• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

৫ বছরে দেখা নেই, এখন এসে সাবান মাখাচ্ছেন : অভিষেক

বাঁকুড়ার সভায় নিশানায় সুভাষ সরকার নিজস্ব প্রতিনিধি— আর বাকি মাত্র দু’দফার নির্বাচন৷ ষষ্ঠ দফার নির্বাচনকে টার্গেট করে মঙ্গলেই তিনটি জনসভা একত্রে সারেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়৷ প্রথমে বাঁকুড়া কেন্দ্রের প্রার্থী অরূপ চক্রবর্তীর সমর্থনে বাঁকুড়ার শালতোড়ায়, তারপর পুরুলিয়া কেন্দ্রের প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতর সমর্থনে বলরামপুরে এবং অবশেষে বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের প্রার্থী সুজাতা মন্ডলের সমর্থনে সোনামুখীতে

বাঁকুড়ার সভায় নিশানায় সুভাষ সরকার

নিজস্ব প্রতিনিধি— আর বাকি মাত্র দু’দফার নির্বাচন৷ ষষ্ঠ দফার নির্বাচনকে টার্গেট করে মঙ্গলেই তিনটি জনসভা একত্রে সারেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়৷ প্রথমে বাঁকুড়া কেন্দ্রের প্রার্থী অরূপ চক্রবর্তীর সমর্থনে বাঁকুড়ার শালতোড়ায়, তারপর পুরুলিয়া কেন্দ্রের প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতর সমর্থনে বলরামপুরে এবং অবশেষে বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের প্রার্থী সুজাতা মন্ডলের সমর্থনে সোনামুখীতে আয়োজিত তিনটি জনসভা থেকে দফায় দফায় অভিষেক আক্রমণ শানান বিজেপিকে৷ তিন কেন্দ্রের বিদায়ী সাংসদদের দিকেই ছুঁড়ে দেন কিছু চ্যালেঞ্জ৷ বাঁকুড়ায় বক্তব্যের শুরুতেই ওই কেন্দ্রের বিদায়ী সাংসদ সুভাষ সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে অভিষেক বলেন, “পাঁচ বছরে পাঁচ সপ্তাহ সময়ও এখানকার প্রতিনিধি আপনাদের দেননি৷ এখন ভোট এসেছে তাই আপনাদের কারও জুতো পালিশ করছে, আবার কাউকে সাবান মাখিয়ে মগ দিয়ে জল ঢেলে দিচ্ছে৷ আমি মায়েদের বলব, এদের দিয়ে শৌচালয়ও পরিষ্কার করিয়ে নেবেন৷ দরকার হলে, বাড়িতে ডেকে বাসনটাও মাজাবেন৷ আর বলবেন ভোট আপনাকেই দেবো৷ আপনাদের তো ঠকিয়েছে পাঁচ বছর৷” একই সাথে বিঁধেছেন সুভাষের ছেলেকেও৷ তিনি বলেন, “আর ওঁনার ছেলের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসার একাধিক অভিযোগ আছে৷ আপনি ভাবুন, এই লোকটাকে ভোট দিয়ে আপনারা নির্বাচিত করেছিলেন৷” বিজেপি এবং তৃণমূলের নীতিগত আদর্শের পার্থক্য উল্লেখ করে এদিন অভিষেক বলেন, “প্রায় সাডে় তিন লক্ষ প্রকৃত প্রাপক ১০০ দিনের কাজের টাকা পাননি তিন বছর ধরে৷ এই সুভাষ সরকার এবং বিজেপি বিধায়করাই মানুষের টাকা বন্ধ করেছেন৷ আর আপনারা যাকে ভোট দেননি, সেই তৃণমূল কংগ্রেস আপনার টাকা আপনার ব্যাঙ্কে পৌঁছে দিচ্ছে৷”

