে মুক্তি পাবো! চোখের পাতা ভিজে যাচ্ছিল-তবুও নতুন করে স্বপ্ন দেখার ইচ্ছায় আকাশের দিকে আরও একবার তাকিয়ে বলেন, শক্তি দাও-জিততেই হবে৷ আর তখনই অদ্ভুত একটা অনুভূতির দৃশ্য দেখতে পাওয়া গেল৷ হারের যন্ত্রণায় মানসিক দিক থেকে ছটফট করছিলেন বিরাট কোহলি৷ কাছে ছুটে এলেন বেঙ্গালুরু দলের অধিনায়ক ক্যাফ ডুপ্লেসি বুকে টেনে নিলেন প্রাক্তন অধিনায়ক বিরাটকে৷ কে কাকে সান্ত্বনা দেবেন? গতবাক গ্যালারি৷ ভেসে এলো গ্যালারি থেকে বিরাটের সমর্থকদের চিৎকার-আমরা তোমাকে ছাড়ছি না৷ সমর্থকদের উদ্দেশ্যে-হাতটা ছুঁড়ে দিয়ে পাশে থাকার বার্তা দিলেন৷ এই হলেন বিরাট কোহলি৷
ক্রিকেট যুদ্ধে অনেক লড়াইয়ের সাক্ষী বিরাট৷ সেখানেও মাথা উঁচু করে দলের সাফল্যে উজ্জীবিত হয়েছেন৷ কিন্ত্ত আইপিএল ক্রিকেটে ভাগ্যের সঙ্গে লড়াই করে খেতাবটা তুলে আনতে পারেননি৷ কিন্ত্ত রনে ভঙ্গদিতে রাজি নন বিরাট৷ নতুন করে শপথ নেওয়ার খেলায় বাজিমাত করতে চান বিরাট কোহলি৷ ভাস্যের চাকা ঘোরাতেই হবে বিরাটের শরীরী ভাষায় সেই কথাই বলছে৷ বিরাট যে দলেই খেলুন না-তার একটা আবেগ থাকে৷ আর সেই কারণে দর্শক গ্যালারিতে বিরাট মঞ্চ গর্জন করে৷ যখন বেঙ্গালুরু দলকে হারিয়ে সঞ্জু স্যামসনের রাজস্তান টেক্কা দিল, তখন বিরাট ভক্তরা হা-হুতাশ করতেই পারেন৷ অনেক আশা নিয়ে বিরাটকে দেখবার জন্যে মাঠে ছুটে এসেছিলেন, তাঁরা একরাশ দুঃখ নিয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়িয়েছেন৷ বিরাটের ব্যাট সেইভাবে হুঙ্কার দিতে পারেনি রাজস্থানের বিপক্ষে, কিন্ত্ত ওপেনার হিসেবে ৩৩ রান খুব একটা খারাপ নয়৷ অনেক সময় দেখা যায় মাঝের সারির ব্যাটসম্যানরা ঝলসে ওঠেন-তাঁরাও সেইভাবে নিজেদের প্রকাশ করতে পারেননি৷ যারফলে বেঙ্গালুরু শিবির পাকাপোক্ত হতে পারেনি৷ প্রতিপক্ষ রাজস্থান দলের রবি চন্দ্রন অশ্বিন, যুজবেন্দু চাহাল ও আবেশ খানের মতন বোলাররা একটা নির্দিষ্ট সংখ্যার রানে বন্দি করে রাখে বেঙ্গলুরুকে৷ আবার যখন ১৭৩ রান তাড়া করতে নেমে রাজস্থান দল বেশ সচেতন ছিল তাই তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড় যশস্বী জয়সওয়াল বুদ্ধিসহকারে খেলে বেঙ্গালুরুকে চাপে রাখেন৷ তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৪৫ রান৷ রাজস্থান দল ৬ উইকেটে ১৭৪ রান করে জয়ের উল্লাসে মেনে ওঠে৷ এই জয় রাজস্থানের অক্সিজেন৷ আত্মবিশ্বাসে ভরপুর হয়ে পরের ম্যাচে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেবে৷
তবে এটা ঠিক৷ বিরাট কোহলি কখনই নিজের জন্যে খেলেন না৷ যখন দেশের হয়ে খেলতে নামেন, তখন তাঁর পাখির চোখ থাকে প্রতিপক্ষ দলকে হারানো৷ আবার যখন আইপিএল ক্রিকেটে যে দলের হয়ে জার্সি গায়ে দিয়ে মাঠে নামেন, তখন তিনি সেই দলের লড়াকু ও সাহসী ব্যাটসম্যান৷ তিনি কখনও নজিগড়ার জন্যে আস্ফলন করেন না৷ ভ্রুক্ষেপ করেন না পরিসংখ্যানকে চাক্ষুষ করার৷ চ্যালেঞ্জ নিয়ে লড়তে ভালোবাসেন৷ এবারের মতোন আইপিএল ক্রিকেট থেকে বিরাট কোহলিদের বিদায় নিতে হল৷ এবাপেরর আইপিএল ক্রিকেটে ১৫টি ইনিংস খেলে ৭৪১ রান তুলেছেন বিরাট কোহলি৷ নিজের সাফল্যে তিনি সেই ভাবে কদর করেন না৷ বিরাটের লক্ষ্য থাকে দেশের সাফল্য কীভাবে তুলে আনা যায়৷ এবারের আইপিএল ক্রিকেট থেকে বিদায় নিতেই বিরাট কোহলির ভেঙে পড়াটা স্বাভাবিক৷ এই ভেঙে পড়া চরিত্র থেকে উজ্জ্বল মুখটা তুলে ধরবেন বিরাট কোহলি সেই অপেক্ষায় সময় কথা বলবে৷