• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

‘কৃষিজমি নষ্ট করে প্রধানমন্ত্রী সভা করেছেন’ তোপ অভিষেকের

নিজস্ব প্রতিনিধি— টার্গেট এখন ২০ মে এর পঞ্চম দফার নির্বাচন৷ সেই টার্গেটকে জয় করতেই বুধের তাপপ্রবাহকে উপেক্ষা করে জোড়া কর্মসূচি করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়৷ আরামবাগের প্রার্থী মিতালি বাগের সমর্থনে পুরশুড়াতে আয়োজিত জনসভা এবং ব্যারাকপুরের প্রার্থী পার্থ ভৌমিকের সমর্থনে ব্যারাকপুর বড়পোল থেকে জাফরপুর মোড় পর্যন্ত আয়োজিত রোডশো থেকে দফায় দফায় বিজেপিকে আক্রমণ শানান

নিজস্ব প্রতিনিধি— টার্গেট এখন ২০ মে এর পঞ্চম দফার নির্বাচন৷ সেই টার্গেটকে জয় করতেই বুধের তাপপ্রবাহকে উপেক্ষা করে জোড়া কর্মসূচি করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়৷ আরামবাগের প্রার্থী মিতালি বাগের সমর্থনে পুরশুড়াতে আয়োজিত জনসভা এবং ব্যারাকপুরের প্রার্থী পার্থ ভৌমিকের সমর্থনে ব্যারাকপুর বড়পোল থেকে জাফরপুর মোড় পর্যন্ত আয়োজিত রোডশো থেকে দফায় দফায় বিজেপিকে আক্রমণ শানান যুবরাজ৷ এদিন আরামবাগের কৃষিজমি নষ্টের জন্য সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে দায়ী করেন অভিষেক৷ তবে কিভাবে একজন প্রধানমন্ত্রী নিজে কৃষিজমি নষ্ট করতে পারেন? এ প্রসঙ্গে কৃষকদের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে অভিষেক বলেন, “আরামবাগে প্রধানমন্ত্রী গত দুমাসে দুবার এসেছেন৷ কেন? নির্বাচন বলে৷ কোভিডের সময় কবার দেখেছেন? আমি শুনেছি, কৃষিজমি নষ্ট করে প্রধানমন্ত্রী সভা করেছেন৷ যে সরকার কৃষকদের জন্য কালো কৃষি আইন এনে সাতশো কৃষককে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে এবং যে প্রধানমন্ত্রী সভা করার জন্য কৃষিজমি নষ্ট করেছেন, তাঁদের উচিৎ শিক্ষা দেবেন কিনা?” দুই কর্মসূচি থেকে দফায় দফায় অভিষেক নিশানা করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও৷ দুর্গাপূজার প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মন্তব্যের পাল্টা জবাব দেন অভিষেক৷ শাহকে চ্যালেঞ্জ করে তৃণমূল সেনাপতি বলেন, “শ্রীরামপুরে অমিত শাহ সভা করে বলেছেন, মমতা বন্দোপাধ্যায় নাকি দুর্গাপূজায় ছুটি দেন না৷ পাঁচ বছর আগে এসে বলতেন বাংলায় দুর্গাপূজা হয় না৷ আপনি কি বলবেন এই লোকটাকে? চার দিনের দুর্গাপূজায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একমাত্র সরকার যিনি ১০ দিনের ছুটি দেন৷

