নিজস্ব প্রতিনিধি— ভোটের ৪৮ ঘন্টা আগে ফিরে এল পুরনো স্মৃতি৷ বিজেপি কর্মীর মৃতু্যকে কেন্দ্র করে নন্দীগ্রামে ফের জ্বলে উঠল বিক্ষোভের আগুন৷ ঘটনার সূত্রপাত বুধবার রাতে৷ নন্দীগ্রাম বিধানসভার অন্তর্গত সোনাচূড়ার মনসাবাজারের কাছে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছিলেন বিজেপির কিছু কর্মী-সমর্থক৷ মধ্য রাতে হঠাৎ করেই একদল দুস্কৃতী বাইকে করে এসে তাঁদের উপর চড়াও হয় বলে অভিযোগ৷ ধারালো অস্ত্র দিয়ে চালাতে থাকে এলোপাথাড়ি কোপ৷ চিৎকার শুনে ছুটে আসেন স্থানীয়রা, তখনই এলাকা ছাড়ে দুস্কৃতীরা৷ ঘটনাস্থলেই রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন স্থানীয় বিজেপি নেতা সঞ্জয় আড়ির মা রথীবালা আড়ি৷ মৃতু্য হয় তাঁর৷ আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি ছেলে সঞ্জয়ও৷ বিজেপি কর্মীদের মারধরের ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই ভোটের মুখে আরও একাবার উঠে এসেছে তৃণমূল আশ্রিত দুস্কৃতীদের প্রসঙ্গ৷
রাতে বিজেপি কর্মীর মায়ের মৃতু্যকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে দফায় দফায় চলতে থাকে বিক্ষোভ৷ সোনাচূড়ার মনসাবাজারের কাছে গাছ ফেলে রাস্তা অবরোধ করা হয়৷ আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় স্থানীয় একাধিক দোকানেও৷ পরে অবশ্য পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে৷ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও৷
আগামীকাল অর্থাৎ ২৫মে ষষ্ঠ দফায় তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ৷ তার আগে বৃহস্পতিবার কাঁথিতে জনসভা ছিল রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর৷ সভা মঞ্চ থেকে তিনি বিজেপি কর্মী খুনের ঘটনার দায় শাসক দলের উপর চাপিয়ে তোপ দাগলেন স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই৷ শুভেন্দুর কথায়, ‘‘আমি এখানকার ভূমিপুত্র৷ এই ঘটনার বদলা আমি নেবই৷’’ প্রসঙ্গত বুধবারই নন্দীগ্রামে সভা করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়৷ সেই সভা থেকেই বিজেপি ভোট লুটের চেষ্টা করছে বলে দাবি করেছিলেন তিনি৷ একই সঙ্গে ডায়মন্ড হারবারের বিদায়ী সাংসদ আরও বলেছিলেন, ‘‘যদি বাড়িতে এসে বিজেপি ভয় দেখায়, তাহলে বঁটি নিয়ে তাড়া করবেন৷’’
অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের সভার ২৪ ঘন্টা কাটতে না কাটতেই সামনে আসে বিজেপি কর্মী খুনের ঘটনা৷ ঘটনার প্রতিবাদে শুভেন্দু অধিকারী নিজের এক্স হ্যান্ডেলে সরাসারি তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ডকে আক্রমণ শানিয়েছেন৷ তাঁর কথায়, ‘‘হার নিশ্চিত বুঝে তৃণমূল এই ধরণের ঘৃণ্য ঘটনা ঘটিয়েছে৷ ভাইপো এসে নন্দীগ্রামে যে উস্কানি দিয়েছিলেন, তারই পরিণাম এই ঘটনা৷’’
যদিও বিজেপির দাবি অস্বীকার করে গেরুয়া শিবিরের গোষ্ঠি দ্বন্দ্বকেই দায়ি করেছে রাজ্যের শাসকদল৷ স্থানীয় তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ানা বলেন, ‘‘অভিষেক বন্দোপাধ্যায় কোনও উষ্কানিমূলক কথা বলেননি৷ ওরা নিজেরাই অশান্তি করছে৷’’ ঘটনাচক্রে নন্দীগ্রামের বিধায়ক রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী৷ তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘যে এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে সেখানে তৃণমূলের কোনও পতাকা নেই৷ নিজেদের হার বুঝতে পেরে শুভেন্দু অধিকারী এই সমস্ত ঘটনা ঘটাচ্ছেন৷’’ একই সঙ্গে বিজেপির বিরুদ্ধে রাতের অন্ধকারে তৃণমূল কর্মীদের বাড়ি ভাঙচুর করার কথাও বলেন তিনি৷
নন্দীগ্রাম জমি আন্দোলনের স্মৃতি আজও এলাকাবাসীর কাছে টাটকা৷ সেই আন্দোলনে রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ছায়াসঙ্গী ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী৷ জমি আন্দোলনকে কেন্দ্র করে মৃতু্য হয়েছিল ১৪ জনের৷ ওই আন্দোলনই রাজ্যের তৎকালীন বাম সরকারের ভীতকে নাড়িয়ে দিয়েছিল৷ ঘটনার ১৭ বছর পরে অবশ্য রাজ্যের মসনদে তৃণমূল সরকারই৷ তবে তাঁর ছায়াসঙ্গী পরিবর্তন হয়েছে, শুভেন্দু তৃণমূল ছেড়ে গিয়েছেন বিজেপিতে৷ ঘটনাচক্রে সেই শুভেন্দু অধিকারীই নন্দীগ্রামের বিধায়ক, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা৷