প্রশান্ত দাস: এবার পঞ্চম দফার নির্বাচনকে টার্গেট করে মঙ্গলে জোড়া জনসভা করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়৷ মেদিনীপুরের প্রার্থী জুন মালিয়ার সমর্থনে দাঁতনে এবং পুরুলিয়ার প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতোর সমর্থনে বাঘমুন্ডিতে আয়োজিত জোড়া জনসভা থেকেই যুবরাজ দফায় দফায় আক্রমণ করেন বিজেপিকে৷ কুড়মিরা কেন এখনও তপশিলি উপজাতি তালিকাভুক্ত হলেন না, সে প্রসঙ্গে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ শানান পুরুলিয়া থেকে৷ তিনি বলেন, “২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পুরুলিয়ার সভা করে বলেছিলেন, কুড়মিরা যেন তপশিলি উপজাতি তালিকাভুক্ত স্বীকৃতি পায় তার ব্যবস্থা করবেন৷ আজ পাঁচ বছর হয়ে গেছে, প্রধানমন্ত্রী ছেড়ে দিন যিনি সাংসদ হয়েছিলেন সেই জ্যোতির্ময় মাহাতো আজ অবধি এ বিষয়ে দৃষ্টিপাত করেননি৷” এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “এক মিনিটে অর্ডিন্যান্স এনে তিনবার ইডি ডিরেক্টরের মেয়াদ বাড়াতে পারো তাহলে অর্ডিন্যান্স এনে এটা করতে পারো না কেন? কারণ তাঁরা চাননা আদিবাসীদের যোগ্য সম্মান দিতে৷” দুই সভা থেকেই অভিষেক নিশানা করেছেন দুই কেন্দ্রের বিদায়ী সাংসদকে৷ পুরুলিয়ার বিদায়ী সাংসদ তথা বর্তমানের বিজেপি প্রার্থী জোতির্ময় মাহাতোর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “যদি দেখাতে পারেন জ্যোতির্ময় মাহাতো এই কেন্দ্রের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে একটা উন্নয়নমূলক বৈঠক গত পাঁচ বছরে করেছেন, তাহলে আমি এই পুরুলিয়ায় তৃণমূলের হয়ে ভোট চাইতে আসবো না৷ পলাতক সাংসদ বছরের দশ মাস পড়ে থাকেন রাঁচিতে, এখন নির্বাচনের আগে এসে ভোট ভিক্ষা চাইছেন৷ একটি সার্টিফিকেট সই করাতে গেলে মানুষ তাঁকে পান না, রাঁচিতে দৌঁড়তে হয়! এমন লোককে ভোট দেবেন আপনারা? ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপি জিততে পারেনি বলেই জ্যোতির্ময় মাহাতো পুরুলিয়ার মানুষের হকের টাকা বন্ধ করে দিয়েছেন৷” একইভাবে আক্রমণ শানিয়েছেন বর্ধমান-দুর্গাপুরের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষকেও, যিনি মেদিনীপুরের সাংসদ ছিলেন৷
দিলীপকে নিশানা করে দাঁতন থেকে তিনি বলেন, “আপনাদের বদলা বর্ধমান-দুর্গাপুরের মানুষ নিয়ে নিয়েছেন৷ আগের বারের যিনি প্রার্থী ছিলেন, এখান থেকে দাঁড়ালে ২ লক্ষ ভোটে হারতেন৷ তাঁকে বর্ধমান-দুর্গাপুরের মানুষ জবাব দিয়ে দিয়েছে৷ আগামীদিন ভোটবাক্স খুলবে, তাঁর পরাজয় সময়ের অপেক্ষা৷” তিনি আরও বলেন, “এই মেদিনীপুরের দাঁতনের জন্য দিলীপ ঘোষ কটা রাস্তা, হাসপাতাল, শিক্ষাকেন্দ্র, বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে এসেছেন গত পাঁচ বছরে?” দিলীপ ঘোষকে কেন এই কেন্দ্রে বিজেপি দাঁড় করায়নি? প্রশ্ন অভিষেকের৷ সন্দেশখালি ঘটনায় উঠে এসেছে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নাম৷ অভিষেকের ভাষায়, “তাঁরই শাগরেদ মেদিনীপুর প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পাল৷ যিনি কয়েক মাস আগে একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, সন্দেশখালিকে আমরা নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুরের থেকেও বড়ো করতে চাইছি৷ অর্থাৎ এমনভাবে পরিবেশন করবে যেন এই আন্দোলন নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুর আন্দোলনের থেকেও অনেক বড়ো৷ গোটা সন্দেশখালি ঘটনার মূল প্রযোজক হলেন শুভেন্দু অধিকারী, আর তাঁরই অ্যাসিস্ট্যান্ট মেদিনীপুরের প্রার্থী৷” সন্দেশখালি নিয়ে পুরুলিয়া থেকেও এদিন সুর চড়িয়ে অভিষেক বলেন, “নির্বাচনের কয়েক মাস আগে কয়েকটা ভোটের জন্য গোটা বাংলার সম্মান কাছে নষ্ট করেছে৷
