• facebook
  • twitter
Saturday, 19 October, 2024

শোকার্ত সেই পরিবারের সঙ্গে দেখা করলেন অধীর চৌধুরী

বাবার দেহ সৎকার করে পরিবারের ৩৫ সদস্য গিয়েছিলেন ভোট দিতে কুশলকুমার বাগচী, বহরমপুর, ১৫ মে– মুর্শিদাবাদের বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের নির্বাচন ছিল ১৩ মে৷ ঠিক তার আগের দিন অর্থাৎ ১২ মে রাতে বেলডাঙ্গা থানার পুলিন্দা গ্রামের ব্যানার্জী পাড়ার বাসিন্দা কৃষ্ণচন্দ্র প্রামাণিক (৭২) এর মৃতু্য হয়৷ দীর্ঘদিন ধরে তিনি অ্যাপেনডিক্স রোগে আক্রান্ত ছিলেন৷ রবিবার রাতে অবস্থার অবনতি হলে

বাবার দেহ সৎকার করে পরিবারের ৩৫ সদস্য গিয়েছিলেন ভোট দিতে

কুশলকুমার বাগচী, বহরমপুর, ১৫ মে– মুর্শিদাবাদের বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের নির্বাচন ছিল ১৩ মে৷ ঠিক তার আগের দিন অর্থাৎ ১২ মে রাতে বেলডাঙ্গা থানার পুলিন্দা গ্রামের ব্যানার্জী পাড়ার বাসিন্দা কৃষ্ণচন্দ্র প্রামাণিক (৭২) এর মৃতু্য হয়৷ দীর্ঘদিন ধরে তিনি অ্যাপেনডিক্স রোগে আক্রান্ত ছিলেন৷ রবিবার রাতে অবস্থার অবনতি হলে স্থানীয় হাসপাতালে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেখানেই তার মৃতু্য হয়৷ মৃতু্যর দু’দিন আগে কংগ্রেস অন্ত প্রাণ কৃষ্ণবাবু পরিবারের সদস্যদের বলেছিলেন, একটিও ভোট যেন নষ্ট না হয়৷ তাই ভোটের দিন সকালে কৃষ্ণবাবুর দেহ সৎকার করে এসেই, তার কথা রাখতে কংগ্রেস সমর্থক এই পরিবারের প্রায় ৩০-৩৫ জন সদস্য ছুটে যান ভোট কেন্দ্রে৷ ভোট দেন কংগ্রেস প্রতীকে দাঁড়ানো প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকে৷ এমনটাই দাবী মৃতের ছেলে এবং পরিবারের বাকি সদস্যদের৷ বিষয়টি জানতে পেরেই বুধবার সমবেদনা জানাতে পুলিন্দার ব্যানার্জী পাড়ায় পৌঁছে যান অধীর চৌধুরী৷ কথা বলেন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে৷ পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি৷

