• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

‘আগামী দশ বছরে দশ হাজার কোটি টাকার কাজ করবো’, অভিষেক-গড় থেকেই প্রতিশ্রুতি

প্রশান্ত দাস: নির্বাচনী প্রচারের ব্যস্ততা তুঙ্গে! কিন্ত্ত তার মাঝেও নিজের কেন্দ্রের জন্য সময় করে নিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মন্ড হারবারের বিদায়ী সাংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায়৷ শনিবারের বিকেলে জয়নগরের জনসভা সেড়েই পরিকল্পনামাফিক পৌঁছে যান ‘অভিষেক-গড়’ ডায়মন্ড হারবারে৷ এদিন নিজ কেন্দ্রের জন্য প্রথম রোডশো করলেন যুবরাজ৷ সেখানের কপাটহাট থেকে এম বাজার পর্যন্ত আয়োজিত রোডশো শেষে নিজ

প্রশান্ত দাস: নির্বাচনী প্রচারের ব্যস্ততা তুঙ্গে! কিন্ত্ত তার মাঝেও নিজের কেন্দ্রের জন্য সময় করে নিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মন্ড হারবারের বিদায়ী সাংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায়৷ শনিবারের বিকেলে জয়নগরের জনসভা সেড়েই পরিকল্পনামাফিক পৌঁছে যান ‘অভিষেক-গড়’ ডায়মন্ড হারবারে৷ এদিন নিজ কেন্দ্রের জন্য প্রথম রোডশো করলেন যুবরাজ৷ সেখানের কপাটহাট থেকে এম বাজার পর্যন্ত আয়োজিত রোডশো শেষে নিজ কার্যের খতিয়ান তুলে ধরেন জনসমক্ষে৷ এদিনের রোডশোতে পথের দু’ধারে নামে জনপ্লাবন, জনসমাগম হয় নজরকাড়া৷ পুস্প বৃষ্টি করে, উলুধ্বনি, শঙ্খধ্বনির মাধ্যমে জনসাধারণ বরণ করে নেন অভিষেককে৷ যুবরাজও নিজ স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে হাত নাড়িয়ে, করজোরে প্রণাম করে এবং জনসাধারণের দিকে ফুল ছুঁড়ে দিয়ে জনসমর্থন আদায় করেন৷ এদিন রাস্তাঘাট ঢেকে যায় জনতার ঢলে৷ অভিষেকের সাথে একই গাড়িতে দেখা যায় শওকত মোল্লা এবং জাহাঙ্গীর খানকেও৷ রোডশো শেষে বক্তব্য রেখে গত দশ বছরের কার্যের খতিয়ান তুলে ধরেন অভিষেক৷ ডায়মন্ড হারবারবাসীকে ‘পরিবার’ বলে উল্লেখ করে প্রথমেই তিনি বলেন, “নিজের পরিবারের সদস্যদের কাছে কখনও ভোট চাওয়া যায়না৷ আমি যতদিন বেঁচে থাকবো আপনাদের কাছে ভোট চাইবো না তার কারণ আপনারা যাঁরা উপস্থিত হয়েছেন তাঁদের মধ্যে কেউ আমার মা, কেউ বাবা, কেউ ভাই, কেউ বোন, সবাই পরিবারের সদস্য৷” এরপর তাঁর সংযোজন, “আমার জন্ম দক্ষিণ কলকাতায় হলেও আমি সর্বশক্তিমানের কাছে প্রার্থনা করি, আমার মৃতু্য যেন এই ডায়মন্ড হারবারের মাটিতে হয়৷”

সিপিএম এবং বিজেপির প্রার্থীরা যখন ঘুমোন, তখনও ডায়মন্ড হারবারে উন্নয়নের কাজ হয়, মন্তব্য অভিষেকের৷ পাশাপাশি দিয়েছেন কিছু প্রতিশ্রুতি৷ তাঁর বক্তব্যের সমর্থনে তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, “দশ বছরে অভিষেক পাঁচ হাজার পাঁচশো আশি কোটি টাকার কাজ করেছে৷ মুখে বলছি না, তার হিসেব প্রতি বছর দিয়েছি৷ বিজেপি সিপিএমের কোনো ছোট, বড় নেতা পেরেছেন মানুষকে হিসেব দিতে? পারেননি৷ তাহলে হিসেব অনুযায়ী, একবছরে পাঁচশো আটান্ন কোটি টাকার কাজ হয়েছে৷ অর্থাৎ এক মাসে পয়তাল্লিশ কোটি টাকার কাজ হয়েছে৷ সুতরাং প্রত্যেক দিন এক কোটি পঞ্চান্ন লক্ষ টাকার কাজ হয়েছে এই ডায়মন্ড হারবারে৷ এক ঘন্টায় হয়েছে সাড়ে ছয় লাখ টাকার কাজ৷ বিজেপি ও সিপিএমের প্রার্থী যখন বাড়িতে নিদ্রায় নিমজ্জিত ছিলেন তখনও ডায়মন্ড হারবারে আঠেরোশো চুয়ান্ন কোটি টাকার কাজ হয়েছে৷ আমাদের লক্ষ, আগামী দশ বছরে দশ হাজার কোটি টাকার কাজ করা৷” অভিষেক আরও বলেন, “পানীয় জলের ব্যবস্থা নির্বাচন শেষে তিন থেকে চার মাসের মধ্যে সর্বত্র করে দেবো৷” একের পর উন্নয়নমূলক কার্যের হিসেব দিয়ে গেছেন অভিষেক৷ তাঁর তালিকায় রয়েছে শ্রদ্ধার্ঘ্য থেকে পথশ্রী৷ অভিষেক বলেন, “আমি যখন শ্রদ্ধার্ঘ্য ভাতা ঘোষণা করেছিলাম, তখন এই বিজেপি ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করেছিল৷ আজ শ্রদ্ধার্ঘ্য ভাতা গোটা দেশে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যা ভারতে কেউ করতে পারেননি৷ ডায়মন্ড হারবারে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দিন, পথশ্রীতে ২০০ কোটি টাকার রাস্তা তৈরী করে নজির গড়ছি৷ ডায়মন্ড হারবারের ফুটবল টিমও আগামীদিনে আইএসএল খেলবে৷ সৌন্দর্যায়নের কাজ করতে গিয়ে একটি রাস্তা ভেঙে গিয়েছিল৷ সুজন চক্রবর্তী কটাক্ষ করে বলেছিলেন, অভিষেক বন্দোপাধ্যায় ডায়মন্ড হারবারের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন৷ ২৪ ঘন্টার মধ্য সেই রাস্তা মেরামত করে দিয়েছি, যা গোটা দেশে কেউ করেনি৷”

