• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

মোদির অস্ত্র হিন্দুত্বই

ধর্ম মানব সংস্কৃতির একটি অঙ্গ৷ সভ্যতার ঊষালগ্নে ধর্মের সৃষ্টি৷ ধর্ম মানুষকে সংঘবদ্ধ করে৷ মানুষ সংঘবদ্ধ না হলে সভ্যতা এগোতে পারত না৷ আবার এটাও ঠিক, ধর্মে সময় বিশেষে কুসংস্কারও ঢুকে পড়ে৷ তখন সেগুলি সংস্কার করা জরুরি হয়ে পড়ে৷ ধর্মকে কালের উপযোগী করে নিতে হয়৷ ইতিহাস থেকে জানা যায়, ধর্ম নিয়ে অনেক যুদ্ধ হয়েছে৷ লক্ষ লক্ষ মানুষ

ধর্ম মানব সংস্কৃতির একটি অঙ্গ৷ সভ্যতার ঊষালগ্নে ধর্মের সৃষ্টি৷ ধর্ম মানুষকে সংঘবদ্ধ করে৷ মানুষ সংঘবদ্ধ না হলে সভ্যতা এগোতে পারত না৷ আবার এটাও ঠিক, ধর্মে সময় বিশেষে কুসংস্কারও ঢুকে পড়ে৷ তখন সেগুলি সংস্কার করা জরুরি হয়ে পড়ে৷ ধর্মকে কালের উপযোগী করে নিতে হয়৷ ইতিহাস থেকে জানা যায়, ধর্ম নিয়ে অনেক যুদ্ধ হয়েছে৷ লক্ষ লক্ষ মানুষ মারাও গিয়েছে৷ আমাদের দেশেও ধর্ম নিয়ে দাঙ্গা ও ভাগাভাগি কম হয়নি৷ মানব সভ্যতায় এই ধ্বংসাত্মক ঘটনাগুলি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ও দুঃখজনক৷ সাধারণ মানুষের মতে, আমরা নিজেরাই নিজেদের ধর্ম সম্পর্কে খুবই কম জানি৷ আবার অন্যান্য ধর্ম সম্পর্কে জানাটা না জানারই মতো৷ ধর্মে ধর্মে বিদ্বেষের অন্যতম কারণ হল এই ‘না জানা’র অজ্ঞতা৷ এবারে দেশজুড়ে ভোটপ্রচারে বিজেপি নেতারা ধর্মকে শিখণ্ডি করে এগিয়ে যেতে গিয়ে এই ‘অজ্ঞতা’র প্রমাণ রাখছেন বহু স্থানে৷

গোটা নির্বাচনীপর্ব জুড়ে দেশময় বিষ ছড়িয়ে গোটা দেশটাকে বিষাক্ত করে তুলেছেন নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর গেরুয়া-বাহিনী৷ কোনও মানুষ যদি সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকে, উন্নততর সমাজ ও সভ্যতা সম্পর্কে নূ্যনতম চেতনাবোধ থাকে, তাহলে এমন ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়িয়ে সমাজটাকে দূষিত ও কলুষিত করার কথাও ভাবতে পারতেন না৷ কিন্ত্ত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য যদি চরম স্বৈরাচারী একনায়কত্বের উপাদান থাকে, ক্ষমতার অভ্রভেদী লিপ্সা থাকে, মনটা যদি ঘৃণা আর বিদ্বেষের কারখানা হয়ে থাকে, তাহলে সে সামাজিক ও মানবিক সম্পর্কগুলি ভেঙে ছারখার করে দিতে দ্বিধাবোধ করবে না৷

অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনে ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক সংবিধানকে পদে পদে পদদলিত করে, নাগরিক সমাজকে ডাস্টবনে ছুঁড়ে ফেলে মানুষকে যেভাবে বিভাজিত করে ধর্মের ভিত্তিতে, সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে, জাতপতের ভিত্তিতে, ভাষা-সংস্কৃতির ভিত্তিতে একে অপরকে শত্রু বানানোর বেপরোয়া প্রয়াস একা দায়িত্ব নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চালিয়ে যাচ্ছেন তাতে ভারত আর গৌরবের ভারত থাকবে না৷