তোমার যোগী আদিত্যনাথ, হিমন্ত বিশ্বশর্মা, প্রমোদ সাওন্ত কদিনের ছুটি দেন দুর্গাপূজায়? যদি দেখাতে পারেন তাঁরা দুর্গাপূজার প্রসার ঘটনার জন্য আমাদের থেকে বেশি করেছেন, তাহলে আমি রাজনীতি ছেড়ে দেবো৷” রবি ঠাকুরের ছবি উল্টো করে দেওয়া নিয়েও কটাক্ষ অভিষেকের৷ তিনি বলেন, “অমিত শাহ বাংলায় সভা করে আমাদের ধমকিয়ে বলেছিলেন, উল্টো করে সোজা করে দেবেন৷ আর গত পরশু দিন কি দেখলেন? অর্জুন সিংয়ের ছেলে প্রধানমন্ত্রীর হাতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি উল্টো করে দিয়ে রবি ঠাকুরকেই উল্টো ঝুলিয়ে দিয়েছেন৷” অমিত শাহ এক সভা থেকে বলেছেন, বিজেপি ক্ষমতায় আসলে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে একশো টাকা বাড়ানো হবে৷ পাল্টা জবাব দিয়ে যুবরাজের মন্তব্য, “মমতা বন্দোপাধ্যায় পাঁচশো টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন, উনি তা জানেন না৷ যাঁরা কাজ করেন, ব্যবসা করেন তাঁরা সবাই জুন মাসের শেষে নিজের মাইনের থেকে একশো টাকা অমিত শাহকে পাঠাবেন৷ উনি একশো টাকায় বাংলাকে কিনতে চান৷”
“যাঁরা সন্দেশখালি করে মহিলাদের সম্মান লুন্ঠিত করেছে, তাঁরা মহিলাদের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে পারে কোনোদিন?” মহিলাদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে জানতে চান অভিষেক৷ বিজেপি নেত্রীর লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধ প্রসঙ্গে মন্তব্য জনসাধারণকে শুনিয়ে যুবরাজ গর্জে উঠে বলেন, “আপনাদের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার আমরা বুক দিয়ে আগলে রাখব৷ বন্ধ করার ক্ষমতা কোনও নেতার নেই৷ আমি কথা দিয়ে যাচ্ছি৷ প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি বন্ধ করতে চাইলেও পারবেন না৷ এটা চ্যালেঞ্জ তৃণমূল কংগ্রেসের৷” বিজেপি লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধ করতে চায় বলেই মহিলারা লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়ে এর জবাব দিচ্ছেন, আরামবাগের মঞ্চ থেকে দাবি অভিষেকের৷

সন্দেশখালি ইসু্যতেও এদিন বিজেপিকে বিঁধতে ছাড়েননি অভিষেক৷ এর সঙ্গে তিনি টেনে আনেন তপশিলিদের প্রসঙ্গ৷ সরব হন বিজেপির ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’ এর বিরুদ্ধে৷ তাঁর ভাষায়, “বিজেপি নেতারা নিজেদের তপশিলিদের ধারক, বাহক বলে পরিচয় দেন৷ এঁদের ইস্তাহারে উল্লেখিত ইউনিফর্ম সিভিল কোর্ট বাস্তবায়িত হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তপশিলি জাতি, উপজাতি তালিকাভুক্তরাই৷ তপশিলি জাতিদের উপর অত্যাচার সবচেয়ে বেশি হয়েছে যোগী আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশেই৷” আরামবাগের কালো দিন ফিরিয়ে আনতে চাইছে সিপিএম-বিজেপি, মন্তব্য অভিষেকের৷ তিনি বলেন, “২০১১ সালে সিপিএমের হার্মাদরা আমাদের কাছে পরাজিত হওয়ার পর তিন থেকে চারবছর বাড়িতে ঢুকেছিল, বেরোনোর সাহস পায়নি৷ এখন এই হার্মাদরাই লাল জামা পাল্টে গেরুয়া জামা পরে আরামবাগের কালো দিনগুলো ফিরিয়ে আনতে চাইছে৷” এই সূত্রেই বিজেপিকে নিশানা করে তিনি আরও বলেন, “বিজেপিকে ভোট দেওয়া মানে খাল কেটে কুমির আনা৷ ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় হেরে বিজেপি সরকার একশো দিনের কাজের টাকা বন্ধ করে দিয়েছে৷ জনবিরোধী বিজেপি, গরীববিরোধী বিজেপি৷ একশো দিনের কাজের টাকা আটকে রেখেছে যাঁরা, তাঁদের ২০ তারিখ উচিত শিক্ষা দেওয়ার দিন৷”

এদিন অর্জুন গড়ে দাঁড়িয়ে কড়া ভাষায় অভিষেক আক্রমণ করেন অর্জুনকেই৷ ‘আবর্জনা’ বলে কটাক্ষও করেন তাঁকে৷ কেন অর্জুন সিংকে তৃণমূলে নেওয়া হয়েছিল সে প্রসঙ্গের ব্যাখ্যা দিয়ে অভিষেক বলেন, “আমরা অর্জুন সিংকে দলে নিয়েছিলাম এটা প্রমাণ করার জন্য যে অর্জুনের গায়ে যদি বিজেপির জার্সি আর সাংসদ পদটা না থাকে তাহলে সে ভিজে বেড়াল, তৃণমূলে খাঁচা বন্দি হয়েছিল৷ ২০২২-২৩ দু’বছর তৃণমূলে থাকাকালীন তাঁকে কোনোরকম গুন্ডামি করতে দিইনি৷” কটাক্ষের সুরে তাঁর আরও সংযোজন, “তৃণমূল অত বোকা নয়৷ আমরা তাঁকে বার করে দিয়েছি৷ আবার ওই পচাটাকে নিয়েই বিজেপি প্রার্থী করেছে৷ ভ্যাটে বিজেপির স্টিকার লাগিয়ে দেবেন৷ সব আবর্জনা! আমরা পরিষ্কার করছি আর ওঁরা মাথায় তুলছে! এখন যে বিজেপির জার্সিটা গায়ে পরেছেন, সাংসদের ভোটে হারার পর সেটা খুলে ফেলে দেবেন৷ এরপর তৃণমূলে আসলে আমি কথা দিয়ে যাচ্ছি, দলে নেবো না৷ কিন্ত্ত তাঁকে হারানোর দায়িত্ব আপনাদের নিতে হবে৷” ব্যারাকপুরে দাঁড়িয়ে স্মৃতিচারণা যুবরাজের৷

