• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

মুখে শুধু নারীশক্তির কথা

বিলকিস বানোর কথা অনেকেই জানেন৷ বিলকিসকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করার অনেকদিন পর দেশজুড়ে বিক্ষোভের চাপে ধর্ষকদের গ্রেফতার করতে বাধ্য হয় তৎকালীন গুজরাত সরকার৷ নরেন্দ্র মোদি তখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী৷ প্রধানমন্ত্রী হয়ে নারী ক্ষমতায়ন নিয়ে জ্ঞান-ভাষণ দিতে দিতে ধর্ষকদের প্রত্যেককে বেকসুর খালাস করে দেওয়া হয়৷ সুপ্রিম কোর্টের ভৎর্‌সনার পর আবার তাদের জেল পোরা হয়৷ মণিপুরের সেই তিন মহিলার

বিলকিস বানোর কথা অনেকেই জানেন৷ বিলকিসকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করার অনেকদিন পর দেশজুড়ে বিক্ষোভের চাপে ধর্ষকদের গ্রেফতার করতে বাধ্য হয় তৎকালীন গুজরাত সরকার৷ নরেন্দ্র মোদি তখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী৷ প্রধানমন্ত্রী হয়ে নারী ক্ষমতায়ন নিয়ে জ্ঞান-ভাষণ দিতে দিতে ধর্ষকদের প্রত্যেককে বেকসুর খালাস করে দেওয়া হয়৷ সুপ্রিম কোর্টের ভৎর্‌সনার পর আবার তাদের জেল পোরা হয়৷
মণিপুরের সেই তিন মহিলার কথাও ভোলা যায় না৷ যাঁদের উলঙ্গ করে প্রথমে রাস্তা দিয়ে হাঁটিয়ে পরে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয়৷ প্রতিবাদের ঝড় ওঠার পর দৃষ্টি ঘোরানোর জন্য মণিপুরে মেইতেই-কুকি জাতিদাঙ্গা ও সংঘর্ষ লাগিয়ে দেওয়া হয়৷ এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নারীশক্তি বলে জ্ঞান বিতরণের পরও মণিপুরের ঘটনা নিয়ে একটাও মন্তব্য করেননি৷ এমনকি জাতিদাঙ্গা বন্ধ করার জন্যও মণিপুর যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি৷

উন্নাও-হাথরাস-কর্ণাটক সহ দেশের হাজার হাজার ধর্ষিতার মুখ ভেসে ওঠে স্মৃতিপটে৷ হাথরাসে দলিত মেয়েটিকে উচ্চবর্ণের ছেলেরা ধর্ষণ করে অর্ধমৃত অবস্থায় ফেলে রাখে এবং পরে সে প্রাণ হারালে বিজেপি সরকারের পুলিশ রীতি না মেনে মৃতদেহ পুড়িয়ে দেয় প্রমাণ লোপাট করতে৷ তখনও মোদি নীরব থাকেন৷
‘মোদি কী পরিবার’-এর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ব্রিজভূষণ শরণ সিং-এর বিরুদ্ধে পকসো আইনে অভিযোগ দায়ের হলেও তাঁকে গ্রেফতার করা হয়নি৷ এই বিদায়ী সাংসদের বিরুদ্ধে একটিও কথা বলেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ অথচ মার খেয়েছেন কুস্তিগির সাক্ষী মালিক— ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’-এর এক সময়ের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর৷ এক্ষেত্রেও মোদি চুপ৷ ব্রিজভূষণকে এবারের নির্বাচনে টিকিট না দিলেও বিজেপি প্রার্থী করেছেন তাঁর ছেলেকে৷ অর্থাৎ ‘কন্ট্রোল’ বাহুবলী ব্রিজভূষণের হাতেই দিয়ে রাখলেন মোদি৷ এটাই মোদির ‘নারীশক্তি’৷
যে মুখে মোদি ‘নারীশক্তি’র প্রচার করছেন, সেই একই মুখে তিনি অতি সম্প্রতি কর্ণাটকে গিয়ে ‘দলবদ্ধ ধর্ষক’দের হয়ে ভোটও চাইলেন৷

২০১৪ সাল প্রধানমন্ত্রী হয়ে মোদি তাঁর স্বভাবচিত নাটকীয় ঢঙে বলেছিলেন, ‘বলাৎকার, মহিলাদের উপর নির্যাতনের কথা শুনলে লজ্জায় আমার মাথা হেঁট হয়ে যায়৷ কেন আমরা নির্যাতন রুখতে পারছি না?’
মোদি কী পরিবারের তালিকা আরও দীর্ঘ৷ উন্নাওয়ের বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিং সেঙ্গার শুধু ধর্ষণই করেননি, ধর্ষিতার পরিবারের সদস্যদের একে একে খুন করেছেন৷ বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিটেক পড়ুয়া তরুণীকে ধর্ষণে অভিযুক্ত বিজেপি আইটি সেলের তিন কর্মী, যাদের সঙ্গে মোদির ছবি এখনও উজ্জ্বল৷
কাঠুয়ায় যাযাবর সম্প্রদায়ের একটি শিশু মেয়েকে সাতদিন ধরে ধর্ষণ করেছিল স্থানীয় পুরোহিত থেকে পুলিশ৷ ধর্ষকদের সমর্থনে তখন মিছিলে হেঁটেছিলেন বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা৷

বিজেপির গালভরা ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ প্রকল্প এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে ধর্ষকদের হাত থেকে ‘বেটি বাঁচাও৷’

গত দশ বছরে শুধু মিথ্যারই বেসাতি করে গিয়েছে বিজেপি৷ কৃষকদের আয় বাড়ানো, প্রতি বছর দু’কোটি চাকরি, অর্থনৈতিক মন্দা কমানোর মতো মোদি সরকারের একের পর এক ‘জুমলা’ ধরে ফেলছে দেশের সাধারণ মানুষ৷ কৃষিক্ষেত্র ধ্বংস করতে তিন কালা আইন পাশ করেও আন্দোলনের চাপে তা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন মোদি৷ এখন ভোট চাইতে হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করছেন মোদি৷ মূল্যবৃদ্ধি, বেকারি ও কালো টাকার প্রভাব থেকে দেশকে মুক্ত করার সমস্ত প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থ মোদি সরকার৷ তার উপরে এলআইসি, বন্দর, এয়ারপোর্ট সহ দেশের আরও রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পত্তি শিল্পপতিদের হাতে তুলে দিয়েছেন জলের দরে বিক্রি করে৷

হাথরাস, উন্নাও, মণিপুর, ব্রিজভূষণ কাণ্ডের বীভৎসার পর এবার কর্ণাটকের প্রোজ্জ্বলকাণ্ডকে নরেন্দ্র মোদির ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ কর্মসূচির গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞাপন বলে মনে করা হচ্ছে৷