আমিনুর রহমান, বর্ধমান, ১১ মে– কলকাতা হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বর্ধমানের দামোদর নদ থেকে দেদার বালি চুরি চলছে৷ এই অভিযোগ ঘিরে ব্যাপক আলোড়ন ছডি়য়ে পডে়ছে৷ অবৈধ বালি খাদান বন্ধে গত সপ্তাহেই কলকাতা হাইকোর্টের কঠোর নির্দেশ জারি হয়েছে৷ রাজ্যকে অবৈধ বালি খাদান বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত৷ এরই পাশাপাশি তিন মাসের মধ্যে রাজ্যকে এব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ নির্দেশে বলা হয়েছে, শুধু মাত্র এফআইআর করে বসে থাকলে হবে না, অবৈধভাবে বালি তোলা বন্ধ করতে হবে৷ বেআইনি বালির গাড়ি, বালি তোলার মেশিন বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি জরিমানা করারও নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট৷ কিন্ত্ত তারপরেও পূর্ব বর্ধমান জেলার খন্ডঘোষ ব্লকের কামালপুর এলাকায় দামোদর নদে জেসিবি মেশিন নামিয়ে চলছে দেদার বালি লুঠ৷ বালি চুরি করে প্রতিদিন ট্রাক্টরের মাধ্যমে বালি পাচার করছে স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতী৷ এমনটাই অভিযোগ ঘিরে উঠেছে নানান প্রশ্ন৷
দামোদর থেকে দিনের পর দিন রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বালি চুরি হলেও খন্ডঘোষ থানার পুলিশ ও ব্লক ভূমি দপ্তরের ভূমিকায় ক্ষোভ ছডি়য়েছে এলাকায়৷ বেআইনি বালি খাদের বিষয়ে খবর থাকলেও অজ্ঞাত কারণে কোন ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে না বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ৷ অভিযোগ, এই কামালপুর এলাকার দামোদর নদ থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ ট্রাক্টর বালি চুরি করে স্থানীয় মাফিয়ারা পাচার করে দিচ্ছে৷ নদীর যে অংশ থেকে বালি কেটে পাচার করা হচ্ছে সেই জায়গার সরকারি কোনো অনুমোদনই নেই৷ ফলে এই অবৈধ বালি কারবারিদের সঙ্গে স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের অশুভ যোগসাজশ রয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই৷ যদিও খন্ডঘোষ ব্লক ভূমি রাজস্ব আধিকারিক অরিন্দম বিশ্বাস জানিয়েছেন, নদীর যে অংশে মেশিন নামানো আছে সেই জায়গা খন্ডঘোষ ব্লকের আওতায় পডে় না৷ ওই জায়গা বর্ধমান ১ ব্লকের ইদিলপুর মৌজার মধ্যে পড়ছে৷ এছাড়াও বেআইনি ভাবে বালি চুরির খবর পেয়ে অভিযানে গেলে অবৈধ বালি কারবারিরা ট্রাক্টর গুলোকে দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে দিচ্ছে৷ ফলে অভিযানে গেলেও অনেকসময় বেআইনি কারবারিদের নাগাল পাওয়া যাচ্ছে না৷
তবে আমরা রেগুলার অভিযান চালাচ্ছি, বেআইনি বালির গাডি় ধরা হচ্ছে৷ জরিমানাও করা হচ্ছে৷ বালি চুরির কোন অভিযোগ পেলেই পদক্ষেপ নেওয়া হয় দপ্তরের পক্ষ থেকে৷ তবে আসন্ন নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত থাকার জন্য নজরদারিতে কিছু খামতি থাকছে৷ অভিযান অব্যাহত আছে৷’ অন্যদিকে বর্ধমান-১ ব্লক ভূমি আধিকারিক বিশ্বজিৎ ঘোষ জানিয়েছেন, বেআইনি বালি খাদানের বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান চালাই৷ ইদিলপুর মৌজা থেকে যদি মেশিন নামিয়ে বালি চুরির করার কোন অভিযোগ থাকে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে৷’ এদিকে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কামালপুর এলাকা দিয়ে কয়েকশো ট্রাক্টর বালি নিয়ে যাতায়াত করার ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন কার্যত অতিষ্ট হয়ে উঠেছে বলেই অভিযোগ করছেন এলাকার বহু মানুষ৷ এলাকার কিছু বালি মাফিয়া এই বেআইনি বালির কারবারের সঙ্গে যুক্ত বলে জানিয়েছেন এলাকায় বসবাসকারী অনেকেই৷ এলাকাবাসীদের একাংশের অভিযোগ, দিনের পর দিন বেআইনি ভাবে নদী থেকে বালি চুরি করে কিছু ব্যক্তি সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নিজেদের আখের গোছাচ্ছে, কিন্ত্ত পুলিশ বা প্রশাসনকে এই বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছেনা৷ ফলে এই বেআইনি বালি খাদের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে৷ কয়েকমাস আগেও এই অবৈধ বালি খাদ থেকে বেলচা দিয়ে বালি তুলে ট্রাক্টরের লোড করা হচ্ছিল, কিন্ত্ত গত দু মাস ধরে সরাসরি নদীতে জেসিবি মেশিন নামিয়ে বালি তুলে শয়ে শয়ে ট্রাক্টর ভর্তি করে পাচার চলছে৷ নজরদারির কেউ নেই৷ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বর্ধমানের ইদিলপুর ও খন্ডঘোষের কামালপুর এলাকায় কোন বৈধ বালি খাদান নেই৷ স্বাভাবিকভাবেই এলাকাবাসীদের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে৷ এরপরও কি ভাবে নদীর যেখান সেখান থেকে দেদার বালি লুঠ চলছে৷ কাদের মদতে এই বেআইনি কারবারিরা বেপরোয়া, সে সব প্রশ্ন উঠছে৷