মহিলাদের সম্ভ্রম ২০০০ টাকার বিনিময়ে দিল্লির কাছে তল্পিবাহকতা করে লুন্ঠিত করেছে এই জ্যোতির্ময় মাহাতোর দল৷” মহিলাদের উদ্দেশ্যে কুকথা বলায় শুভেন্দুর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন অভিষেক৷ এবার একই তীরে অগ্নিমিত্রাকে বিঁধে তিনি বলেন, “অগ্নিমিত্রা একবারও এর প্রতিবাদ করেছে?” বিজেপি প্রার্থী ভোট চাইতে আসলে তাঁকে প্রশ্ন করার নির্দেশ দেন অভিষেক৷ সন্দেশখালি ঘটনায় অগ্নিমিত্রা অসম্মতি জ্ঞাপন করলে তাঁকে সাংবাদিক বৈঠক করে প্রকাশ্যে বিবৃতি দিতে হবে, জনসাধারণকে উপদেশ অভিষেকের৷
অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকরী হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন আদিবাসী, ভূমিজ, কুড়মি, তপশিলি জাতি, উপজাতি তালিকাভুক্ত মানুষেরা৷ দেশ জুড়ে একই আচার আচরণ কার্যকরী হবে, কোনো জাতির নিজস্বতা থাকবে না৷ ইউনিফর্ম সিভিল কোর্ট প্রসঙ্গে এমনই বলেন অভিষেক৷ জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো ভোট চাইতে এলে তাঁকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার এবং এই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে প্রশ্ন করার নির্দেশ দেন যুবরাজ৷ জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো যদি অভিন্ন দেওয়ানি বিধির বিরোধী হন এবং সাংবাদিকদের সামনে বিবৃতি দেন, তাহলে অভিষেক তৃণমূলের হয়ে ভোট চাইতে যাবেন না, এমনটাও বলেন তিনি৷ পাশাপাশি রিপোর্ট কার্ড নিয়ে লড়াইয়ে নামার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন জোতির্ময়কে৷
সাধারণ মানুষকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে তিনি বলেন, “দিল্লিতে কুড়ি হাজার কোটি টাকা খরচা করে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন তৈরী হচ্ছে আর বাংলার মানুষের টাকা বন্ধ তার কারণ আপনারা ধর্মের নামে ভোট দিয়েছিলেন, কর্মের নামে নয়৷ আজ বুঝতে পারছেন বিজেপিকে ভোট দেওয়া আর খাল কেটে কুমির আনা এক?” তপশিলিদের ওপর অত্যাচারে বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশ প্রথম রাজ্য, পুরুলিয়া থেকে স্মরণ করিয়ে দেন অভিষেক৷ তিনি আরও বলেন, “মধ্যপ্রদেশে এক তপশিলি ভাইয়ের ওপর এক বিজেপি নেতা প্রস্রাব করেছিলেন, সেই ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল৷ এঁদের থেকে শিক্ষা নিতে হবে?” প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ শেষ হতে চলেছে, মন্তব্য অভিষেকের৷ তিনি বলেন, “আগামী ২৫ তারিখ আপনারা ভোট দিতে যাবেন৷ তখন কেন্দ্রের মোদী সরকারের মেয়াদ ১০ দিনের৷ ভোটবাক্স খুললেই এঁদের খেলা শেষ৷” অভিষেকের বার্তা, “সবাইকে অনুরোধ করব খালি জোড়াফুলে ভোট দিলে হবে না৷ ওঁরা আপনাদের যে ভাবে ঠকিয়েছে, আপনারা এমন ভাবে জবাব দেবেন, আগামী ৫০ বছর যেন হাডে় হাডে় টের পায় বিজেপি৷”