এবার ৪ লক্ষের ব্যবধানে অভিষেককে জেতানোর আর্জি জনসাধারণকে৷ ভোট ব্যবধানের নিরিখে দেশে ডায়মন্ড হারবারকে এক নম্বর করার আর্জি অভিষেকের৷ তাঁর ভাষায়, “আগামী ২৩ থেকে ৩০ তারিখ শুধু ডায়মন্ড হারবারে থাকবো, কোথাও যাবো না৷ যে বুথে দরকার হবে সেই বুথে যাবো৷ ১ তারিখ ভোটের দিন আমি আমডাঙ্গায় থাকবো৷ সবার ওপর নজরদারি থাকবে৷ চিন্তা করবেন না, নিজের ভোট নিজে দেবেন৷ আমি আপনাদের কাছে ভোট চাইবো না, আমি আপনাদের কাছে ৪ লক্ষের ব্যবধান চাইবো৷ জয়ের ব্যবধানে ডায়মন্ড হারবারকে দেশে এক নম্বরে রাখতে হবে৷” এদিন ‘ডায়মন্ড হারবার মডেল’ এর উত্থান প্রসঙ্গে স্মৃতিচারণা করে অভিষেক বলেন, “করোনা অতিমারীতে আমার ডায়মন্ড হারবারে আমি একটা মানুষকে অভুক্ত থাকতে দিইনি৷ কমিউনিটি কিচেন খুলে মানুষের মুখে খাবার তুলে দিয়েছে এই তৃণমূলের কর্মীসমর্থকেরা৷ কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে একদিনে ৫০ হাজার টেস্ট করিয়ে আমরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলাম, সেই থেকে শুরু হয়েছে ডায়মন্ড হারবার মডেল৷” বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেন, “আগামী ভোট শুধু তৃণমূলকে জেতানোর ভোট নয়, যাঁরা আমাকে ছোট করতে গিয়ে এই ডায়মন্ড হারবারের মাটিকে ছোট করেছে তাঁদের ল্যাজে গোবরে করার ভোট৷ যাঁরা বছরের পর বছর টিভির পর্দার সামনে বসে আমার বিরোধিতা করে, তাঁরাই ভোট ঘোষণার পর ডায়মন্ড হারবারের প্রার্থী খুঁজে পায়না! বিজেপির এই কেন্দ্রে প্রার্থী বাছাই করতে ১ মাস লেগেছে৷ তাহলে এজেন্ট খুঁজতে কতদিন লাগবে? বিজেপি টাকা দিয়ে এজেন্ট খুঁজছে৷ আপনাদের টাকা দিলে নিয়ে নেবেন৷ ওটা আপনাদেরই হকের টাকা৷”

আক্রমণ শানাতে ছাড়েননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও৷ একই তীরে বিঁধেছেন সিপিএমকেও৷ তিনি কটাক্ষের সুরে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী একবার এখানে সভা করে বলেছিলেন, ভাইপোর পার্টি অফিসে তালা পড়ে যাবে৷ আমি আপনাকে বলবো, এইখানে বিজেপির ঝান্ডা ধরার লোক নেই৷ আমার অফিস খোলা, আপনি বন্ধ করতে পারেননি৷ এটি মানুষের ক্ষমতা৷ শুভেন্দু অধিকারী, দিলীপ ঘোষ, মহম্মদ সেলিম, অধীর চৌধুরী সারা বছর আমার বিরোধিতা করেন৷ এইখানে এসে আমার বিরুদ্ধে দাঁড়ান না কেন, কে বারণ করেছেন? কেন্দ্রীয় সংস্থার আধিকারিকরা লড়ুক আমার বিরুদ্ধে! বিজেপির যদি ক্ষমতা থাকে তাহলে রিপোর্ট কার্ড নিয়ে লড়াইয়ে নামুক, ১০-০ গোল দিয়ে ল্যাজে গোবরে করে মাঠের বাইরে করে দেবো৷” এরপরই বিজেপি নেতৃত্বদের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলেন, “২৩ তারিখের পর থেকে এখানে থাকবো, কার কত ক্ষমতা আছে মঞ্চ বেঁধে আমায় জানাবেন আমি যাবো৷ প্রধানমন্ত্রীকে বলবো, আপনি যদি একশোটা সভাও ডায়মন্ড হারবারে করেন তাহলেও ৪ লক্ষের ব্যবধান আটকাতে পারবেন না, আপনার সিবিআইও আটকাতে পারবে না৷”