মৃতের ছেলে উত্তম প্রামাণিক বলেন, “ভোটের আগের দিন ১২ মে সন্ধ্যা সাতটায় বাবার মৃতু্য হয়৷ পরদিন ১৩ মে সকাল ছ’টার সময় আমরা বাবাকে নিয়ে যাই শ্মশানে৷ কাজ সেরে সকাল সাডে় দশটার সময় আমরা বাডি় এসেছি৷ ত্রিশ মিনিট পরে এগারটার সময় আমরা ভোট দিতে গিয়েছি৷ আমরা যেভাবে প্রতিবার ভোট দিই৷ এবারও সেভাবে ভোট দিয়েছি৷ গঙ্গার ঘাটে বাবার সৎকার সেরে এসেই আমরা সবাই ভোট কেন্দ্রে গিয়েছি৷ আমরা অধীর চৌধুরী এবং কংগ্রেসকে ভালোবাসি৷ সে কারণেই সৎকার সেরে এসেই বাডি়র সবাইকে বলি, চল ভোটটা দিয়ে আসি৷” বাডি়র এরকম পরিস্থিতিতেও তারা ভোট দিতে গেলেন? উত্তরে তিনি বলেন, “ভোট তো দিতেই হবে৷ বাডি়তে মৃতু্য হলেও দিতে হবে, না হলেও দিতে হবে৷ বরং ভোটটা না দেওয়া বা নষ্ট করা মানে তো আমাদের নিজেদের ভুল৷ কাকাতো ভাই, বোন নিয়ে আমাদের পরিবারে ৩০-৩৫ জন ভোটার৷” তিনি আরও বলেন, “অধীর চৌধুরী আমাদের এলাকাকে ভালোবাসেন৷ অনেক ছোটো থেকে উনি এই গ্রামে আসেন৷ ওনার পিসিমার বাডি় ছিল এই গ্রামে৷ পিসিমার সঙ্গে দেখা করতে এসে গ্রামের মাঠে বাবাদের সঙ্গে খেলতেন৷ তার সঙ্গে আমার ছোটো ভাইয়ের আজও পরিচয় রয়েছে৷ আমার দাদু এবং বাবা প্রথম থেকেই কংগ্রেসকে ভোট দেয়৷ অধীর চৌধুরীকে বাবা খুব ভালোবাসতেন৷ মৃতু্যর দু’দিন আগেও বাবা কংগ্রেস এবং অধীর চৌধুরীর কথা বলেছেন৷ যে কোনো পরিস্থিতিতে আমাদের একটাও ভোট যেন নষ্ট না হয়, সে কথা বলেছেন৷ তাই আমরা ভোটের লাইনে দাঁডি়য়ে সবাই মিলে ভোট দিয়েছি৷ বাবার মৃতু্য সংবাদ শুনে অধীরবাবু সমবেদনা জানাতে এসেছিলেন৷ আমাদের ভালো লেগেছে৷ ”

অধীর চৌধুরী বলেন, “এখানে একটি যৌথ এবং বড়ো পরিবার৷ প্রায় ৭০ জন ভোটার এই পরিবারের৷ ভোটের আগের দিন রাতে এই পরিবারের একজনের মৃতু্য হয়৷ তার পরের দিন তারা দাহ করে সোজা এসেছে আমাদের ভোট দিতে৷ স্বাভাবিকভাবেই এই শোকাহত পরিবার যেভাবে তাদের আবেগকে দমন করে ভোটে জেতানোর জন্য ভোট দিতে এসেছে৷ এটা আমার কাছে একটা অভূতপূর্ব ঘটনা বলে মনে হয়েছে৷ তাই যখন এখানকার নেতৃত্বের কাছে খবরটা পেলাম, তখন নে হল একবার দেখা করি৷ সেই দেখাটাই করতে এসেছি৷ অন্য কিছু নয়৷ আবেগমথিত হয়ে আমি এখানে আজকে এসেছি৷”

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের দিন বহরমপুর থানার গোরাবাজার মাজদিয়া এলাকার বাসিন্দা রেণুকা মাড্ডি তার ছেলের মৃতদেহ মর্গে রেখেই কংগ্রেস প্রার্থী অধীর চৌধুরীকে ভোট দিতে ছুটে গিয়েছিলেন ভোট কেন্দ্রে৷ রেণুকাদেবী আশঙ্কা করেছিলেন, যদি তিনি ভোট দিতে না পারেন, যদি এক ভোটে অধীর চৌধুরী পরাজিত হন, তাহলে তিনি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেন না৷ ভোট পর্ব মিটতেই অধীরবাবু শোকার্ত রেণুকা মাড্ডির সঙ্গে দেখা করেন এবং তার পাশে থাকার আশ্বাস দেন৷ সেই থেকে প্রতি বছর ভাই ফোঁটার দিন বোন রেণুকা দেবীর কাছে ফোটা নিতে যান ‘দাদা’ অধীর৷ পুলিন্দার ব্যানার্জী পাড়ার এবারের ঘটনা সেই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি বলে মনে করছেন মানুষ৷