নিজস্ব প্রতিনিধি— ভারতীয় ফুটবলের আইকন সুনীল ছেত্রীর একটা অধ্যায় শেষ হতে চলেছে আগামী ৬ জুন যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গণে৷ বিদায়ী ম্যাচে সুনীল ছেত্রী খেলবেন কুয়েতের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ ফুটবলের বাছাই পর্বের খেলায়৷ তাই সুনীল চাইছেন কলকাতার ফুটবলপ্রেমীরা সেদিন মাঠে আসুন এবং ভারতীয় দলকে উদ্বু্দ্ধ করুন৷ কলকাতা বলতেই ফুটবলের মক্কা৷ ফুটবলপ্রেমীদের আবেগ এবং ভালবাসা যে কোনও ফুটবলারদের কাছে বড় হাতিয়ার৷ হয়তো বিদেশি ফুটবলাররা ভারত থেকে কিছুটা এগিয়ে থাকলেও, এটা মনে রাখতে হবে ভারতীয় ফুটবলাররা যে কোনও পরিস্থিতিতে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে জানেন৷ আশা করা যেতেই পারে, এই ম্যাচের ফলাফল অন্যরকম হবে৷ অর্থাৎ সুনীলও চাইছেন, এই ম্যাচটা স্মরণীয় করে রাখতে৷ সুনীল যদি গোল করতে পারেন, তাহলে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হবে আর এই ম্যাচটা উৎসর্গ করতে চাইছেন কলকাতার ফুটবলপ্রেমীদের কাছে৷
এই মুহূর্তে ভারতীয় দল ভুবনেশ্বরে রয়েছে প্রশিক্ষণ শিবিরে৷ সেখানেই রয়েছেন সুনীল ছেত্রী৷
অনুশীলন শেষে সব খেলোয়াড়দের এক সারিতে দাঁড় করিয়ে কোচ ইগর স্টিম্যাক বলেছেন, আমাদের দলে সফল অধিনায়ক অবসরের কথা ঘোষণা করেছেন, এই সিদ্ধান্তে আমরা প্রত্যেকেই উজ্জীবিত৷ তার প্রধান কারণ হল, ভারতীয় ফুটবলের জন্য সুনীল যা করেছেন, তা অভাবনীয়৷ তাই সুনীলকে স্যালুট জানানোর জন্য ৬ জুনের ম্যাচটা আমাদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে৷ সুনীলের দায়বদ্ধতা এবং দলের জন্য কী করণীয়, তা প্রতিটি মুহূর্তে উপলব্ধি করা গেছে খেলার মাঠে৷ দলকে নেতৃত্ব দিয়ে সতীর্থ খেলোয়াড়দের অনুপ্রাণিত করেছেন আবার অনেক গুরুত্বপূর্ণ জয় এনে দিয়েছেন সুনীল৷ সেই কারণে ফুটবলারদের কাছে অনুরোধ থাকবে, বিদায়ী ম্যাচে জয় তুলে নিয়ে অধিনায়ককে একটা স্মরণীয় মুহূর্ত উপহার দেওয়া৷ গত দু’দশক ধরে সুনীল ছেত্রী ভারতীয় দলকে অনেককিছু দিয়েছেন৷ দেশের জন্য সবসময় খেলার অঙ্গীকার নিয়েছেন৷ সুনীলের পরিচয় সুনীলই, এটা মনে রাখতে হবে৷ একটা দিন জীবনে সবার জন্যই আসে৷ দেশের জার্সি গায়ে দিয়ে প্রথমবার খেলার জন্য যে অনুভূতি, তা আজও সুনীলকে ভাবায়৷ সুনীলের কাছে তা অবিশ্বাস্য হয়ে রয়েছে৷ তাঁর জীবনের প্রথম কোচ সুখবিন্দর সিং যখন বলেছিলেন ভারতীয় দলে তুমি প্রথম একাদশে রয়েছ৷ অবাক হয়ে সুনীল বলেছিলেন, সত্যিই কি তাই! যখন খেলোয়াড়দের নাম ঘোষণা করা হয়, তখন সুনীল নামটা শুনে ভগবানের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন আমাকে সাহস দাও৷ ভারতের হয়ে প্রথম মাঠে নামার সেই অনুভূতি আজও সুনীলের মনে খেলা করে যায়৷ আর অভিষেক ম্যাচেই গোল, সেটাও তাঁর কাছে অবিস্মরণীয় হয়ে রয়েছে৷
টানা উনিশটা বছর অসহ্য চাপ ও খুশির মেজাজে সুনীল ছেত্রী যে ফুটবল খেলেছেন, তা ইতিহাস হয়ে থাকবে৷ ব্যক্তিগতভাবে তিনি কোনওদিনই স্বার্থের পিছনে ছোটেননি৷ দেশকে কীভাবে আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছে দেওয়া যায়, তার চেষ্টা করেছেন৷ গোল করার মধ্যে তাঁর যে আনন্দ তা বার বার বলতে চেয়েছেন সুনীল ছেত্রী৷ জীবনের প্রথম ম্যাচের মতো বিদায়ী ম্যাচেও সুনীল গোল করতে চাইছেন৷ হয়তো অনেকসময় ইচ্ছা করলেও সেই ইচ্ছা পূরণ হয়নি৷ তবুও ফুটবলের স্বার্থে কোনওদিনই মাঠ ছেড়ে রিজার্ভ বেঞ্চে বসেননি৷ তাঁর অঙ্গীকার ছিল মাঠে নামো, লড়াই করো এবং দেশের জয় তুলে আনো৷