নিজস্ব প্রতিনিধি— কংগ্রেস এবং সিপিএম যৌথভাবে বাংলার শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের হাত শক্ত করেছে, এটি বিজেপির পুরোনো অভিযোগ৷ এবার এই ইসু্যতেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকে বিঁধলেন রাজ্যসভার সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য৷ শনিবার দুপুরে সাংবাদিক বৈঠক করে একাধিক ইসু্যতে তৃণমূল এবং কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সরব হলেন তিনি৷ ‘‘কংগ্রেসে থেকে তৃণমূলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা যায় না!’’ মন্তব্য শমীকের৷ নিজ বক্তব্যের সমর্থনে শমীক বলেন, ‘‘অধীর চৌধুরী যদি চাইতেন তৃণমূলকে বাংলা থেকে উৎখাত করতে তাহলে কংগ্রেসের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেন না৷ কংগ্রেস এবং তৃণমূল দ্বিচারিতার রাজনীতি করছে! বাংলায় অধীর চৌধুরী তৃণমূলের বিরোধিতা করেন আবার দিল্লিতে গিয়ে কংগ্রেস এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় নেতৃত্বরা একই আসনে বসেন৷ আবার মল্লিকার্জুন খাড়গে অধীর চৌধুরীর বিরোধিতাও করছেন৷ এই দ্বিচারিতার রাজনীতি কতদিন চলবে? হয়, অধীর চৌধুরী কংগ্রেস ছাড়ুন নয়তো মল্লিকার্জুন খাড়গে অধীর চৌধুরীকে বহিস্কার করুন৷ এই দুটোর মধ্যে একটা করে দেখান৷’’ এসএসসি প্রসঙ্গেও এদিন রাজ্যের শিক্ষা দফতরকে বিঁধলেন শমীক৷ তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যের শিক্ষা দফতরের উচিৎ যে ওএমআর শিট গুলো পাওয়া যাচ্ছে না, সেগুলোর ব্যবস্থা করা৷ ব্যালট, ওএমআর দুটোই খেয়ে ফেলেছে! আমরা সুপ্রিম কোর্টের আগামী রায়ের জন্য অপেক্ষা করে আছি৷ এসএসসি কি হলফনামা দেবে এবং যোগ্য ও অযোগ্যদের পৃথকীকরণের প্রক্রিয়াই বা কি হবে সেসব বিষয়ের জন্য আগামী রায়ের দিকে তাকিয়ে আছেন যোগ্য প্রার্থীরা৷’’
সন্দেশখালি প্রসঙ্গেও মুখ খুলেছেন শমীক৷ স্টিং ভিডিও যে ‘ফেক’ সেটি আবারও বললেন তিনি৷ এ প্রসঙ্গে শমীক বলেন, ‘‘সন্দেশখালির ১ নম্বর ব্লকের মানুষেরা এখনও ভীত, সন্ত্রস্ত৷ এখনও একের পর এক জমি দখলের অভিযোগ আসছে সন্দেশখালি থেকে৷ শাসকদল যেভাবে মিথ্যে ভিডিও তৈরী করে স্বতঃস্ফূর্ত জনপ্রতিরোধকে মিথ্যে প্রমাণ করার চেষ্টা করছে, তা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার৷’’ একই ইসু্যতে আক্রমণ শানিয়েছেন শেখ শাহজাহানকেও৷ রাজ্যের শাসকদলই রাজ্যে নৈরাজ্যের পরিস্থিতি তৈরী করেছে, মন্তব্য শমীকের৷ তবে কিভাবে? নিজ বক্তব্যের সমর্থনে কিছু তথ্য পেশ করেছেন তিনি৷ শমীক বলেন, ‘‘গত দু’বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলায় যত রাজনৈতিক হিংসার কারণে খুন হয়েছে তার মধ্যে বেশিরভাগই বলি হয়েছেন তপশিলি জাতি, উপজাতির মানুষেরা৷ দুবরাজপুরে এক পরিবার সংঘবদ্ধভাবে বিজেপিকে ভোট দিয়েছে, এই সন্দেহে সেই পরিবারের মহিলাদের কুমন্তব্য করেছেন তৃণমূলের কিছু স্থানীয় নেতৃত্বরা৷ বেশিরভাগ রাজনৈতিক খুনে অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধেই৷ খাটের তলা থেকে বিপুল অর্থ এবং সোনা উদ্ধার হতে দেখেছি আমরা৷ এটিই বাংলার বর্তমানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি৷’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘এর আগে পশ্চিমবঙ্গে ছত্রাক থাকা অবস্থায় ভ্যাকসিন পাওয়া গিয়েছিলো, এবার দেখা গেলো এনআরএস হাসপাতালে শিশুদের জাল ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে৷ সবমিলিয়ে কার্যত এক চরম নৈরাজ্য তৈরী হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে৷ মানুষের কাছে প্রশ্ন তৈরী হয়েছে, যে সরকার সংবিধানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে নৈরাজ্যের পরিস্থিতি তৈরী করেছে সে সরকার কিভাবে টিকে আছে!’’ এর সাথেই বর্ধমান-দুর্গাপুরের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষের প্রসঙ্গ টেনে এনে নির্বাচনী হিংসার কথা বলেন৷ তাঁর মতে, ‘‘নির্বাচন চলাকালীন বিক্ষিপ্ত হিংসার ছবি কিছু ক্ষেত্রে ধরা পড়লেও বুথের নিকটবর্তী কোনো অঞ্চল রক্তাক্ত হয়নি৷ কোনো মানুষ নিহত হননি এখনও, এটি একটি সদর্থক দিক৷ যদিও আমাদের প্রার্থী দিলীপ ঘোষের কনভয়ে আক্রমণ করা হয়েছে দু’বার, এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই নির্বাচন চলছে৷’’