উন্নাও কাণ্ডের নিগৃহীতাকে এখনই দিল্লিতে নিয়ে আসা হচ্ছে না, জানাল সুপ্রিম কোর্ট। লখনউতেই তাঁর চিকিৎসা হােক, জানিয়েছে শীর্ষ আদালত। উন্নাওয়ের নিগৃহীতার পরিবার শীর্ষ আদালতকে জানায় যে, তাঁরা লখনউয়ের হাসপাতলেই তাদের পরিবারের মেয়ের চিকিৎসা করাতে যান।
বিজেপি’র বহিষ্কৃত বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গারের বিরুদ্ধে উন্নাওয়ের ওই কিশােরীকে ধর্ষণ করার অভিযােগ ওঠে। দেশের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ সিবিআইকে সাতদিনের মধ্যে গাড়ি দুর্ঘটনার তদন্ত ও ৪৫ দিনের মধ্যে ধর্ষণের তদন্তও শেষের নির্দেশ দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট উন্নাও ধর্ষণ কাণ্ডের পাঁচটি মামলা উত্তরপ্রদেশ থেকে দিল্লিতে স্থানান্তর করার নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি উন্নাওয়ের নিগৃহীতাকে ক্ষতিপূরণ স্বরূপ ২৫ লক্ষ টাকা দেওয়ারও নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। এই মামলায় উত্তরপ্রদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যথােপযুক্ত ব্যবস্থা না নেওয়ারও অভিযােগ ওঠে।
রবিবার একটি গাড়িতে করে রায়বেরেলির দিকে যাচ্ছিলেন ওই কিশােরী ও তাঁর পরিবার এবং তাঁদের আইনজীবী। সেই সময়ই তাঁদের গাড়িটিকে উল্টোদিক থেকে আসা একটি লরি সজোরে ধাক্কা মারে। ওই লরিটির নম্বর প্লেট কালো কালি দিয়ে ঢাকা ছিল। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় নিগৃহীতার দুই কাকিমার এবং গুরুতর আহত অবস্তায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় নিগৃহীতা ও তাঁর আইনজীবীকে।
সুপ্রিম কোর্ট আজ (শুক্রবার) উন্নাও ধর্ষণকাণ্ডের নিগৃহীতাকে চিকিৎসার জন্য দিল্লির শীর্ষ হাসপাতাল এইমসে স্থানান্তরিত করার বিষয়ে শুনানি ছিল, সেই মামলাতে নিগৃহীতার পরিবার জানায় এখনই অসুস্থ ওই কিশােরীকে দিল্লিতে নিয়ে আসার প্রয়ােজন নেই, লখনউতে চিকিৎসা হােক তাঁর। যেহেতু গাড়ি দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত উন্নাও কাণ্ডের নিগৃহীতার পরিবার তাঁকে লখনউতে রেখেই চিকিৎসা করাতে চান তাই আমরা আপাতত অপেক্ষা করছি। ওই কিশােরীকে উত্তরপ্রদেশ থেকে দিল্লিতে না আনার ব্যাপারে জানান সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি।
এদিকে শীর্ষ আদালত সমস্ত সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশ্যে জানিয়েছে যে কোনভাবেই যেন উন্নাও ধর্ষণ কাণ্ডে বেঁচে যাওয়া কিশােরীর পরিচয় প্রকাশ না করা হয়। বৃহস্পতিবার উন্নাও ধর্ষণ কাণ্ডে নিগৃহীতার অবস্থা আশঙ্কাজনক, লাইফ সাপাের্ট সিস্টেমে রয়েছেন তিনি বলে জানান চিকিৎসকরা।
রবিবার গাড়ি দুর্ঘটনার পর তাঁকে কিং জর্জ মেডিকেল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই দিনের দুর্ঘটনায় মারা যান নিগৃহীতার পরিবারের দুই মহিলা সদস্যও। ঘটনায় কুলদীপ সিং সেঙ্গারের বিরুদ্ধে খুনের ষড়যন্ত্রের অভিযােগ তুলেছে নিগৃহীতার পরিবার।
উন্নাও ধর্ষণে নিগৃহীতা তরুণীকে চিকিৎসার জন্য দিল্লি নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাবে আপত্তি পরিবারের। তাঁদের দাবি, লখনউতেই চিকিৎসা চলুক তাঁর। অন্যদিকে, উন্নাও মামলার শুনানি বিচারপতি দীপক গুপ্তার এজলাসে পাঠাল সুপ্রিম কোর্ট। সংবাদমাধ্যমকে নিগৃহীতার নাম প্রকাশ করার উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা শীর্ষ আদালতের।
শুক্রবার উন্নাও কাণ্ডে সঙ্কটজনক অবস্থায় চিকিৎসারত নিগৃহীতাকে বিমানপথে দিল্লিতে পাঠানাের সিদ্ধান্তে আগামী সােমবার, ৫ আগস্ট পর্যন্ত স্থগিত রাখার নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই সঙ্গে নিগৃহীতার কাকাকে অবিলম্বে রায়বেরেলি জেল থেকে দিল্লির তিহার জেলে স্থানান্তরিত করার নির্দেশও দিয়েছে আদালত।
এদিন শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, নিগৃহীতা ও তাঁর আইনজীবীকে চিকিৎসার স্বার্থে দিল্লিতে পাঠানাের সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত রাখা হল। মনে করা হচ্ছে, নিগৃহীতার পরিবার এই সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধাগ্রস্ত বােধ করছে। এই কারণে এই বিষয়ে আগামী সােমবার পর্যন্ত নির্দেশ স্থগিত রাখা হচ্ছে। এর আগে নিগৃহীতার বর্তমান আইনজীবী জানান, সঙ্কটজনক অবস্থায় থাকা তরুণী যেহেতু সংজ্ঞাহীন রয়েছে, তাঁকে এখনই দিল্লি নিয়ে যাওয়া উচিত হবে না বলে মনে করছেন তাঁর মা। তাঁর বিশ্বাস, চিকিৎসার জন্য তরুণীকে আপাতত লখনউতে রাখা উচিত।
আইনজীবী আরও জানান, তাঁর মায়ের দাবি, প্রতিদিন হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাঁর মেয়ের চিকিৎসা সংক্রান্ত বুলেটিন প্রকাশ করুন। উল্লেখ্য, গত রবিবার রায়েবেরেলি যাওয়ার পথে ট্রাকের সঙ্গে তাঁদের গাড়ির সংঘর্ষে নিহত হন নিগৃহীতার দুই আত্মীয়া। তিনি নিজে এবং তাঁর আইনজীবী গুরুতর আহত হয়ে লখনউয়ের কিং জর্জ’স মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি হন। আপাতত তিনি ভেন্টিলেশনে রয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে দুর্ঘটনা সম্পর্কে তদন্তে নেমেছে সিবিআই। নিগৃহীতার পরিবারের অভিযােগ, বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গারের ষড়যন্ত্রেই নম্বর প্লেটে কালাে রঙ লেপা ট্রাকটি গাড়িটিকে পিষে দেয়। অভিযােগের ভিত্তিতে বিধায়ককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিজেপিও বহিষ্কার করেছে যােগী আদিত্যনাথ ঘনিষ্ঠ এই বিধায়ককে। এই সেঙ্গারের বিরুদ্ধেই ২০১৭ সালে উন্নাওতে তরুণীকে ধর্ষণের অভিযােগে মামলা বিচারাধীন রয়েছে আদালতে।