দিল্লি, ১৭ মে: ‘দ্য স্টেটসম্যান’ কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কেন্দ্রের মোদি সরকারকে আক্রমণ করলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সদস্য ও প্রাক্তন সাংবাদিক সাগরিকা ঘোষ। তিনি গত দশ বছরে মোদী সরকারের শাসনকালে কেন্দ্রের প্রতিটি পদক্ষেপের সমালোচনা করেন। নোটবন্দি, সিএএ, প্রতিরক্ষা নীতি, বিদেশনীতি, অর্থনীতি ও সর্বোপরি দেশের বেকারত্ব নিয়ে সার্বিক পদক্ষেপকে তুলোধোনা করেন। তিনি দাবি করেন একটা জেনারেশনকে শেষ করে দিয়েছে মোদী সরকার।
শ্ৰীমতী ঘোষ সংবাদ মাধ্যমের ওপর মোদী সরকারের দমন ও আগ্রাসনেরও সমালোচনা করেন। তিনি মোদী সরকারের বিভিন্ন নীতি নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তোলেন। দেশের উন্নয়নে সরকারের কী ভূমিকা রয়েছে? কোন খাতে কী কাজ করেছে? বলেন, মোদী সরকারের পি এম কেয়ার ফান্ড আসলে কি? এই ফান্ডের মাধ্যমে মানুষের কী উপকার হচ্ছে? স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ব্যাপারে এই সরকারের কী ভূমিকা রয়েছে? সরকার কী কী কাজ করেছে? সরকার স্বাস্থ্য খাতে কতটা বরাদ্দ বাড়িয়েছে? শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে ? কতটা বরাদ্দ বাড়িয়েছে?
বেকার সমস্যার সমাধানে সরকারের কী ভূমিকা আছে? যেখানে দেশে দেখা যাচ্ছে, ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সের স্নাতক বেকারদের ৪৪ শতাংশ বেকার। এবং দেশে মোট স্নাতক যুবকদের ৮০ শতাংশ কর্মহীন রয়েছে।
তিনি মোদী সরকারের একক নীতির সমালোচনা করেন। বলেন,”এক নেতা, এক জাতি, এক দল, এক শাসক, এক চিন্তা, এক ভাষা, এক দেবতা, এক মন্দির, এক সংস্কৃতি, এটা আমি ভারতের জন্য সম্পূর্ণ ভুল মনে করি।” তিনি বলেন,”বৈচিত্র্যই আমাদের দেশের শক্তি। প্রত্যেক রাজ্যের আলাদা আলাদা বৈচিত্র্য রয়েছে। এটা তাদের পরিচিতির স্বাক্ষর বহন করে। প্রত্যেক রাজ্যের আলাদা আলাদা চিন্তাভাবনা ও লক্ষ্য রয়েছে।” তাঁর বক্তব্যের সপক্ষে বোঝাতে উদাহরণ হিসেবে বাংলার কথা তুলে ধরেন। তিনি নিজেকে একজন বাঙালি বলে দাবি করেন। তাঁর পরিবারের প্রসঙ্গও আলোচনায় উঠে আসে। তিনি বলেন, “আমি বাঙালি, আমার বাবা-মা, দাদু, ঠাকুমাও বাঙালি। তাঁরা মূলত কলকাতার বাসিন্দা এবং কলকাতার নাগরিক। আমরা বাঙালি হিসেবে নিজেদের স্বচ্ছন্দ বোধ করি। ”
কথা প্রসঙ্গে তাঁর আলোচনায় উঠে আসে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গও। তিনি বলেন, “মমতা বান্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক জীবন, তাঁর লড়াই, জীবন বৃত্তান্ত দেশের অন্যান্য কিংবদন্তি নেতাদের সঙ্গে একই সারিতে বসানো যায়। কোনও মেন্টর ছাড়াই এককভাবে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। ১৯৮৪ সাল থেকে তাঁর সেই লড়াই ও উত্থান ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একদা শক্তিশালী বামফ্রন্টকে বছরের পর বছর লড়াই চালিয়ে ক্ষমতা থেকে হঠিয়েছেন। এরপর রাজ্যে তাঁর দলের সরকার প্রতিষ্ঠিত করেছেন।”
তিনি বলেন,” দেশে মমতা মোদির থেকে কোনও অংশে কম নন। মোদির ক্ষেত্রে আর এস এস সহ আরও অনেক শাখা সংগঠন প্রতিষ্ঠান তাঁকে সহযোগী ভূমিকা পালন করেছে, তাঁকে আজ এই পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। কিন্তু, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এককভাবে লড়াই চালিয়ে যেতে হয়েছে।” তিনি বলেন, “দেশে প্রতিটি মহিলা রাজনীতিবিদের এক বা একাধিক পুরুষ মেন্টর ছিলেন।” উদাহরণ হিসেবে তিনি ইন্দিরা গান্ধী, জয়ললিতা ও মায়াবতীর সঙ্গেও তুলনা টানেন। তিনি বলেন, ” ইন্দিরা গান্ধীর ক্ষেত্রে জওহরলাল নেহেরু, মায়াবতীর ক্ষেত্রে কাঁসিরাম, জয়ললিতার ক্ষেত্রে এম জি রামাচন্দ্রন পুরুষ মেন্টর হিসেবে পাশে থেকে রাজনীতিতে সহযোগিতা করেছেন। সেক্ষেত্রে মমতাদির কেউই ছিলেন না। তিনি এককভাবে লড়াই চালিয়ে রাজনীতির অনেক অনেক বড় বড় মাইলস্টোন অতিক্রম করেছেন।”