জনসাধারণকে সতর্কবার্তা দিয়ে তিনি বলেন, “চোখ বন্ধ করে ভাবুন ২০১৯ সালের ২৩শে মে বিজেপি জেতার পর ব্যারাকপুর, নৈহাটি, শ্যামনগর, ভাটপাড়া, কাঁকিনাড়ার বিভিন্ন জায়গায় কি পরিস্থিতি করেছিল! জল্লাদরা উল্লাস পর্বে ব্যারাকপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ধারাবাহিক ভাবে সন্ত্রাস চালিয়েছিল বাংলা দখল করবে বলে৷ আর তৎকালীন পুলিশ ছিল নির্বাচন কমিশনের অধীনে৷ ” ব্যারাকপুরের মাটি থেকে এই পরিস্থিতি বদলের ডাক দেন সেনাপতি৷ এদিন ব্যারাকপুরের অসংখ্য পাটকল, চটকল গুলো বন্ধ হওয়ার পেছনেও অভিষেক দায়ী করেছেন এই বিজেপি সরকারকে৷ বিজেপি ধর্মের নামে ভোট চায়, মন্তব্য তৃণমূলের৷ এ প্রসঙ্গে অভিষেকের মত, “মন্দির-মসজিদ নির্মাণ করতে গেলে নির্বাচিত হতে হয়না, মায়েদের চোখের জল মোছাতে হলে নির্বাচিত হয়ে জনপ্রতিনিধির কাজ করতে হয়৷ আমি ব্রাহ্মণ বাড়ির ছেলে৷ আমি স্বামী বিবেকানন্দের গেরুয়া বস্ত্র -এ বিশ্বাস করি, যোগী আদিত্যনাথের গেরুয়া বস্ত্র -এ নয়৷”

দুই কর্মসূচী থেকেই ২০শে মে দিনটির গুরুত্ব তুলে ধরেছেন অভিষেক৷ তিনি বলেন, “আগামী ২০ তারিখ দিনটা ঐতিহাসিক৷ ২০১১ সালের ২০ মে ৩৪ বছরের বাম অপশাসনের অবসান ঘটিয়ে প্রথম বার বাংলার মাটিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছিলেন৷ আর এই ২০ তারিখ আপনারা ভোট দিতে যাবেন৷ এটা কাকতালীয় নয়৷ ” আত্মবিশ্বাসী অভিষেকের কণ্ঠে প্রতিশ্রুতি, “কেন্দ্রে পরিবর্তন হচ্ছেই৷ কেন্দ্রে পরিবর্তন হলেই তিন মাসের মধ্যে বাংলার বকেয়া টাকা কেন্দ্র থেকে এনে আমরা বাংলার উন্নয়নের কাজে লাগাবো৷ ” পাশাপাশি ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়িত হবে চলতি বছরেই, আরামবাগ থেকে জনসাধারণকে স্মরণ করিয়ে দেন যুবরাজ৷ দুই কর্মসূচী থেকেই অভিষেক তথ্য পরিসংখ্যান বা রিপোর্ট কার্ড সামনে রেখে লড়াইয়ে নামার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন বিজেপি নেতৃত্বদের৷ জনসভা হোক কিংবা রোডশো, দুই কর্মসূচীতেই জনপ্লাবন ছিল দেখার মতো৷ আরামবাগের মানুষের ব্যাপক উত্তেজনা প্রত্যক্ষ করে অভিষেক বলেন, “এই ভালোবাসা পয়সা দিয়ে বিজেপি কিনতে পারবে না, অন্তর থেকে আসে৷ এর তিনগুন সুদে আসলে আমি উন্নয়নের মাধ্যমে এই ঋণ শোধ করবো৷ ” অবশেষে আরামবাগের মঞ্চে জনসাধারণের দিকে নতমস্তকে প্রণাম করে অভিষেক নিজ বক্তব্য শেষ করেন এদিন৷