• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

ক্ষুব্ধ আরবিআই

ভারতের মতো দেশে সামাজিক সুরক্ষার নিরিখে সাধারণ মানুষের বলভরসা পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড বা পিপিএফের সঞ্চয়৷ সেখানে কম সুদ থাকলে তা মানুষকে অসুরক্ষিত ও ঝুঁকিপূর্ণ সঞ্চয়ের দিকে ঠেলে দেবে৷ পিপিএফ বা অন্যান্য স্বল্প সঞ্চয়ের সুদ কম হওয়ার অর্থ চিটফান্ডকে রমরমার সুযোগ করে দেওয়া৷ সরকারি লগ্নিপত্রে যেমন রিটার্ন বেড়েছে, সেখানে ব্যাঙ্কও আমানতে সুদের হার বাড়িয়েছে৷ কিন্ত্ত সেই

ভারতের মতো দেশে সামাজিক সুরক্ষার নিরিখে সাধারণ মানুষের বলভরসা পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড বা পিপিএফের সঞ্চয়৷ সেখানে কম সুদ থাকলে তা মানুষকে অসুরক্ষিত ও ঝুঁকিপূর্ণ সঞ্চয়ের দিকে ঠেলে দেবে৷ পিপিএফ বা অন্যান্য স্বল্প সঞ্চয়ের সুদ কম হওয়ার অর্থ চিটফান্ডকে রমরমার সুযোগ করে দেওয়া৷ সরকারি লগ্নিপত্রে যেমন রিটার্ন বেড়েছে, সেখানে ব্যাঙ্কও আমানতে সুদের হার বাড়িয়েছে৷ কিন্ত্ত সেই অনুপাতে সুদের হার বাড়েনি স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে৷ সাধারণ মানুষের আর্থিক নিরাপত্তা বাড়াতেই সেই সুদ বাড়ানো জরুরি৷ এই সুদ নির্ধারিত হয় কীসের ভিত্তিতে? সংশ্লিষ্ট মহলের ব্যাখ্যা, আর্থ-সামাজিক নানা দিকগুলিকে যেমন এক্ষেত্রে হিসেবে আনা হয়, তেমনই সরকারি লগ্নিপত্রের সুদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই প্রকল্পগুলির সুদ নির্ধারিত হয়৷ সেই সুদের হারের প্রসঙ্গে চলতি মাসে প্রকাশিত মাসিক বুলেটিনে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, চলতি মাসের প্রথম তিন মাসে স্বল্প সঞ্চয়ে সুদের হারে বদল আনেনি কেন্দ্রীয় সরকার৷ আর সুদের যে হার চালু রয়েছে, তার সঙ্গে সরকারি লগ্নিপত্রের সুদের হারের সামঞ্জস্য রয়েছে৷ কিন্ত্ত বাধ সেধেছে রেকারিং ডিপোজিট এবং পিপিএফ৷ এই স্কিম দুটিতে সুদের হার অনেকটাই কম৷ মোট কথা, স্বল্প সঞ্চয়ের অন্যতম জনপ্রিয় স্কিম দুটির সুদের হারে মোদি সরকার যে দেশবাসীর সঙ্গে বঞ্চনা করে চলেছে, তা আকারে-ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছে খোদ আরবিআই৷

আবার গ্রাহকদের ঠকানো নিয়ে ব্যাঙ্কগুলিকে সতর্কবার্তা জারি করেছে ক্ষুব্ধ আরবিআই৷ ঋণের উপর সুদ নেওয়ার ক্ষেত্রে নানারকম কারচুপি করছে ব্যাঙ্কগুলি৷ তার খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ গ্রাহককে৷ এই অভিযোগও সরাসরি করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া বা আরবিআই৷ এই বিষয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত বা বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির পাশাপাশি সাবধান করা হয়েছে স্মল ফিনান্স ব্যাঙ্ক, সমবায় ব্যাঙ্ক, গ্রামীণ ব্যাঙ্ক এবং ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে (এনবিএফসি)৷

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, সুদ সংক্রান্ত বেশ কিছু অনিয়ম তাদের নজরে এসেছে৷ যেমন ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি সুদ নিচ্ছে সেইদিন থেকে, যেদিন ঋণ অনুমোদন পেয়েছে৷ অথচ সুদের হিসেব হওয়ার কথা ঋণের টাকা হাতে পাওয়ার দিন থেকে৷ এক্ষেত্রে বেশি সুদ মেটাতে হচ্ছে গ্রাহককে৷ অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ঋণগ্রহীতার নামে যেদিন চেক কাটা হচ্ছে, সেদিন থেকেই সুদ নির্ধারিত হচ্ছে৷ কিন্ত্ত চেকটি গ্রাহককে দেওয়া হচ্ছে তার বেশ কিছুদিন পর৷

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দাবি, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ঋণ দেওয়া হচ্ছে মাসের মাঝামাঝি সময়ে৷ কিন্ত্ত গোটা মাসের সুদ জমা নেওয়া হচ্ছে৷ ঋণ পরিশোধ করার ক্ষেত্রেও একইভাবে গ্রাহকের থেকে সুদ বাবদ বেশি টাকা নেওয়া হচ্ছে৷ কিন্ত্ত তা হওয়ার কথা নয়৷ মাসের যে ক’দিন ঋণ নেওয়া হয়েছে, শুধুমাত্র সেই দিনগুলির জন্যই সুদ প্রযোজ্য হওয়ার কথা৷ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানাচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, গ্রাহকের কাছ থেকে আগেভাগে এক বা দু’মাসের কিস্তির টাকা নিয়ে নিচ্ছে ব্যাঙ্ক৷ যে টাকা নেওয়া হচ্ছে তার উপর সুদ প্রযোজ্য হওয়ার কথা নয়৷ কিন্ত্ত ঋণের সম্পূর্ণ অঙ্কের উপরই সুদ নিচ্ছে ব্যাঙ্কগুলি৷

আরবিআইয়ের দাবি, এর বাইরেও নানা অছিলায় বাড়তি সুদ আদায় করছে ব্যাঙ্ক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান৷ যখন সেগুলি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নজরে এসেছে, তখনই সুদ বাবদ নেওয়া সেই বাড়তি টাকা গ্রাহককে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ তবে সুদ সংক্রান্ত এই কারচুপির যাতে স্থায়ী সমাধান হয়, এবার তার নির্দেশ দিল আরবিআই৷ তারা ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে, ঋণের ওপর সুদের হার নির্ণয় করার পদ্ধতিগুলিকে খতিয়ে দেখতে হবে৷ যদি প্রয়োজন হয়, তার জন্য গোটা সিস্টেম বা পরিকাঠামোর বদল করতে হবে৷ চেকের মাধ্যমে ঋণ দেওয়ার প্রবণতা যতটা সম্ভব কমিয়ে আনতে হবে এবং ঋণের টাকা অনলাইনে গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে৷