• facebook
  • twitter
Friday, 20 September, 2024

সম্পদে বাড়বাড়ন্ত

ভারতের ধসে পড়া অর্থনীতিতে গরিব ও মধ্যবিত্তের আয় তলানিতে নামলেও, দেশের এক নম্বর ধনীতম রাজনৈতিক দল হিসেবে উঠে এসেছে বিজেপির নাম৷ দেশ যখন চরম দারিদ্র্যে তলিয়ে যাচ্ছে, ‘ফকির আদমির দল’ সেসময় জমি-বাড়ি কিনে বিপুল ধনসম্পদের রেকর্ড করেছে৷ বিজেপির এই চোখ ধাঁধানো ধনসম্পদের আংশিক কিছু ছবি তুলে ধরেছে সেন্টার ফর মিডিয় স্টাডিজ (সিএমএস)৷ সিএমএস রিপোর্টে জানা

ভারতের ধসে পড়া অর্থনীতিতে গরিব ও মধ্যবিত্তের আয় তলানিতে নামলেও, দেশের এক নম্বর ধনীতম রাজনৈতিক দল হিসেবে উঠে এসেছে বিজেপির নাম৷ দেশ যখন চরম দারিদ্র্যে তলিয়ে যাচ্ছে, ‘ফকির আদমির দল’ সেসময় জমি-বাড়ি কিনে বিপুল ধনসম্পদের রেকর্ড করেছে৷ বিজেপির এই চোখ ধাঁধানো ধনসম্পদের আংশিক কিছু ছবি তুলে ধরেছে সেন্টার ফর মিডিয় স্টাডিজ (সিএমএস)৷

সিএমএস রিপোর্টে জানা যাচ্ছে, ১৯৯৮ সালে দেশের নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলি মোট খরচ করত ৬০ হাজার কোটি টাকা৷ এর মধ্যে মাত্র ২০ শতাংশ খরচ করত বিজেপি৷ এখন দেশে মোট নির্বাচনী খরচের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার কোটি টাকা৷ এর ৪৫ শতাংশ খরচ করছে বিজেপি একাই৷
নির্বাচন কমিশন এখন নির্বাচনী খরচের সীমা বেঁধে দিয়েছে৷ সেই মতো প্রতি লোকসভা কেন্দ্রে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত খরচ করা যেতে পারে৷ কিন্ত্ত কমিশনের এই নির্দেশিকাকে বুড়ো আাঙুল দেখিয়ে চলেছে বিজেপি৷ শাসক দলের বার্ষিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, মোদি ক্ষমতায় আসার পর ২০১৫-১৬ থেকে ২০২২-২৩ সালের নির্বাচন পর্যন্ত মোট খরচ হয়েছে ৫ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা৷ কিন্ত্ত সিএমএস রিপোর্টের দাবি, বিজেপির বার্ষিক রিপোর্টে খরচ কমিয়ে দেখানো হয়েছে৷ সিএমএসের হিসেব, শুধু ২০১৯ সালের ভোটেই শাসক দল বিজেপি খরচ করেছে ২৭ হাজার কোটি টাকা৷

বিজেপি এখন ধনসম্পদে দেশের মধ্যে অন্যতম৷ সব রাজ্যের সব জেলাতেই জমি-বাড়ি-প্রাসাদোপম অফিস৷ সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণের খরচও ক্রমবর্ধমান৷ বিজেপি সূত্রেই জানা গিয়েছে, দলের জমি-বাড়ি-অফিসের বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বছরে ৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা৷ এই হিসেব ২০২৩-এর মার্চ মাসের৷

দলের সভাপতি জে পি নাড্ডা জানিয়েছেন, ‘দেশের ৬৯৪ জেলায় ২৯০টি জেলা অফিস তৈরি হয়ে চালু হয়ে গিয়েছে৷ আরও ৯০০টি জেলা অফিস তৈরি করা হবে৷’ মোদি ক্ষমতায় আসার পরেই দলের আয় বাড়ানোর নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়৷ তাতে সর্বশেষ সংযোজন ছিল নির্বাচনী বন্ডের কলঙ্কিত পথে ‘তোলা’ আদায়৷ বিজেপি প্রকাশিত হিসেবই বলছে, প্রতি বছর বিপুল হারে আয় বেড়েছে দলের৷ ২০১৪-১৫ সালে সেই আয় বেড়ে হয় বছরে ২ হাজার ৪১০ কোটি টাকা৷ ২০১৯-২০ সালে তা আরও বেড়ে হয় ৩ হাজার ৬২৩ কোটি টাকা৷ দ্বিতীয় দফার সরকারে আয় একই হারে বাড়ে৷ ২০২২-২৩ সালে আয় বেড়ে হয় ২ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা৷ ২০২৩-২৪ সালে দলের আয় আরও বেড়েছে৷

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, কোনও শিল্প বা ব্যবসাতেও এত দ্রুত হারে সম্পদের বিপুল বৃদ্ধি ঘটে না, যেভাবে বিজেপির ধনসম্পদ বেড়েছে৷ বিজেপির খরচের একটা অংশ যেমন নির্বাচন খাতে হয়, আরেকটি হয় জমি কেনা ও বাড়ি-অফিস ভবন নির্মাণে৷ দলের বার্ষিক হিসেবে দেখা গিয়েছে, মোদি ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার সময় ২০১৪-১৫ সালে দলের খরচের পরিমাণ ছিল ৩৮.৪ কোটি টাকা৷ মোদি জমানার প্রথম দফার শেষে ২০২১ সালে তা এসে দাঁড়ায় বার্ষিক ২৬৫ কোটি টাকায়৷

শাসক দলের এই বিপুল ধনসম্পত্তি সম্পর্কে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এর পেছনেও রয়েছে বিপুল বেআইনি আয়৷ বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের অর্থ ঘুরপথে জমা হচ্ছে শাসক দলের কোষাগারে৷ এর কিছুটা নির্বাচনী বন্ডে স্পষ্ট হয়েছে৷ যখন দেখা যাচ্ছে শাসক দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সূত্রে বিশেষ শিল্প সংস্থা নানা সরকারি সুবিধা, ভরতুকি, ঋণ মকুব, কর ছাড় পাচ্ছে৷ তার বিনিময়ে তারা ‘তোফা’ হিসেবে বিপুল টাকা দিচ্ছে শাসকের তহবিলে৷ শাসক দলের ধনসম্পদের এমন বাড়বাড়ন্ত আগে কখনও দেখা যায়নি৷