প্রভু জগন্নাথ দেব নাকি প্রধানমন্ত্রী মোদির ভক্ত! এই বক্তব্যেই সরগরম রাজ্য রাজনীতি৷ এবার এই ইসু্যতেই অভিষেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেন, “বিজেপির পুরীর প্রার্থী বলেছেন, প্রভু জগন্নাথ প্রধানমন্ত্রী মোদির ভক্ত৷ একবার ভাবুন, কত দম্ভ, অহংকার এঁদের৷ বাংলাকে অপমান করা থেকে শুরু করে দেবতাকে মোদির ভক্ত বানানো! রীতিমতো ঠাকুরকে ছোট করছেন এই বিজেপি নেতৃত্বরা৷” বিষ্ণুপুর থেকে প্রধানমন্ত্রীকে হুঁশিয়ারি অভিষেকের৷ তিনি বলেন, “দুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী বিষ্ণুপুরে সভা করে বলেছেন, তৃণমূল নেতাদের ঘর বিক্রি করে আমি মানুষকে টাকা দেব৷ আগামীদিনে দিল্লিতে যে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন তৈরি হচ্ছে ২০ হাজার কোটি টাকার, সেটি বিক্রি করে ২০ লক্ষের বেশি মানুষকে আমরা টাকা দেব৷ কত ধানে, কত চাল বুঝে নেব৷” খড়্গপুর থেকে বিজেপি নেতা সমিত মন্ডলের কাছ থেকে ৩৫ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে জেলা পুলিশ৷ এই ইসু্যকেই কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে অভিষেক বলেন, “জেলা পুলিশ তাঁকে (সমিত মন্ডল) যেই ধরেছে অমনি নির্বাচন কমিশন বিজেপির কথায় এসপিকেই পাল্টে দিয়েছে৷” বিজেপির নারী ক্ষমতায়ন নিয়েও সরব অভিষেক৷ তিনি বলেন, “বিজেপি নারী ক্ষমতায়নের কথা বলে৷ উলুবেড়িয়া এবং জাঙ্গিপাড়ায় দুই মহিলাকে শ্লীলতাহানি করেছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা৷ এঁরাই সন্দেশখালি করে বাংলার মহিলাদের সম্মান লুন্ঠিত করেছে৷ এঁদের যোগ্য জবাব দেবেন না?” বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এবং বিষ্ণুপুরের বিদায়ী সাংসদ যথাক্রমে সুভাষ সরকার, জ্যোতির্ময় সিং মাহাত এবং সৌমিত্র খাঁ৷ তাঁদের প্রত্যেককেই চ্যালেঞ্জ করে অভিষেক সভামঞ্চ থেকেই বলেন, “আমি চ্যালেঞ্জ করছি, ক্ষমতা থাকলে এবং বুকের পাটা থাকলে রিপোর্ট কার্ড নিয়ে আসুন৷ মঞ্চ বেঁধে লড়াই করুন তথ্য পরিসংখ্যানকে সামনে রেখে৷” বিষ্ণুপুরের সোনামুখীতে দাঁড়িয়ে অভিষেক সৌমিত্রকে সরাসরি নিশানা করে বলেন, “সোনামুখীতে বিজেপির ডবল ইঞ্জিন সরকার, কি কাজ হয়েছে? আর জেলাপরিষদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিঙ্গল ইঞ্জিন, আমরা কি কাজ করেছি তথ্য দিয়ে দেব৷”

পুরুলিয়ায় কুড়মিদের ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন অভিষেক৷ পাশাপাশি নাম না করে ঝাড়খন্ড এবং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী কথা দিয়েছিলেন, কুড়মিদের দাবিগুলি অগ্রাধিকার দেবেন৷ এ তো এক মিনিটের কাজ৷ এখনও করেননি৷ পাশাপাশি আদিবাসীদের কিভাবে লাঞ্চিত, অপমানিত করেছে বিজেপির সরকার আপনারা দেখেছেন৷ ঝাড়খন্ডের একজন আদিবাসী মুখ্যমন্ত্রীকে খালি বিজেপির কাছে মাথানত করেননি বলেই ইডি, সিবিআই দিয়ে জেলে ঢুকিয়ে রেখে দিয়েছে নির্বাচনের সময়৷ আপনারা দেখেছেন দিল্লির নির্বাচিত সরকারের ক্ষমতা বিজেপি কেবল একটা অর্ডিন্যান্স করে নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছে৷” এদিন পুরুলিয়া অশান্ত হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেন অভিষেক৷ তাঁর ভাষায়, “২০১১ সালে এই পুরুলিয়ার মাটিতে তৃণমূলের জয়ের পর শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল৷ ২০১৮ সালে হঠাৎ করেই বলরামপুরে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপি জিতল৷ এটি কোন জাদুকাঠি যার জন্য যেখানে বিজেপির নাম গন্ধ ছিল না সেখানে বিজেপির জয় হলো? তার কারণ সিপিএমের হার্মাদরাই লাল জামা পাল্টে গেরুয়া জামা পরে আবার এই বলরামপুর অশান্ত করতে নেমেছিল৷” মঙ্গলে মঙ্গলবার্তাও দিয়েছেন যুবরাজ৷ পুরুলিয়া থেকে তিনি বলেন, “আগামী পাঁচ বছরে পুরুলিয়ায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার কাজ করে তার হিসেব রিপোর্ট কার্ডের মাধ্যমে আমরা মানুষের বাড়িতে বাড়িতে দেব৷” বিষ্ণুপুর থেকে ১ লক্ষের ব্যবধানে সুজাতা মন্ডলকে জেতানোর আর্জি জানিয়েছেন অভিষেক৷ পাশাপাশি সোনামুখী থেকে স্মৃতিচারণা করে অভিষেক বলেন, “গত বছর এই ২১ মে আমি সোনামুখীতেই ছিলাম৷ আমার নবজোয়ার যাত্রা ভঙ্গ করার জন্য সিবিআই আমায় ডেকে পাঠায়৷ তখন আমি গাড়ির ওপর দাঁড়িয়ে কথা দিয়েছিলাম, ২৪ ঘন্টা পর আবার এই সোনামুখী থেকে আমার যাত্রা শুরু করবো৷” বাঁকুড়া থেকে তৃণমূল প্রার্থীকে জেতানোর আর্জি জানিয়ে যুবরাজ বলেন, “বাঁকুড়া থেকে দুজন এবার প্রাক্তন হতে চলেছেন৷ অরূপ চক্রবর্তী এবং সুভাষ সরকার৷ অরূপ চক্রবর্তী এবার প্রাক্তন বিধায়ক হবেন, কারণ তিনি এবার সাংসদ হবেন৷ অন্যদিকে, সুভাষ সরকার প্রাক্তন সাংসদ হতে চলেছেন৷”