নিজস্ব প্রতিনিধি— সত্যিই ‘চিরদিন কাহারো সমান নাহি যায়’৷ সোমবার চতুর্থ দফা ভোটের দিন বীরভূমে এ কথাটা আরও বেশি করে মনে পড়ছিল৷ এদিন বোলপুরের নীচুপট্টিতে অনুব্রত মণ্ডলের বাড়িটা ছিল শুনশান৷ আশেপাশে কোথাও কোনও ঢাকের আওয়াজ (চ.ডাম চড়াম তো নয়ই) ভেসে আসছিল না৷ অনুব্রতর নীলরঙা বাড়িটার পাশে কৃষ্ণনাম চলছিল৷ সেই নামগানে কেমন যেন বিষাদ ছড়িয়ে যাচ্ছিল বাতাসে৷ বা.ড়িটার সমস্ত দরজা জানলা বন্ধ৷ কোনও মানুষ ভেতরে বাস করছে কিনা বাইরে থকে ঠাহর হয় না৷ বাড়ির একতলার শাটার টানা ছিল৷ শুধু বাড়িটার ছাদের ওপরে হলদেটে রঙের একটা ধর্মীয় পতাকা উড়ছিল পতপত করে৷ যা বিজেপির পতাকা বলে প্রচার চালানোর চেষ্টা করেছে অনেকেই৷ একসময় অনুব্রতর বাি.ড়র দরজা খুলে বেরিয়ে আসেন ওই বাড়ির প্রহরায় থাকা কয়েকজন পুলিশ কর্মী৷
অনুব্রত এখন তিহার জেলে বন্দি৷ তবু বোলপুরে তাঁর বসত বাড়িটি পাহারা দিচ্ছেন নিরাপত্তাকর্মীরা৷
অথচ গত লোকসভা ভোটের সময়েও চিত্রটা ছিল সম্পূর্ণ অন্যরকম৷ ভোটের দিন অনুব্রত মণ্ডল তথা ‘কেষ্ট’ শিবের মাথায় জল ঢেলে তবে বাড়ি থেকে বের হতেন৷ এরপর সোজা গাড়িতে চেপে পৌঁছে যেতেন নেতাজি রোডে তৃণমূল কংগ্রেসের পার্টি অফিসে৷ সেখানে চলত গুড়-বাতাসা বিতরণের পর্ব৷ গ্রীষ্মের দাবদাহ থেকে স্বস্তি দিতে৷ তারপর মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন থাকত৷ ভোট পর্ব একটা উৎসবের ছোঁয়া পেত৷ আজ সেসব অতীত৷ এখন অনুব্রত মণ্ডল এই বোলপুরের মাটি থেকে বহু দূরে তিহার জেলের গারদের আঁধারে বন্দি৷ একদিন যাঁর দাপটে নির্বাচনের সময় সরগরম হয়ে থাকত অনুব্রত মণ্ডলের বাড়ি, সেই বাড়ি এখন খাঁ খাঁ করছে সেই বাড়ি৷ মনে পড়ে যাচ্ছে সুমন চট্টোপাধ্যায়ের গানটা — ‘আজকে যে মুখে মারে বিশ্ব, নির্বাক হয়ে যাবে কাল সে…’৷ একদিন ভোটের আগে মিটিং মিছিলে অনুব্রতই ছিলেন ভরসা৷ ‘কেষ্টবুলি’তে চর্চা চলত গোটা রাজ্যে৷ বিরোধীরা কটাক্ষ করতেন৷ সোস্যাল মিডিয়ায় অনুব্রত মণ্ডলের নাম বদলে হয়ে গিয়েছিল ‘অনুমাধব’৷ আজ সেই অনুব্রত অতীত হয়ে গিয়েছে৷ তাঁর কথা আর ক’জন ভাবে?
উল্লেখ্য, ২০১৯ এবং ২০২১ একুশ সালের নির্বাচনে কমিশনের নির্দেশে বোলপুরেই গৃহবন্দি থাকতে হয়ে হয়েছিল৷ কিন্ত্ত তখনও অনুব্রতর অস্তিত্ব ছিল৷ নেপথ্যে থেকেই তিনি ভোট পর্ব চালাতেন৷ কিন্ত্ত গোরু পাচার মামলায় সকন্যা অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হয়েছেন৷ লোকসভা ভোটের আগে বারবার তাঁর শুনানি পিছিয়ে গিয়েছে৷ ফলে চব্বিশের লোকসভা নির্বাচন জেলেই কাটাতে হল অনুব্রত মণ্ডলকে৷ এবার লোকসভার চতুর্থ দফার নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে বোলপুরে৷ সন্ধে পর্যন্ত ৭৭.৭৭ শতাংশ ভোট পড়েছে৷ কিন্ত্ত সেই ভোটের হিসেব-নিকেশের বাইরে তিহারেই বন্দি থাকতে হল অনুব্রত মণ্ডলকে৷
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতারির পরে বীরভূমে ‘কেষ্ট’ ঘরানাতেই দল চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট বার্তা দিয়েছিলেন, যেভাবে দলকে চালনা করতেন অনুব্রত সেভাবেই দল চালাতে হবে৷ সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল কাজল শেখের ওপর৷ তৈরি করা হয়েছিল কোর কমিটি৷ সুব্রত বক্সি বলেছিলেন, মনে রাখবেন কেষ্ট আমাদের মাথার ওপর রয়েছে৷ কিন্ত্ত যে যা-ই বলুন, অনুব্রত মণ্ডলের অভাবে গোটা বোলপুরের ভোটপর্বে কেমন এক শূন্যতা দেখা যাচ্ছে৷
স্থানীয় এক তৃণমূল কর্মী জানিয়েছেন, ‘কেষ্টদা না থাকলে শুধু বীরভূম কেন, গোটা রাজ্যেই নির্বাচনই কেমন যেন মিইয়ে যাচ্ছে৷ কেষ্টদা যেসব কথা বলতেন তা নিয়েই রাজনীতি সরগরম হয়ে উঠত৷ দাদা থাকলে আজকের দিনটাই অন্যরকম হত’৷