অনিবার্যভাবে হয়ে উঠবে একটি অন্ধ, উগ্র ও মৌলবাদী হিন্দুত্বের আফগানিস্তান বা পাকিস্তান৷ মানুষের নাগরিক অধিকার, বাক্স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে অনুগত প্রজা বা ভক্ত বানানো হবে৷ কেন্দ্রীভূত রাষ্ট্র ক্ষমতার শীর্ষে বসে রাজকীয় শাসন চালানো হবে৷ রাজ্যগুলিকে বানানো হবে অধিকারহীন পৌরসভা বা পঞ্চায়েতের মতো সংস্থায়৷ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মূল উৎপাটন করে বিচার ব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশন সহ স্বাধীনভাবে পরিচালিত সমস্ত সাংবিধানিক সংস্থাগুলিকে সরকারের হুকুম তামিলের সংস্থায় পরিণত করা হবে৷ ন্যায় বা সমতার ভাবনা চিরতরে মুছে যাবে৷ একচেটিয়া বৃহৎ পুঁজির হাতে সঁপে দেওয়া হবে দেশের ও জাতির সমস্ত সম্পদ৷ বৃহৎ পুঁজির অনুগত হয়ে কাজ করবে সরকার৷ কৃষকের স্বার্থে বা শ্রমিকের স্বার্থে কোনও কৃষি আইন বা শ্রম আইন তৈরি হবে না৷ শিক্ষার অধিকার, কাজের অধিকার সরকারি ভাষ্য থেকে মুছে ফেলা হবে৷ পুঁজির সর্বোচ্চ মুনাফা এবং পুঁজির মালিকের সম্পদ সর্বোচ্চ বাড়ানোর জন্য যা যা সরকারি নীতি বা আইন প্রণয়ন দরকার পুঁজির মালিকদের নির্দেশে সরকার সেগুলিই করবে৷ মানুষের হাতে কাজের দায়, ন্যায়সঙ্গত মজুরির দায় সরকার নেবে না৷ আজ যে হারে সমাজে বেকারি, অর্ধ বেকারি, নিম্ন মজুরি বাড়ছে, সম্পদ ও আয় বৈষম্য যে হারে বাড়ছে অচিরেই তা বহুগুণে বেড়ে যাবে৷ ব্যাঙ্কে জনগণের আমানত নিয়ন্ত্রণের পূর্ণাঙ্গ অধিকার পাবে কর্পোরেট ভারত৷ সমস্ত দিক থেকে মানুষকে নিঃস্ব করে সম্পদের স্রোত বইবে উপরতলার দিকে৷ মানুষের শিক্ষা, কর্মদক্ষতা, যোগ্যতাকে নির্বাসন দিয়ে তাদের বানানো হবে ভাতাজীবী বা ভিক্ষাজীবী৷ নানা নামে সামান্য সরকারি ভাতা, অনুদান দিয়ে মানুষকে কোনওরকমে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা হবে ধর্মান্ধতার আফিম খাইয়ে চেতনাহীন করে৷ শোষণ ছাড়া উপরতলায় সম্পদ জমে না৷ আদানি-আম্বানি তৈরি হয় না৷ শোষণ যতই বাড়বে, উপরতলায় সম্পদ ততই বাড়বে৷ সেই শোষণে যত মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা দরকার সরকার তার জন্যই প্রকল্প তৈরি করবে৷ নরেন্দ্র মোদি ভারতকে সেদিকে নিয়ে যেতে মরিয়া৷ কারণ কর্পোরেট পুঁজির কাছে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ প্রচারে বিষ ছড়িয়ে গোটা দেশকে বিষাক্ত করে গদি বাঁচাতে চাইছেন মোদি৷ ক্ষমতায় না ফিরলে ১৪০ কোটি মানুষের ভারতকে আদানি-আম্বানিদের পারিবারিক সম্পত্তি করা যাবে না৷ তাই মোদির অস্বাভাবিক আচরণ নজরে পড়ছে দেশবাসীর৷ অষ্টাদশ লোকসভার নির্বাচনের ফলাফল দেশকে হয়তো বিষমুক্ত করবে৷