• facebook
  • twitter
Friday, 18 October, 2024

জ্যোতিষ্কদের নামে উজ্জ্বল ভারতীয় বিজ্ঞানীরা

কৌশিক রায় ভারতকে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান পরিমণ্ডলে সুপরিচিত করিয়েছেন আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রামন, হোমি জাহাঙ্গির ভাবা, বিক্রম সারাভাই, আন্না মানি, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, এ পি জে আব্দুল কালামের মতো নাক্ষত্রিক প্রতিভাধারী বিজ্ঞানীরা৷ তবে, এবারে মহাশূন্যের কয়েকটি জ্যোতিষ্কের নামকরণ করা হয়েছে ভারতের কয়েকজন তরুণ মেধাবী বিজ্ঞানীদের নামে৷ জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার জগতে এই নব প্রজন্মের বিজ্ঞানীদের অবদান

কৌশিক রায়

ভারতকে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান পরিমণ্ডলে সুপরিচিত করিয়েছেন আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রামন, হোমি জাহাঙ্গির ভাবা, বিক্রম সারাভাই, আন্না মানি, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, এ পি জে আব্দুল কালামের মতো নাক্ষত্রিক প্রতিভাধারী বিজ্ঞানীরা৷ তবে, এবারে মহাশূন্যের কয়েকটি জ্যোতিষ্কের নামকরণ করা হয়েছে ভারতের কয়েকজন তরুণ মেধাবী বিজ্ঞানীদের নামে৷ জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার জগতে এই নব প্রজন্মের বিজ্ঞানীদের অবদান নেহাত কম নয়৷

ভারতের মহাকাশচর্চায় প্রাচীনত্বের সন্ধান পাওয়া যায় আর্যভট্ট, বরাহমিহির, খনা এবং ভাস্করাচার্যের গবেষণার মধ্যে দিয়ে৷ এঁদেরই পথ ধরে বর্তমানে মহাকাশচর্চা করছেন উল্কাবিজ্ঞানী বা মিটিওর অ্যাস্ট্রনমার অশ্বিন শেখর, জ্যোতির্বিজ্ঞানী কুমার ভেঙ্কটরামানি, নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের সিনিয়র ফ্লাইট ডাইনামিক্স ইঞ্জিনিয়ার অশোক কে ভার্মা এবং গ্রহের ভূতাত্ত্বিক বা প্ল্যানেটরি জিওলজিস্ট রুতু পারেখ৷ রুতু, মঙ্গলগ্রহ সহ অন্যান্য গ্রহের ভূত্বককে পর্যবেক্ষণ করছেন৷ সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এই চার ভারতীয়, সম্ভাবনাময় মহাকাশবিজ্ঞানীর নামে ৪টি ছোট গ্রহের নাম রেখেছে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রনমিক্যাল ইউনিয়ন (IAU)৷ এর আগে অবহেলিত গণিতজ্ঞ শ্রীনিবাস রামানুজম, সুব্রহ্মণ্যম চন্দ্রশেখর, চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটরামন, বিক্রম সারাভাই এবং ভেইনু বাপ্পুর নামেও কিছু গ্রহের নাম রাখা হয়৷

অশ্বিন শেখরের নামে যে গ্রহটির নাম রাখা হয়েছে সেটি পৃথিবী গ্রহ থেকে ৫.৮৭ কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত৷ প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং দাবাড়ু বিশ্বনাথন আনন্দের নামেও গ্রহদের নাম রাখা হয়েছে৷ বর্তমান ফ্রান্সের পারী মানমন্দিরে ইনস্টিটিউট অব সেলেশ্চিয়াল মেকানিক্সের বিজ্ঞানী হয়ে উল্কার সন্ধান করছেন অশ্বিন৷ মানুষের চোখে এখনও মহাকাশের অনন্ত বিস্তারে লক্ষ কোটি জ্যোতিষ্কের সন্ধান অজানা বলে জানিয়েছেন অশ্বিন৷ সেই জ্যোতিষ্কদের খোঁজার জন্য আরও উন্নত ও শক্তিশালী বেতার দূরবীণের প্রয়োজন৷

ভারতীয় বিজ্ঞানীরা, গ্রহাণু বা অ্যাস্টেরয়েড এবং ধূমকেতুদের খামখেয়ালি ও বিপজ্জনক গতিবিধিকে লক্ষ্য করার জন্য একটি বিশেষ ধরনের সফটওয়্যার তৈরি করেছেন৷ গ্রহাণুগুলির রাসায়নিক উপাদানগুলি সম্পর্কে যদি জানতে পারা যায় তাহলে মহাবিশ্বের উৎপত্তির সম্পর্কে অনেক নির্ভরযোগ্য তথ্য পাব আমরা৷ ধূমকেতু এবং গ্রহাণুদের বিবর্তন সম্পর্কেও আমাদের জ্ঞান বাড়বে৷

‘ক্যাসিনি’ আর ‘অরবিটার’ মহাকাশ যানগুলি থেকে পাঠানো তথ্য অনুসারে জানা গেছে, মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠতলে বরফ আছে৷ সেই বরফ নিয়ে গবেষণা করছেন মহিলা জ্যোতির্বিজ্ঞানী হাইপেশিয়া, অ্যামি জনসন ও ভেরা রুবিনের পদাঙ্ক অনুসারী রুতু পারেখ৷ ৩২ বছর বয়সী এই মহাকাশবিজ্ঞানী মনে করেন, বরফ হল জীবনের প্রথম সূত্রটি তৈরি করার অন্যতম উৎস৷ নাসার ক্যালটেক জেটপ্রপালসন ল্যাবরেটরিতে ইউরোপা ক্লিপার মহাকাশ অভিযানের অন্যতম গবেষিকা হয়ে বর্তমানে কাজ করছেন রুতু পারেখ৷ প্রথমে জৈব-রসায়ন নিয়ে স্নাতকস্তরে পড়াশোনা করলেও পরে দূরসঞ্চার ও ভূবিজ্ঞান, কৃষিবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন মেধাবী বিজ্ঞানতনয়া রুতু৷ এরপরেই মহাকাশ বিজ্ঞানের সঙ্গে ভালোবাসায় জড়িয়ে পড়েন তিনি৷

বর্তমান তরুণ ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞানীদের অনেকেই ছোটবেলা থেকেই আকাশে গ্রহ নক্ষত্রদের পর্যবেক্ষণ করতে ভালোবাসতেন৷ অশ্বিনশেখরের পরিবারের অনেকেই চিকিৎসক৷ তবুও তিনি মহাকাশ বিজ্ঞান এবং আস্ট্রোফিজিক্স বা জ্যোতির্পদার্থবিদ্যাকে ভালোবেসেছেন৷ ‘ইংটি’, ‘ইন্ডিপেন্ডেন্স ডে’, ‘মেন ইন ব্ল্যাক’, ‘টোট্যাল রিকল’, ‘ইনার স্পেস’-এর মতো কল্পবিজ্ঞানের চলচ্চিত্রগুলিও এই তরুণ বিজ্ঞানীর অন্তরে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অনাদি রহস্যের কিনারা করার জন্য অনুসন্ধিৎসু করে তুলেছে৷ তাঁরা চান, অদূরভবিষ্যতে গ্রাম্য এবং আদিবাসী ভারতের দরিদ্র, মেধাবী শিশু-কিশোররাও গ্যালিলিও-কোপার্নিকাস-কেপলার-আর্যভট্টের মতো মহাকাশ-অন্বেষক হয়ে উঠুক৷